টি,এম,এ হাসান, সিরাজগঞ্জ:
সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া থানার পঞ্চক্রোশী ইউনিয়নের বেত বাড়ি এলাকার ত্রাস হিসাবে খ্যাত চিহ্নিত মাদক ব্যাবসায়ী হবি-সাইফুদ্দি’র পরিচালিত সন্ত্রাসী বাহিনীর হত্যা, গুম, ধর্ষণ, ডাকাতি, চাঁদাবাজি সহ অন্যান্য সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের দাপটে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন আশে পাশের এলাকাবাসী। নিরাপত্তা ও শান্তির আশায় পুলিশ হেড কোয়ার্টাস, প্রশাসন সহ অসংখ্য দ্বারে দ্বারে ঘুরেও এই শালা-দুলাভাই সন্ত্রাসী বাহিনীর হাত থেকে মিলছেনা সমাধান। প্রতি মুহুর্তেই যেন একটা ভয় ও অজানা শংকা নিয়ে নিরাপত্তা হীনতায় কাটছে তাদের জীবন ও সময়। এদিকে এলাকায় হাতুড়ি বাহিনী নামে পরিচিত এই হবি-সাইফুদ্দি সন্ত্রাসী বাহিনীর দাপটে নির্ঘুম কাটে এই দিন মজুর সাধারন মানুষগুলোর প্রতিটি রাত। চাঁদা না পেলেই শুরু হয় হাতুড়ি দিয়ে পিটানো অথবা বাড়িঘর দোকান পাটে আগুন দেয়া। আর রাতের আধার নামলেই ডাকাতি, ধর্ষণ, ছিনতাই যেন তাদের নিত্যদিনের সঙ্গি। কথা গুলো বলছিলেন ভুক্তভোগী বেত বাড়ি ও পূর্ব সাত বাড়িয়া এলাকার অসংখ্য নির্যাচিত সাধারন নারী পুরুষ ও এলাকাবাসী। কিন্তু এবিষয়ে পুলিশ হেড কোয়ার্টার, সিরাজগঞ্জ পুলিশ সুপার, র্যাব-১২ সহ নানান সময়ে নানান জায়গায় অসংখ্য অভিযোগ করলেও কোনও সমাধান মেলেনি বলেও দাবি করেন তারা। এলাকাবসীরা বলেন, উল্লাপাড়া থানার পঞ্চক্রোশী ইউনিয়নের বেত বাড়ি এলাকার মৃত তাহের সরকারের ছেলে মো. হাবিবুর রহমান হবি (৪৫)। সে এলাকার চিহ্নিত মাদক ব্যাবসায়ী, খুনি, চাদাবাজ, ভূমিদস্যু, ডাকাত ও ত্রাস হিসাবে পরিচিত। তার বিরুদ্ধে খুন, গুম, ডাকাতি, চাঁদাবাজি সহ নানান সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের অভিযোগে প্রায় দেড় ডজন মামলা আছে। যার মধ্যে কয়েকটি মামলায় একাধিকবার জেলও খেটেছেন।
তারই একান্ত সহযোগী হবি’র দুলাভাই (বোনের স্বামী) একই এলাকার মৃত মতলব প্রামাণিকের ছেলে সাইফুল ইসলাম ওরফে সাইফুদ্দি (৬৫)। যে হবি’র ডান হাত হিসাবে কাজ করে থাকেন তার বিরুদ্ধেও প্রতিবন্ধী মেয়েকে ধর্ষন, শিশু অপহরন, ডাকাতি সহ কয়েকটি মামলা রয়েছে। এই সাইফুদ্দিও জেল খেটে বেরিয়েছেন সম্প্রতি। তিনিই মুলত হাবিবুর রহমান হবি’র হয়ে সকল কাজের নেতৃত্ব দেন ও বাস্তবায়ন করেন বলেও দাবি করেন এই ভুক্তভোগী এলাকাবাসী। তারা জানান, এই সাইফুল ইসলাম ওরফে সাইফুদ্দি, একই এলাকার মৃত কামাল হোসেনের ছেলে ইমন (২৫), ও সোহেল (৩২), মো. তছু মন্ডলের ছেলে জহুরুল (৪২), মজনু খা’র ছেলে নিজামুল সহ অন্তত ২০থেকে ২৫জনের একটি সন্ত্রাসী গ্রুপ তাদের। যাদেরকে এলাকার সবাই হাতুড়ি বাহিনী নামেই চেনেন। একই গ্রামের মো. আবজাল হোসেনের ছেলে মো. সাগর আলী (২৫) বলেন, ৪মাস আগে সন্ত্রাসী হবি ভুয়া পুলিশ দিয়ে আমাকে ধরিয়ে মাদক ব্যাবসায়ী বানিয়ে ৩০হাজার টাকা দাবি করেন। তখন ১৫হাজার টাকা দিলেও বাকি ১৫হাজার টাকা না দিতে পারায় ঘর বাড়িতে আগুন দেয় ও হামলা চালিয়ে দুই লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি করেন। এছাড়াও এসময় ঘরে রাখা ১লক্ষ ২০হাজার টাকা লুট করে নিয়ে যায় তারা। পরেরদিন থানায় অভিযোগ করে আমার শ্বশুর জাহাঙ্গীর মন্ডল ও চাচা শ্বশুর দুলাল মন্ডল বাড়িতে ফেরার পথে রাস্তাতেই ধরে হাতুড়ি দিয়ে হবির নেতৃত্বে অন্তত ২০-২৫জন এলোপাতাড়ি মারধর করেন। পরবর্তীতে আমরা শুধু সবকিছু সহ্য করে আইনের প্রতি আস্থা রেখে যাচ্ছি। প্রশাসন ব্যাবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করলে এসব কিছু চাপা দেওয়ার চেষ্টায় উলটো উল্লাপাড়া থানার ওসির বিরুদ্ধেও মিথ্যা মামলা করে এই সাইফুদ্দি। মৃত আব্দুল আজিজ সরকারের ছেলে মো. কামরুল ইসলাম বলেন, প্রায় ৩-৪বছর আগে এই সাইফুল ইসলাম ওরফে সাইফুদ্দি একসময় উল্লাপাড়ায় নাইট গার্ডের চাকরি করা অবস্থায় হামিদ সাইকেল স্টোরে একটি বড় ডাকাতির ঘটনা ঘটে, যেটারও মাস্টারমাইন্ড ছিল এই সাইফুদ্দি। নজর আলী মন্ডলের ছেলে মো. দুলাল মন্ডল বলেন, গত ২৩মে রাত ৮টার দিকে আমার ভাস্তি জামাই সাগর ধানের খড়ের আটি কাটছিলেন পরেরদিন শুকানোর জন্য। এমতাবস্থায় সাইফুদ্দি ও হবি সহ তাদের এই সন্ত্রাসী গ্রুপের প্রায় ২০-২৫জন এসে রামদা ও হকিস্টিক সহ আক্রমণ করে মারধর করে সাগরকে। পরেরদিন মামলা করায় রাতে আবারও নানান রকমের ভয়ভীতি ও হুমকি প্রদর্শন করতে বাড়িতে আসলে গ্রামবাসী মিলে নিজেদের রক্ষার তাগিদে তাদের ধাওয়া করে সাইফুদ্দি ও চান মিয়াকে ধরে ফেলে। পরে উল্লাপাড়া থানা পুলিশকে জানালে তারা এসে তাদের আটক করে নিয়ে যায়। মো. গোলাম মোস্তাফা সরকারের ছেলে মুরগি ব্যাবসায়ী মো. আশরাফুল ইসলাম বলেন, প্রায় ৪মাস আগে হবি ও সাইফুদ্দি বাহিনী আমার কাছে ৫০হাজার টাকা চাদা দাবি করে। আমি টাকা না দিলে তারা আমার মুরগির দোকানটাই আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়।
পার্শবর্তী পূর্ব সাত বাড়িয়া গ্রামের মৃত হায়দার সরকারের ছেলে বুলবুল সরকার (৩৫) বলেন, আমার বাড়িতে গিয়ে হবি, সাইফুদ্দি, মনিরুল, নিজামুল সহ ১৫-২০জন মিলে দেড় লক্ষ টাকা চাদা দাবি করেন। আমি চাঁদা দিতে অস্বীকার করলে তারা তাদের সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে আমার বাড়িতে আগুন দেয় ও সলপ রেল স্টেশন এলাকায় আমাকে আটকিয়ে মারধর করে। মৃত আবুল হোসেনের ছেলে মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, গত ১৬জুন ২০১২ তারিখে এলাকার ফসলের মাঠ থেকে পুরো শরীরে পোড়া মবিল লাগানো অবস্থায় একটি অজ্ঞাত যুবতী নারীর মৃতদেহ উদ্ধার করে উল্লাপাড়া থানা পুলিশ। অজ্ঞাত নারীর আনুমানিক বয়স হবে ২৪-২৬বছর। পুরো শরীরে পোড়া মবিল লাগানো ্থাকায় তার পরিচয় নশ্চিত হওয়া যায়না। পরবর্তীতে প্রকৃত ঘটনা জানা যায়, নারীটাকে খুন করে প্রথমে সাইফুদ্দির প্রতিবেশী মৃত আজাহার মাষ্টারের ছেলে আসাদুলের বাড়ির টয়লেটে রাখা হয়। পরবর্তীতে সন্ত্রাসী হবি’র নির্দেশে মৃতদেহটি সাইফুদ্দি তার ছেলেদের নিয়ে গ্রামের ফসলের মাঠে ফেলে দিয়ে আসে। তিনি আরও বলেন, কিছুদিন পরে সাইফুদ্দির ছেলে মোমিন আমার সেই জমিতেই কাজ করার সময় আমার কাছে বলছিলো, এই লাশটা তারাই ফেলে দিয়ে গিয়েছিল। এবং হবি সাইফুদ্দিকে ফোন দিয়ে নাকি এই কাজটি করতে বলেছিলো। সাইফুদ্দি ও তার ছেলে মোমিন নিজেরাই এই কথা একাধিকিবার স্বীকার করেছেন ও এলাকাবাসী সবাই এটা জানেন বলেও জানান