রফিক খান, মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি | বুধবার, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২১ | প্রিন্ট
মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার ধূলশুড়া এলাকার বাসিন্দা শেখ মোশারফ হোসেন।
হরিরামপুর পদ্মা নদীতে তার বসত ভিটে ভাঙ্গনের পর প্রায় ২০ বছর আগে পরিবারসহ
ঢাকার সাভারে জায়গা কিনে বসবাস শুরু করেন তিনি। এরপর জিবিকার তাগিদে
পাড়ি জমান মালয়েশিয়ায়। প্রবাসে তিনি ১০ বছর থাকেন । পরে তিনি দেশে ফিরে
সাভারে মুদি দোকানের ব্যবসা করেন। এ ব্যবসায় তেমন লাভ হত না। তারপর তার এক
বন্ধুর কাছে হাঁসের খামারের সাফল্যের গল্প শুনে নিজেই চিন্তা ভাবনা করেন হাঁসের
খামার দিবেন। তিনি হরিরামপুরের ধূলশুড়া ইউনিয়নের আইলকুন্ডি রামেশ্বপুর কাঠ
বাগান নামক স্থানে হাঁসের খামার দেন। এখানে ৭ মাস আগে তিনি ৫ বিঘা
জমি ৫ বছরের জন্য লিজ নিয়েছেন। সেখানে একটি পুকুরও রয়েছে। এই জমির
মধ্যেই তিনি হাঁসের খামার গড়েছেন। তিনি বেকারত্বহীন ভবিষ্যৎ গড়তে চান।
স্বপ্ন দেখছেন স্বাবলম্বী হওয়ার ।সেই সাথে এ খামারে যেন আরও বেকারদের
কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয় সে লক্ষে কাজ করছেন তিনি।
খামারী মোশারফ বলেন, হাঁসের খামারে এ পর্যন্ত ১৯ লাখ টাকা খরচ হয়েছে।
খামারে কাজের জন্য একজন শ্রমিক নেওয়া হয়েছে। তাকে ১৫ হাজার মাসিক বেতন
দিতে হয়। প্রতিদিন ৩ হাজার টাকার খাদ্য দিতে হচ্ছে। হাঁসগুলোকে প্রত্যেহ
ধান,গম,কুড়া,ফিট,খৈল,ছোলার ভুষি,খেসারির ভাঙ্গা ভুষি ও ঝিনুকের চুন
খাওয়ানো হয়। হাঁসগুলো আনার পরে তিন বার টিকা দিতে হয়েছে। ১৫ দিন বয়সে
একবার,৪৫ দিন বয়সে ২য় বার এবং সর্বশেষে ২ মাস পর টিকা দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন ৭ দিন বয়সের ১৭’শ হাঁস খামারে কিনে আনা হয়। ১৫০ টি হাঁস
বিক্রয় করা হয়েছে। বিভিন্ন রোগে ১৫০ টি মারা গেছে। এখন ১৪’শ মত খামারে
হাঁস আছে। প্রত্যেহ আমি খামার থেকে ২৫০ টি ডিম পাচ্ছি। ৪৫/৫০ টাকা
হালি দরে প্রত্যেহ ৩ হাজার টাকা ডিম বিক্রয় করছি এখন।
তিনি বলেন কয়েকদিন আগে হাঁসগুলো কে বড় শামুক খাওয়ানোর কারনে তাদের
হজম হতে সমস্যা হয়েছিল। এজন্য ডাক্তার এনে ঔষধ দেওয়া হয়েছে। এতে আমার
বাড়তি টাকা খরচ হয়েছিল । ৬/৭ টি হাঁসও মারা গেছে। এই সমস্যার আগে
আমি ৬’শ টি ডিম পেতাম। সেই ডিম প্রতিদিন ৬৭০০ টাকায় বিক্রি করতে
পারতাম।
তিনি আরও বলেন সবমিলিয়ে আশা করছি কোন রকম রোগ বালাই না আসলে আমি
খামারে সফল হতে পারবো। সেই সাথে আমার এই খামার দেখে অনেক বেকার যুবক
ভাইয়েরা চাকুরির উপর ভরসা না করে খামারী হতে আগ্রহ প্রকাশ করবেন। আমার
এই খামারের ডিম থেকে কিছুটা হলেও এলাকায় পুষ্টির অভাব পুরণ হচ্ছে ।
এ পর্যন্ত পশু হাসপাতাল থেকে কোন সহায়তা , পরামর্শ পাইনি। তিনি বলেন পশু
হাসপাতাল থেকে যদি সহযোগীতা পাই তাহলে খামারে আমি আরও উপকৃত
হবো।
গত শনিবার বিকেলে গিয়ে দেখা গেছে, মানিকগঞ্জ জেলা শহর থেকে প্রায় ৩০
কিলোমিটার দূরে হরিরামপুর উপজেলায় গ্রামটির অবস্থান। সবুজ ছায়াঘেরা
গ্রামের মাঠগুলোয় বিভিন্ন শস্য আবাদ করা হয়েছে। খামারটির পাশ দিয়ে
ধূলশূড়া ইউনিয়নের দিকে একটি পাকা রাস্তা চলে গেছে। রাস্তা পাশেই পদ্মা
নদীতে ভেঙ্গে যাওয়া জেগে উঠা চর। সেখান দিয়ে ছোট খালের মত ইছামতি নামে
একটি শাখা নদী চলে গেছে।খামারটি ভিতরে বিশাল আকৃতির একটি পুকুর
রয়েছে। সেখানে হাঁসগুলো সাতার কাটছে। আয় আয় বলে ডাক দিলেই হাঁসগুলো
তীরে চলে আসে। হাঁসগুলো খাদ্য খেয়ে পুকুরে চলে যায় আবার খাওয়ার সময় হলেই
উপরে চলে আসে।
হরিরামপুর উপজেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ড: মো: আবুল কালাম আজাদ বলেন,
ওই হাসের খামার থেকে কোন লোক পরামর্শের জন্য আমাদের কাছে আসেনি। আমরা
খামারীদের সরকারি ফি রেখে বিভিন্ন ঔষধ, ভেক্সিন দিয়ে থাকি।সেই সাথে খামারের
উন্নয়নে খামারীদের পরামর্শ দেওয়া দেওয়া হয়।
Posted ১:৪৯ অপরাহ্ণ | বুধবার, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২১
dainikbanglarnabokantha.com | Romazzal Hossain Robel
এ বিভাগের আরও খবর
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।