• শিরোনাম

    উপকূলীয় অঞ্চলে লবণাক্ততায় বছরে ক্ষতি ৩ হাজার ২৩৫ কোটি টাকা সাতক্ষীরায় বাংলাদেশ কৃষি সাংবাদিক ফোরামের মতবিনিময় সভায় গবেষণা তথ্য উপস্থাপন

    আব্দুর রহমান, সাতক্ষীরা জেলা প্রতিনিধি: রবিবার, ১৬ জানুয়ারি ২০২২

    উপকূলীয় অঞ্চলে লবণাক্ততায় বছরে ক্ষতি ৩ হাজার ২৩৫ কোটি টাকা সাতক্ষীরায় বাংলাদেশ কৃষি সাংবাদিক ফোরামের মতবিনিময় সভায় গবেষণা তথ্য উপস্থাপন

    উপকূলীয় অঞ্চলে লবণাক্ততায় বছরে ক্ষতি ৩ হাজার ২৩৫ কোটি টাকা সাতক্ষীরায় বাংলাদেশ কৃষি সাংবাদিক ফোরামের মতবিনিময় সভায় গবেষণা তথ্য উপস্থাপন

    apps

    উপকূলীয় কৃষি জমিতে লবনাক্ততা বৃদ্ধি ও জলবায়ু পরিবর্তন প্রভাব শীর্ষক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার সন্ধ্যায় সাতক্ষীরা কেন্দ্রীয় পাবলিক লাইব্রেরীর হল রুমে বাংলাদেশ কৃষি সাংবাদিক ফোরাম ও সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসন এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করে। মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ূন কবির। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ কৃষি সাংবাদিক ফোরামের সাধারন সম্পাদক সাহানোয়ার সাঈদ শাহীন। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন প্রেসক্লাবের সভাপতি মমতাজ আহমেদ বাপী, সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলী সুজন, বাংলাদেশ প্রতিদিনের সিনিয়র রিপোর্টার মানিক মোস্তাফিজুর, একাত্তর টেলিভিশনের সিনিয়র রিপোর্টার কাবেরী মৈত্র, দৈনিক কালের চিত্র সম্পদক অধ্যাপক
    আবু আহমেদ, এটিএন বাংলা ও সমকালের এম কামরুজ্জামান, বাংলাদেশ টেলিভিশনের ও দৈনিক সাতঘরিয়া পত্রিকার বার্তা সম্পাদক মো. মোজাফ্ধসঢ়;ফর রহমান, মাছরাঙা টেলিভিশনের মোস্তাফিজুর রহমান উজ্জল, গাজী টেলিভিশনের মো. কামরুল হাসান, বাংলাদেশ প্রতিদিনের মনিরুল ইসলাম মনি, দৈনিক ইত্তেফাকের মনিরুল ইসলাম মিনি, দৈনিক পত্রদূত পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক লায়লা পারভীন সেঁজুতি, বনিক বার্তার গোলাম সরোয়ার, দক্ষিনের মশাল পত্রিকার সম্পাদক আশেক ইলাহী, ৭১ টিভির বরুন ব্যানর্জী, ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশনের আবুল কাশেম প্রমুখ। অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ূন করিব বলেন, উপকূলীয় অঞ্চলের নদীর পানি ক্রমান্বয়ে লবণাক্ত হয়ে পড়ছে। লবণাক্ততার কারণে পরিস্থিতি গুরুতর খারাপের দিকেই যাচ্ছে। লবণাক্ত পানি প্রবেশ ঠেকাতে না পারা ও দুর্যোগের কারণে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসের কারণে বিপর্যয় আরো বাড়বে। জমি আবাদযোগ্য করে তুলতে না পারলে তার প্রভাব পড়বে জনজীবন ও বাস্তসংস্থানে। লবণাক্ততা সহিষ্ণু জাত উদ্ভাবন ও তা দ্রুত কৃষকের কাছে পৌঁছানো এবং উন্নত প্রযুক্তি সম্প্রসারণ করতে হবে। এছাড়া এ অঞ্চলে বাঁধ নির্মাণ ও পুননির্মাণ করে লবণ পানি প্রবেশ ঠেকাতে হবে। সার্বিকভাবে এ অঞ্চলের উন্নয়নে সমন্বিত পরিকল্পনা বাস্তবায়ন জরুরি। জেলা প্রশাসক হুমায়ূন কবির লবনাক্ত সহিষ্ণু ধান লাগানো অবস্থায় উপকূলে পরিকল্পিত চিংড়ী চাষ করার উপর গুরুত্ব আরোপ করে বলেন, লবনাক্ততা বন্ধ করা এখন অসম্ভব তবে লবণাক্ততা সহনীয় কৃষি উদ্ভাবন করে ফলস ফলাতে হবে ফলে উপকূলীয় জমি আর অনাবাদি থাকবে না। সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির বলেন, জেলার দুটি উপজেলা শ্যামনগর ও আশাশুনি অঞ্চলে আবাদি জমি বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। কার্যকর ও স্থায়ী বেড়িবাঁধ না থাকায় এ অঞ্চলের মানুষ প্রতিনিয়ত প্রাকৃতিক দুর্যোগের কাছে পরাজিত হচ্ছে। লবণাক্ততা বৃদ্ধির জন্য স্বাভাবিক জনজীবন ফিরে পেতে মানুষ সংগ্রাম করছে। তবে সরকার তাদের পাশে সবসময়ই
    আছে বিধায় এ অঞ্চল জনশূন্য হয়নি। দীর্ঘ মেয়াদি উন্নয়ন পরিকল্পনার অংশ হিসেবে হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে বেড়িবাঁধ পুননির্মাণ করা হচ্ছে। এ ধরনের কার্যক্রম আরো কয়েকটি পোল্ডারে করা গেলে স্থায়ীভাবে লবণাক্ত পানি প্রবেশ ঠেকানো সম্ভব হবে। তাহলে জমিতে আবাদ করা সম্ভব হবে। পাশাপাশি কৃষি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে লবণাক্ততাসহিষ্ণু শস্য আবাদের উদ্যোগ
    নেয়া হচ্ছে। আমরা চাই এখানকার মানুষ যেন নিজের জমিতে আবাদ করতে সক্ষম হয় এবং ভিটেমাটি ছেড়ে অন্যত্র চলে যেতে না হয়। প্রবন্ধ উপস্থাপনে উল্লেখ করা হয়েছে, লবণাক্ততার মাত্রা বাড়ছে উপকূলীয় অঞ্চলের জমিগুলোয়। ছড়াচ্ছেও অত্যন্ত দ্রুতগতিতে। লবণাক্ততার তীব্রতায় আবাদি জমি হয়ে পড়ছে অনাবাদি। ফলন কমছে, শস্যের গভীর থেকে গভীরতর হচ্ছে উপকূলীয় অঞ্চলের অর্থনৈতিক ক্ষত। মৃত্তিকা সম্পদ গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (এসআরডিআই) এক সমীক্ষায় উঠে এসেছে, শুধু লবণাক্ততার কারণেই প্রতি বছর উপকূলীয় ১৯ জেলায় খাদ্যশস্য উৎপাদন-বঞ্চিত থেকে যাচ্ছে ৩০ লাখ টনের বেশি।
    উপকূলীয় অঞ্চলের কৃষিতে লবণাক্ততার প্রভাব নিরূপণে সম্প্রতি গবেষণাটি চালায় এসআরডিআই। সংস্থার তথ্য অনুযায়ী দেশের দক্ষিণাঞ্চলের খাদ্য নিরাপত্তাসহ সার্বিক আর্থসামাজিক পরিস্থিতিতেই বড় মাত্রায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে লবণাক্ততা। এ লবণাক্ততা বাড়তে থাকায় উপকূলীয় অঞ্চলের মাটিতে অণুজীবের সক্রিয়তা কমে যাচ্ছে। একই সঙ্গে মাটিতে জৈব পদার্থ, নাইট্রোজেন ও ফসফরাসের সহজলভ্যতাও কমে যাচ্ছে। এর বিপরীতে বাড়ছে কপার ও জিংকের মাত্রা। বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টিপাতের কারণে লবণাক্ততা কিছুটা হৃাস পায়। ওই সময় কিছু লবণাক্ত এলাকায় ধানের, বিশেষ করে আমন ফসলের আবাদ করা সম্ভব হয়। তবে মৌসুমের শেষ দিকে বৃষ্টি কমায় ফসলে দানার সংখ্যাও হ্রাস পায়। এতে করে ফলন ঠিকমতো পান না কৃষক। লবণাক্ততার প্রভাবে মাটির উর্বরতা যেমন কমছে, তেমনি কমছে গাছের উৎপাদনক্ষমতাও। এসআরডিআইয়ের হিসাব অনুযায়ী, উপকূলীয় অঞ্চলে মাঝারি থেকে খুবই তীব্র মাত্রায় ক্ষতিগ্রস্ত জমির পরিমাণ ৮ লাখ ৭০ হাজার হেক্টর (স্বল্পমাত্রায় ক্ষতিগ্রস্ত জমিকে বাদ দিয়ে)। এসব জমিতে প্রতি বছর লবণাক্ততার কারণে শস্য উৎপাদন কম হচ্ছে হেক্টর প্রতি গড়ে ৩ দশমিক ৪৮ টন করে। সব মিলিয়ে উপকূলীয় অঞ্চলের জমিগুলো শুধু লবণাক্ততার কারণে ফলন হারাচ্ছে ৩০ লাখ ২৭ হাজার টনেরও বেশি। প্রতি কেজি শস্যের গড় মূল্য ৭৭ সেন্ট হিসেবে বছরে এ ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ৩৬ কোটি ৭১ লাখ ২০ হাজার ডলারে, যা বাংলাদেশী মুদ্রায় প্রায় ৩ হাজার ১২০ কোটি টাকা (১ ডলার সমান ৮৫ টাকা)। অন্যদিকে ক্ষতিগ্রস্ত জমির পুষ্টি প্রতিস্থাপনে ব্যয় হচ্ছে ১ কোটি ৩৫ লাখ ৬০ হাজার ডলার করে, যা বাংলাদেশী মুদ্রায় ১১৫ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে

    দেশে প্রতি বছর শুধু উপকূলীয় জমিতে লবণাক্ততার কারণে আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে ৩ হাজার ২৩৫ কোটি টাকা করে। প্রবন্ধে উল্লেখ করা হয়েছে, স্বাধীনতার পর ১৯৭৩ সালেও উপকূলীয় অঞ্চলে লবণাক্ত জমির পরিমাণ ছিল ৮ লাখ ৩৩ হাজার হেক্টর। বর্তমানে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০ লাখ ৬০ হাজার হেক্টরে। সে হিসেবে গত চার যুগে উপকূলীয় অঞ্চলে লবণাক্ত জমির পরিমাণ বেড়েছে ২৭ শতাংশের বেশি। এর মধ্যে হালকা মাত্রায় লবণাক্ত জমির পরিমাণ ১ লাখ ৯০ হাজার হেক্টর, মধ্যম মাত্রায় ২ লাখ ৫০ হাজার, তীব্র মাত্রায় ৪ লাখ ২০ হাজার ও খুব তীব্র মাত্রায় লবণাক্ত জমির পরিমাণ ২ লাখ হেক্টর। উপকূলীয় অঞ্চলে এসব
    এলাকায় মোট আবাদি জমির পরিমাণ ২৮ লাখ ৩০ হাজার হেক্টর। এর মধ্যে চাষযোগ্য ২১ লাখ ৬২ হাজার হেক্টর। সে হিসেবে উপকূলীয় অঞ্চলের চাষযোগ্য জমির প্রায় অর্ধেকই লবণাক্ত। লবণ পানির ভয়াবহতার কারণে প্রতি বছর শুষ্ক মৌসুমে উপকূলীয় এলাকায় পাঁচ লাখ হেক্টরের বেশি জমি অনাবাদি থেকে যায়। প্রবন্ধে বিশেষজ্ঞদের দেয়া তথ্য উল্লেখ করে বলা হয়েছেন, বৈশ্বিক উষ্ণতা ও সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ার কারণেই উপকূলীয় অঞ্চলের মাটিতে সমুদ্রের লবণাক্ত পানির অনুপ্রবেশ
    ঘটছে। একই সঙ্গে ভূগর্ভস্থ পানিতেও লবণাক্ততা বাড়ছে। এছাড়া জলোচ্ছ্বাসের সময়েও সমুদ্রের নোনাপানি উঁচু ভূমিতে উঠে আসে। পরে তা নিষ্কাশনের ব্যবস্থা নেয়া হয় না। নদীতে সুপেয় পানির অভাব থাকায় নোনাপানি অপসারণ প্রক্রিয়াটিও বেশ কঠিন হয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছেন। এছাড়া পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাতের অভাব, উপকূলীয় নদ-নদী ভরাট হয়ে যাওয়ায় জোয়ারের
    সময় বাঁধ উপচে পড়ছে। সমুদ্রের লবণাক্ত পানি চলে আসছে কৃষি জমিতে। ব্যাহত হচ্ছে কৃষি জমির স্বাভাবিক উৎপাদন ক্ষমতা। অনুষ্ঠানে শেষে গণমাধ্যম কর্মীদের সাথে ফটোসেশনে অংশ নেন অতিথিবৃন্দ।

    বাংলাদেশ সময়: ৪:৪০ অপরাহ্ণ | রবিবার, ১৬ জানুয়ারি ২০২২

    dainikbanglarnabokantha.com |

    এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

    আর্কাইভ