মঙ্গলবার ১০ ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৫ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

>>

৭১’র আজকের এ দিনে কুষ্টিয়ায় সংঘটিত হয়েছিল সর্ব বৃহৎ গেরিলা যুদ্ধ

বাবলু রঞ্জন বিশ্বাস, কুষ্টিয়া:   |   সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪   |   প্রিন্ট

৭১’র আজকের এ দিনে কুষ্টিয়ায় সংঘটিত হয়েছিল সর্ব বৃহৎ গেরিলা যুদ্ধ

’৭১ সালের ২৬ নভেম্বর কুষ্টিয়ায় সর্ব বৃহৎ গেরিলা যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল জেলার দৌলতপুর উপজেলার পিয়ারপুর ইউনিয়নের শেরপুর মাঠে।

এ যুদ্ধে নেতৃত্ব দেন তৎকালীন কুষ্টিয়া ই-৯ এর গ্রুপ কমান্ডার বর্তমানে প্রয়াত আফতাব উদ্দিন খান ও ডেপুটি কমান্ডার জলিলুর রহমান। ২৫ নভেম্বর রাতে ই-৯ এর গ্রুপ কমান্ডার আফতাব উদ্দিন খান প্রায় ১শ’ জন সুসজ্জিত মুক্তিবাহিনীর একটি দল নিয়ে শেরপুরে সেনপাড়ায় অবস্থান করেন। বিষয়টি পাকবাহিনীরা আঁচ করতে পেরে মধ্য রাতে শেরপুরে আগুন ধরিয়ে বেপড়োয়াভাবে গুলি বর্ষণ করে। মুক্তিবাহিনী পাকবাহিনীর অবস্থান জানতে পেরে মিরপুর ও দৌলতপুর থানার মধ্যবর্তী স্থান সাগরখালী নদীর তীরে তাদের অবস্থান তড়িৎ সুদৃঢ় করেন। রাত ৩টায় তারা পাকবাহিনীর মোকাবেলার জন্য ক্রমান্বয়ে অগ্রসর হতে থাকে। ২৬ নভেম্বর ভোর ৫টায় উভয় পক্ষ পরস্পর মুখোমুখি হয়ে ৬ ঘন্টা ব্যাপী তুমুল যুদ্ধের পর পাকবাহিনী পিছু হটতে বাধ্য হয়। যুদ্ধে ৬০ জন পাক সৈন্য নিহত এবং শেরপুর গ্রামের মৃত হাজী মেহের আলীর ছেলে হাবিবুর রহমান নামে এক মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন।

এ ছাড়াও একই গ্রামের মৃত পঁচা বিশ্বাসের ছেলে হিরা ও মৃত আবুল হোসেন বিশ্বাসের ছেলে আজিজুল নামের দু’মুক্তিযোদ্ধা গুরুতর এবং মঈন উদ্দিন, আব্দুল জব্বার, আব্দুর রশিদ ও হায়দার আলীসহ ২০ জন আহত হন। কুষ্টিয়া জেলায় সংঘটিত সর্ব বৃহৎ এ গেরিলা যুদ্ধে পাক হানাদার বাহিনীর পরাজয় এবং ক্ষয়-ক্ষতির কারণে দৌলতপুর ও মিরপুর থানার একটা বিরাট এলাকা মুক্তি বাহিনীর অবস্থান আরো সুদৃঢ় হয়। এর ফলে মুজিব বাহিনীর কমান্ডার নাজুমুল করিম সুফি, গ্রুপ কমান্ডার হাবিবুর রহমান ও ইদ্রিস আলীর সহযোগিতায় পাহাড়াপুর পুরাতন সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মুক্তিবাহিনীর একটি শক্তিশালী ক্যাম্প স্থাপন করা হয়। কুষ্টিয়া সাব সেক্টর কমান্ডার তৎকালীন লে. খন্দকার নুরুন্নবী এই ক্যাম্প সরেজমিনে পরিদর্শন করে অনুমোদন প্রদান করে। শেরপুর যুদ্ধের পরে এলাকায় প্রচার ছিল সংশ্লিষ্ট এলাকায় ১ হাজার মুক্তিযোদ্ধা অবস্থান করছে।

৭ ডিসেম্বর ভোরে আফতাব উদ্দিন খানের নেতৃত্বে মুক্তিবাহিনী আমলাকে মুক্ত করেন এবং ওই দিন সন্ধ্যার পর আফতাব উদ্দিন খানের নেতৃতে মুক্তিযোদ্ধারা সুলতানপুর গ্রামের জিকে ক্যানালের পশ্চিম পাশে মৃত আবুল হোসেন জোয়ার্দ্দারের বাড়ী সংলগ্ন স্থানে অবস্থান গ্রহণ করেন। তৎকালীন মিরপুর থানা কাউন্সিল বর্তমান উপজেলা পরিষদ ভবন এলাকায় ভারী অস্ত্রে সজ্জিত ২শ’ ৫০ জন পাকবাহিনীর একটি শক্তিশালী ঘাটি ছিলো। পাকবাহিনীর এ ঘাটি হতে মুক্তিবাহিনীর অবস্থান ছিল খুব সন্নিকটে। পাকবাহিনী মুক্তিবাহিনীর অবস্থানের বিষয়টি জানতে পেরে রাতের আঁধারে পালিয়ে যেতে থাকে। পালিয়ে যাওয়ার সময় মিরপুর থানার (পুলিশ ফাঁড়ি) সমস্ত কাগজ পত্র পুড়িয়ে দেয়।

যার ফলে ৮ ডিসেম্বর ভোরে ই-৯ এর গ্রুপ কমান্ডার আফতাব উদ্দিন খান ১শ’ ৭০ জন মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে মিরপুর থানায় স্বাধীন সার্বভৌমত্ব বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা গান স্যালুটের মাধ্যমে উত্তোলন করেন। এর পর ৬৫ জন পাকহানাদার বাহিনীর দোসর ও রাজাকার পাহাড়পুর মুক্তিবাহিনীর ক্যাম্পে আত্মসমর্পন করেন। এ ভাবেই কুষ্টিয়া জেলার বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বিজয় সুচিত হয়।

Facebook Comments Box

Posted ৩:৫১ অপরাহ্ণ | সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪

dainikbanglarnabokantha.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

সম্পাদক

রুমাজ্জল হোসেন রুবেল

বাণিজ্যিক কার্যালয় :

১৪, পুরানা পল্টন, দারুস সালাম আর্কেড, ১১ম তলা, রুম নং-১১-এ, ঢাকা-১০০০।

ফোন: ০১৭১২৮৪৫১৭৬, ০১৬১২-৮৪৫১৮৬, ০২ ৪১০৫০৫৯৮

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

design and development by : webnewsdesign.com

nilüfer escort coin master free spins