টি এম এ হাসান. সিরাজগঞ্জ: | সোমবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২১ | প্রিন্ট
কতৃপক্ষের উদাসীনতায় এবার সিরাজগঞ্জের সলঙ্গা হাট পেরিফেরির সরকারি জায়গা কেনা-বেচা শুরু হয়েছে। সরকারের কাছ থেকে লিজ নিয়ে ব্যবসা পরিচালনার কথা থাকলেও অনেকেই আবার লিজ না নিয়েও অবৈধ দখলে রেখেছেন হাটের অধিকাংশ জায়গা। আবার এই অবৈধভাবে দখল নেয়া পজিশনও কেনা-বেচা করছেন মোটা টাকার বিনিময়ে। সদ্য এমনই একটি অবৈধ দখলের জায়গা বিক্রি হয়েছে ৭ লাখ টাকায়। যে জায়গায় ইতিমধ্যেই কিনে নেয়া ব্যাক্তি সেখানে সরকারি গাছের ডালপালা গেটে গরে তুলেছেন নতুন ঘর। স্থানীয় ইউনিয়ন ভূমি অফিস সবকিছু জানলেও দেননি বাধা, নেননি কোনও ব্যাবস্থাও। যা নিয়ে হতবাক হয়েছেন হাটের ইজারাদার, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান সহ অনেকেই। কিন্তু এতকিছুতেও যেন কোনও পদক্ষেপ নেই কতৃপক্ষের। তবে হাটের ইজারাদার বলছেন উচ্ছেদ করা হোক সকল অবৈধ দখলদারদের। সলঙ্গা হাট পেরিফেরির জায়গায় মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে অবৈধ পজিশন কেনা-বেচা হয়েছে এমন তথ্যের ভিত্তিতে সরেজমিনে গিয়ে মেলে এর শতভাগ সত্যতা। স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, দীর্ঘদীন হলো হাটের গেঞ্জি পট্টিতে একটি জায়গা অবৈধ দখল নিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছিলেন আব্দুস সাত্তার নামে এক ব্যাবসায়ী। কিছুদিন আগে তিনি তার সেই দখলকৃত জায়গাটি আবার রফিকুল ইসলাম নামে এক ব্যবসায়ীর কাছে লাখ টাকায় বিক্রি করেন। যেখানে সরকারি গাছের ক্ষতি করে এখন নতুন ঘর করে ব্যবসা শুরু করেছেন রফিকুল ইসলামের ছেলে জুয়েল। সেই দোকানটিতে গিয়ে কথা হয় ৭লাখ টাকা দিয়ে দোকান কিনে ব্যবসা পরিচালনা করা রফিকুল ইসলামের ছেলে জুয়েলের সঙ্গে। তিনি জানান, কিছুদিন আগে আমরা আগের ব্যবসায়ী আব্দুস সাত্তারের কাছ থেকে নগদ ৭লাখ টাকা দিয়ে কিনেছি। যা স্টাম্পে লিখিত আছে বলেও জানান তিনি। সেসময়ে স্থানীয় ইউনিয়ন ভূমি অফিসের ভূমি উপ সহকারি কর্মকর্তা সাধন কুমার বসাক এখানে আসলেও তাকে ইজারাদারের অফিসে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তার সঙ্গে কি কথা হয়েছে আমি জানিনা তবে তিনি কোনও বাধা দেননি। তবে স্ট্যাম্পের কপি চাইলে সেটা দিতে অপারগতা প্রকাশ করে আর কোনও কথা বলতে চাননি তিনি। এবিষয়ে পজিশন বিক্রেতা আব্দুস সাত্তারের সঙ্গে কথা হলে তিনি মুঠোফোনে প্রথমে পজিশন বিক্রির কথা টা স্বীকার করে বলেন, ছেলের চাকরির জন্য বিক্রি করেছি। কত টাকায় বিক্রি করেছেন জানতে চাইলে মুঠোফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। পরবর্তীতে কিছুক্ষণ পরে আবার কল দিলে তিনি বিক্রির বিষয়টি অস্বীকার করে এবিষয়ে আর কোনও কথা বলতে না চেয়ে মুঠোফোনে মাফ চাইতে থাকেন। তবে স্থানীয় অনেকেই বলেন, স্থানীয় ভূমি কর্মকর্তাদের যোগসাজেশে এভাবে হাট পেরিফেরির অসংখ্য জায়গা দখল হয়ে গিয়েছে এবং সেসকল জায়গা আবার কেনা-বেচাও হচ্ছে। এমনকি অনেকেই আবার নিয়ম না মেনে গরে তুলেছেন বহুতল ভবন। এসকল বিষয়ে কতৃপক্ষের উদাসীনতাকেই দুষছেন তারা। এবিষয়ে হাটের ইজারাদার মো. ইকবাল হোসেন বলেন, এবিষয়ে আমাকে কেও কিছু জানায়নি। এছাড়াও সাত্তারের যে দোকান ঘরটি ছিল সেটা লিজপ্রাপ্ত নয় বরং অবৈধ দখলের। তিনি বলেন, যেগুলো লিজপ্রাপ্ত পজিশন না সেগুলোতে লাল ক্রস চিহ্ন দেয়া আছে। তার এই কথার সস্ত্যতাও মেলে সেই দোকান ঘরটিতে গিয়ে। এছাড়াও তিনি আরও বলেন, আমি প্রায় দুবছর আগে এইসকল অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের জন্য কতৃপক্ষকে একটি চিঠি দিয়েছিলাম কিন্তু আজও এর কোনও সাড়া পাইনি। এসময় কতৃপক্ষের প্রতি এসকল অবৈধ দখল দেয়া অবৈধ স্থাপনা গুলো উচ্ছেদেরও আহবান জানান তিনি। এবিষয়ে স্থানীয় ঘুড়কা ইউনিয়ন ভুমি অফিসের উপ সহকারী ভুমি কর্মকর্তা সাধন কুমার বসাক ঢাকা পোস্টকে বলেন, এবিষয়ে আমি কোনও কথা বলতে চাইনা। এবং বিষয়টি আমার দেখার কিছু নেই। আপনি সার্ভেয়ার স্যারের সঙ্গে কথা বলেন। এবিষয়ে স্থানীয় ঘুড়কা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. জিল্লুর রহমান বলেন, হাট পেরিফেরির জায়গা বা পজিশন কেনা-বেচা নিয়ামানুযায়ী অবৈধ। এবিষয়ে কোনও অভিযোগ পেলে অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। রায়গঞ্জ ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার মো. জাকির হোসেনের সঙ্গে কথা হলে তিনি এবিষয়ে কোনও কথা না বলে সহকারী কমিশনার (ভূমি) এর সঙ্গে কথা বলতে বলেন। এমনকি হাট সম্পর্কে কোনও তথ্য দিতেও অপারগতা প্রকাশ করেন তিনি। তবে এবিষয়ে কথা বলার জন্য রায়গঞ্জের সহকারী কমিশনার (ভূমি) নুসরাত জাহান এর সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, আমি উর্ধতন কতৃপক্ষের সঙ্গে কথা না বলে এবিষয়ে কোনও বক্তব্য দিতে পারবোনা। তবে সলংগা হাট পেরিফেরির জায়গায় সর্বমোট কতগুলো পজিশন লিজ দেয়া আছে ও কতগুলো অবৈধ দখলদার আছে এমন তথ্য জানতে চাইলে তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করার পরামর্শও দেন তিনি।
Posted ১২:০১ অপরাহ্ণ | সোমবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২১
dainikbanglarnabokantha.com | Romazzal Hossain Robel
এ বিভাগের আরও খবর
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।