রবিবার ১৩ অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৮ আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

>>

হারানো সুর

  |   শুক্রবার, ২৯ অক্টোবর ২০২১   |   প্রিন্ট

হারানো সুর

নূরুদ্দীন দরজী:

হারানো সুর-কথাটি অনেকের নিকট‌ই অতি পরিচিত এবং পুরাতন। “হারানো সুর, নামের একটি সাড়া জাগানো বাংলা সিনেমা আছে। সিনেমাটি মুক্তি পেয়েছির অনেক আগে, ১৯৫৬ সালে। মহানায়ক উত্তম কুমার ও মহানায়িকা সুচিত্রা সেন অভিনিত ছবিটির বয়স এখন ৭০ বছরের কাছাকাছি হলে ও এর রেশ যেন কখনো শেষ হয়না। আসলে যে সুর মাধুর্যমন্ডিত হয় তার আবেদন শেষ হতে চায়না। সে সুর মনের মাঝে বিরাজ করে মনের অজান্তেই। যদি ও বলা হয় হারানো সুর, কিন্তু সুর হারায় না। কোন
দিন কোন সুর কোথাও হারিয়ে গেছে এমন প্রমাণ বোধ হয় পৃথিবীতে তেমন নেই। সুরের অন্তর্নিহিত মায়াজাল প্রিয় মানুষসহ অনেক কিছু ফিরিয়ে আনে এমন দৃষ্টান্ত শুধু নাটক সিনেমাই দেখি না বাস্তবে ও পাওয়া যায়। সিনেমায় মনুষ্য জীবনের প্রতিফলন ঘটে।অনেক অভিনয়ে সুরে সুরে হারিয়ে যাওয়া আপন মানুষকে খুঁজে পাওয়ার ঘটনা দেখেছি বহুবার,বহুদিন ও বহু সিনেমায়।
সুর কী? এর উত্তরে আমি বিজ্ঞ জনদের কঠিন সংজ্ঞায় যাবনা। সুর হয় শব্দ ও কথার অন্য একটি রুপে। যদি কোন কথা শুনতে অনেক বিরক্ত লাগে-সে কথায় সুর দিলে মানুষ দারুনভাবে আকৃষ্ট হয়ে যায়। মন্ধমুগ্বের মত শুনতেই থাকে। অনেকে মোহাবিষ্ট হয়ে পড়েন। উদাহরণ যদি দেই অতুল প্রসাদ সেনের” মোদের গরব মোদের আশা, আ-মরি বাংলা ভাষা, কার কাছে কেমন লাগবে জানি না। কিন্তু এ কথাগুলোয় সুর দিলে বাঙালি মন আবিষ্ট হয়ে পড়ে,উজার হয়ে যায়। মনে হয় পৃথিবীতে বাংলা ভাষার চেয়ে মূল্যবান অবশ্য‌ই আর কিছুই নেই। এমনিভাবে কাজী নজরুলের কবিতাংশ, কারার ঐ লৌহ কপাট,ভেঙে ফেল কর-রে লোপাট,আবৃত্তি করলে শরীর মন গরম হয়ে উঠে। আবার যখন এতে সুর দেওয়া হয় আমাদের রক্ত টগবগ করে নাচতে থাকে। গানের কলি যখন কথায় প্রকাশ করি,যেমন-“বেদের মেয়ে জোছনা আমায় কথা দিয়েছে,আসি আসি বলে জোছনা ফাঁকি দিয়েছে, তখন অনেকে রাগ করতে পারেন। বলতে পারেন, এটি কি একটি কথা হলো? বেদের মেয়ে আসে কি আসেনা তা দিয়ে আমি কি করবো? বেদের মেয়েকে নিয়ে তোমার মাথা ব্যাথা কেন? বুঝি আর কোন কাজ পাওনা! কিন্তু যদি এ কথাগুলোতে সুর দেওয়া হয়, আবেশে মন ভরে যায়, দারুন রোমাঞ্চ সৃষ্টি করে। তখন বেদের মেয়েকে মনে হয় অদেখা রাজকন্যা, কতনা সুন্দর। সুরে সুরে যদি আর ও গীত হয়- বল,বল বল জোছনা আসতে কতক্ষণ? তোমায় না দেখলে আমার ঘরে রয় না মন, শুধুই জোছনায় মন প্রাণ নিবিষ্ট থাকে। আর ও কলির কথা বললে,”তারে বলে দিও-সে যেন আসে না আমার কাছে, শুনলেও হয়তো বিরক্ত‌ই লাগবে। তবে সুর দিলে এ কলি মধুর চেয়ে মধুর হয়ে উঠে। যারা বুঝেন,শুনেন ও সমঝদার তাদের হৃদয়ের গভীরে স্পর্শ করে। বাংলা ভাষায় এমন অনেক গানের সুর আছে যেগুলো শুনে শুনে শেষ করা যায়না। ঐ সমস্ত গানগুলো চির সবুজ। প্রজন্ম হতে প্রজন্মে মানুষের হৃদয় মনকে নাড়া দিয়ে আসছে। কিছু কিছু হিন্দি গান ও আছে যেগুলো শুনতে আগ্ৰহের মোটেও কমতি হয়না। বাংলা ও হিন্দি এ গানগুলোকে বলা হয় স্বর্ণযুগের গান। সব কাল ও সময়ের মানুষের মন ঐ গানের সুরের ঝংকারে অনুরণিত করে।
সুতরাং নির্দিধায় বলা যায়, সুর কমবেশি সবাই ভালোবাসে। সুর মনে আবেগ ও অনুভূতি সৃষ্টি করে। বাদ্যযন্ত্র, কিছু কিছু গানের কথা ও অঙ্গ ভঙ্গিতে কারো কারো আপত্তি থাকলে ও সুর পছন্দ করে না এমন মানুষ নেই বললেই চলে। সুরের মায়া সৃষ্টি করে অনেকে পৃথিবীতে অমর হয়ে আছেন। সম্রাট আকবরের রাজসভার নবরত্নের একজন তানসেন নিজের সৃষ্ট সুরের চক্র জালে পড়ে মৃত্যু বরণ করেছিলেন। গ্ৰীক পুরাণের অরফিউজ ছিলেন সুরের দেবতা। কথিত আছে অরফিউজের সুর শুনলে প্রাণিকুল থেমে যেতো,নদীর গতি পথ বদলে যেতো,গাছপালা শিকড় ছেড়ে সামনে অগ্ৰসর হতো,পাথরের কান্না হতো এবং ঝরে পড়া ফুল আবার হেসে হেসে উঠে সৌরভ ছড়িয়ে প্রকৃতিকে অভিবাদন জানাতো।
মধ্যযুগে বিখ্যাত মুসলিম সুর ও সঙ্গীতজ্ঞ আবুল হাসান আলী বিন নাফী ওরফে জ্বিরাব খলিফা হারুনুর রশীদের প্রিয়ভাজন ছিলেন। পাকভারত উপমহাদেশেের মুসলিম শিল্পী মোহাম্মদ রফির সুরে মানুষ জীবনের ছায়া খুঁজে পায়। বাংলাদেশের সুরকার আলাউদ্দিন আলী, সত্য সাহা,সমর দাস ও ইমতিয়াজ আহমেদ বুলবুলসহ অনেকেই আমাদের সুরের ভান্ডার পূর্ণ করে আছেন।
সুরের ছন্দ না থাকলে মনুষ্য জীবন পাংশা হয়ে যায়। সুরের তালে তালে যুদ্ধ করতে না পারলে সফলতা অর্জন করা যায় না। পৃথিবীতে সব কিছুত‌েই সুরের প্রতিফলন ঘটে। তাই বলা হয়ে থাকে যে ব্যক্তি সুর ও গান পছন্দ করে না সে মানুষ খুন করতে পারে। লেখক: সাবেক উপজেলা শিক্ষা অফিসার (টিইও)

Facebook Comments Box

Posted ৯:০৩ অপরাহ্ণ | শুক্রবার, ২৯ অক্টোবর ২০২১

dainikbanglarnabokantha.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

রূপা
(1491 বার পঠিত)
ছোটগল্প (দেনা)
(1039 বার পঠিত)
দূর দেশ
(862 বার পঠিত)
কচু শাক চুরি
(827 বার পঠিত)
কৃষ্ণ কলি
(789 বার পঠিত)

সম্পাদক

রুমাজ্জল হোসেন রুবেল

বাণিজ্যিক কার্যালয় :

১৪, পুরানা পল্টন, দারুস সালাম আর্কেড, ১০ম তলা, রুম নং-১১-এ, ঢাকা-১০০০।

ফোন: ০১৭১২৮৪৫১৭৬, ০১৬১২-৮৪৫১৮৬

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

design and development by : webnewsdesign.com

nilüfer escort coin master free spins