• শিরোনাম

    কচু শাক চুরি

    অনলাইন ডেস্ক বৃহস্পতিবার, ১৫ জুলাই ২০২১

    কচু শাক চুরি

    apps
    নূরুদ্দীন দরজী:
    সিঁধেল কাটা চুরি নয়। ঠেঙানী খাওয়া ও নয়। আনন্দের বকুনি খাওয়ার মত চুরি। শৈশবকালে মা চাচির বৌয়ম থেকে আচার চুরি করে খেয়ে খেয়ে কত না আনন্দের বকুনি খাওয়া হয়েছে অনেকের‌ই। সে আনন্দ বকুনি কত যে মানুষের স্মৃতির মণিকোঠায় উজ্জ্বল হয়ে এখনো দীপ্তমান। এ চুরির অর্থ ছলে বলে কৌশলে এবং মালিকের অজ্ঞাতসারে কোন কিছু দ্রব্য লুকিয়ে খাওয়া বা লুকিয়ে রেখে আনন্দ পাওয়া। এমন সব কান্ড চৌর্যবৃত্তির মত নয়।
    সেদিন দুপুরে মধ্যাহ্নভোজে বসেছি। বাড়িতে তেমন লোকজন ছিলনা। ডাইনিং টেবিলে একাই ছিলাম। মানুষ কম হ‌ওয়ায় তরকারির আইটেম বেশি নয়। ভাজি, মাংস আর কচুর শাক। টেবিলে খাবার রেখে এ ডিপার্টমেন্টের লোকজন তাদের স্ব স্ব কাজে মহাব্যস্ত। বললো,টেবিলে সব দেওয়া আছে।  বিলম্ব  না করে খাওয়া শুরু করি। প্রথমেই শাকের বাটি কাছে টানি। সকালে স্হানীয় বাজার থেকে অনেক শাক সমৃদ্ধ কচু কিনে এনেছিলাম। কচুর আটি নিয়ে বাড়িতে এসেই বলতে গেলে যুদ্ধের সম্মুখীন হ‌ই। বাড়িওলীর উষ্মা, বিরক্তি প্রকাশ দেখে দেখে নানা কথা শুনতে হয়। বাড়িতে কচু আনলেই এমনটি শুনতে হয়। কচু কাটা, কচু ধোঁয়া এবং অনেক লাকড়ি খরচ করে রান্না করা তাদের জন্য নাকি অনেক কষ্টকর। তাছাড়া কচু ধরলে হাত জ্বলে,চোখ কচলায় ও গ্যাস উঠার মত বিরাট বিরাট সমস্যা। কিন্তু আশ্চর্যকর বিষয় যে,আমাদের বাড়িতে কচুর শাক রান্না হলে শেষের দিকে যারা খায় তারা তেমন একটা পায়না। দ্বিতীয় বার খাওয়ার শত চেষ্টা করলেও শাক আর পাওয়া যায়না। রান্না করা শাক দ্রুত শেষ হয়ে যায়। অপছন্দনীয় কচু বাড়িতে আনলে মজা পেয়ে ও সুস্বাদু হয় বলে সবাই খেতেই থাকে।।
    একা একা কচুর শাক দিয়ে মজা করে ভাত খাচ্ছিলাম। অনেক খেয়ে ফেলি। তবু লোভ  কমছেনা। পরবর্তিতে আবার  খাওয়ার জন্য মাথায় একটি দুষ্টু বুদ্ধি এলো। তাড়াতাড়ি খাওয়া শেষ করে বাটিতে রাখা অবশিষ্ট শাকের অর্ধেক শাক অন্য একটি বাটিতে নিয়ে পাশের রোমে ফ্রিজের নরমালে লুকাই। বাহির থেকে তাড়া আসে খাওয়া হল কিনা? কারণ টেবিলে রাখা খাবারগুলো তারা মিশ্রেবে হেফাজতে রাখবে। একটু সময় চেয়ে লুকানোর কাজ সুচারুরূপেই সম্পন্ন করি। এর‌ই মধ্যে বাড়িওয়ালী এসে এগুলো সামলাতে সামলাতে বলে- শাক মনে হয় বেশি খেয়ে ফেলেছো। আর‌ও বলে, মনে নেই কদিন আগে কচুর শাক বেশি খেয়ে ডাক্তারের কাছে গিয়ছিলে? নিরুত্তর থাকি এবং মনের অজান্তেই একটু একটু হাসি। মনে পড়ে বছরখানেক আগ একদিন বেশি পরিমানে এ শাক খেয়ে অস্বস্তিকর লাগলে দৌঁড়ে ডাক্তারের কাছ গিয়েছিলাম। তবে আজ খাবার পর তেমন মনে হচ্ছিলো না। অদ্য পরে যারা খেয়েছে সবাই সর্তকিত হয় শাক খেয়েছে -কারণ বাটিতে শাক কম ছিল। বিধি বাম! দিন শেষে রাতের বেলা ব‌উ মমতাজ ফ্রিজে কি জানি আনতে গেলে ধরা পড়ে যাই। ফ্রিজের শাক দেখে চমকে যায়। এ শাক এখানে কে রাখলো? বলে উঠে জন্যই তো দুপুরে বাটিতে শাক কম ছিল। বাড়িওলীর তুনাধোনা জেরার মুখে পড়ে স্বীকার করে নিলাম এহেন কর্মটি আমিই করেছি। এ চৌর্যবৃত্ত নিয়ে সবাই একটু একটু হাসতে লাগলো। বিনয়ের সুরে বললাম,কচু এনে তোমাদের কত চোখ রাঙানি দেখতে হয়- কিন্ত খাবার সময় একবার বৈ দুবার পাইনা। পরে আর ও একটু খাবো বলে একাজ করেছি। দুর/চার মিনিট তর্কবিতর্কের মাধ্যমে ঝগড়ার মধুর সমাপ্তি ঘটে।
    কচু ও কচু ডগা থেকে শাক বাংলাদেশের মানুষের কাছে কমবেশ পরিচিত। ইলিশ মাছের মাথা দিয়ে এ শাক রান্না করলে খেয়ে খেয়ে ও থেকে যায় অতৃপ্তির সাধ। চিংড়ি মাছের সাথে কচুর লতির স্বাদ দারুন হয় যা আমাদের সবারই পছন্দ। সব চেয়ে বড় কথা এ শাকে রয়েছে প্রচুর পুষ্টিগুণ। কিন্তু দামে সস্তা ও সহজলভ্য হ‌ওয়ায় অনেকেই কচু পছন্দ করেনা, উপকারিতা বুঝে না। বিশেষজ্ঞ গণের মতে কচুর শাকে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমানে প্রোটিন, ফ্যাট,ডিটারেরী ফাইবার,শর্করা,কার্বোহাইড্রেট ও খনিজ পদার্থ। আমাদের দেশে সবুজ ও কালো দুধরণের কচু পাওয়া যায়। কচু শাক খেলে শরীরে অক্সিজেনের সরবরাহ বৃদ্ধি পায়। প্রচুর পরিমানে ভিটামিন এ, বি এবং সি থাকায় মানুষের রাতকানা রোগ প্রতিরোধ করে দৃষ্টি শক্তি বাড়ায়। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে,আয়রণ ও প্রচুর ক্যালসিয়াম থাকায় হাড়ের ‍ক্ষয়রোধ করে হাড়কে শক্ত ও মজবুত করে। আয়োডিনের পরিমাণ বেশি থাকায় চুলের ভঙুরতা দূর করে।যাদের গ্যাস্টিক বা অ্যাসিডিটির মাত্রা বেশি কচু শাক তাদের জন্য খুবই উপকার করে। ডায়াবেটিস এর জন্য অনেক উপকারি। হিমোগ্লোবিন বৃদ্ধি করে। উচ্চ রক্তচাপ, ব্লাডপ্রেসার, হৃদরোগ,স্ট্রোক,ক্যানসার কমাতে সাহায্য করে।তবে কোন কোন শাকে অক্সলেট বেশি থাকায় গলা চুলকায় এবং সাময়িক এলার্জি বাড়ায়। আসলেই কচু শাকের নানাবিধ গুনের কথা সংক্ষেপে বলা দুষ্কর।
    পৃথিবীর অনেক দেশেই কচু উৎপাদন হয়। নাইজেরিয়া বিশ্বের বৃহত্তম কচু উৎপাদনকারী দেশ। ইতিবৃত্ত পর্যালোচনায় দেখা যায় দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া ও ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জে দুই হাজার বছর আগে থেকে কচুর চাষ হয়ে আসছে। বাংলাদেশের সর্বত্রই কমবেশি কচু পাওয়া যায়। আমাদের জয়পুরহাট জেলা  ও জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলা লতিরাজ কচুর জন্য খুবই প্রখ্যাত। এখানকার  লতিরাজ দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে ও রপ্তানি করা হয়।  কুমিল্লার লালমাই পাহাড় এলাকার কচুর ও অনেক কদর রয়েছে।  নরসিংদী জেলার পলাশ উপজেলার চলনা গ্ৰাম এক সময় কচুর জন্য প্রসিদ্ধ ছিল। বাংলার পুরাতন  ব্রহ্মপুত্র নদের ভরাট হয়ে যাওয়া ঢালে ঢালে প্রচুর কচু হয়ে থাকে।
    কচু শাকে এবং কচুতে পর্যাপ্ত পরিমাণে উপকারি উপাদান রয়েছে এতে কোন সন্দেহ নেই। মানব দেহের জন্য এ কচু খুবই উপকারি। অতি সহজে পাওয়া যায় বলে অবহেলা না করে আমাদের সকলেই এর কদর করা একান্ত দরকার। এর যথাযথ মূল্যায়নে ও খাওয়ার অভ্যাসে পরিনত করে   আমরা থাকতে পারি বিবিধ রোগ ব্যাধি থেকে মুক্ত।  গঠন করতে পারি সুস্থ শরীর। অবশ্যই সবার বাড়ানো উচিত কচুর শাক খাওয়া এর চাষাবাদ।
    লেখক: কলামিস্ট, কবি, প্রবন্ধ, গল্পকার এবং সাবেক উপজেলা শিক্ষা অফিসার (টিইও) 

    বাংলাদেশ সময়: ১০:৫১ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৫ জুলাই ২০২১

    dainikbanglarnabokantha.com |

    এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

    শেখ হাসিনার শুভ জন্মদিন

    ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২০

    শূন্যতা

    ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২০

    আর্কাইভ