বিশেষ আমরেকিান প্রসে র্সাভসি। | বুধবার, ২৩ মার্চ ২০২২ | পড়া হয়েছে 75 বার
সাবেক প্রধান বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদ এর মৃত্যুতে-লেখকঃ এস.ই.ইসলামের শোকপ্রকাশ।
সাবেক প্রধান বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদ আর নেই ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। শনিবার সকাল ১০টা ২০ মিনিটে সাবেক বিচারপতি শাহাবুদ্দীন
আহমেদ ঢাকা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ইন্তেকাল করেছেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৯২ বছর। বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদ ১৯৩০ সালের ১ ফেব্রæয়ারি নেত্রকোণা জেলার কেন্দুয়া উপজেলার পেইম গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম রিসাত তালুকদার আহমেদ। তিনি একজন সমাজসেবী ও এলাকার জনহিতৈষী ব্যক্তি হিসাবে পরিচিত ছিলেন। শাহাবুদ্দিনের বেড়ে ওঠা নান্দাইলে তার বোনের বাড়িতে।
শাহাবুদ্দিন আহমেদ ১৯৪৫ সালে নান্দাইলের চন্ডীপাশা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিক পাশ করেন। ১৯৪৮ সালে কিশোরগঞ্জের গুরুদয়াল কলেজ থেকে আইএ পাশ করার পর ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিলেন। তিনি ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়থেকে ১৯৫১ সালে অর্থনীতিতে বিএ (অনার্স) এবং ১৯৫২ সালে আন্তজার্তিক সম্পর্ক বিষয়ে ¯œাতকোত্তর ডিগ্রী লাভ করেছিলেন। পরবর্তীতে ১৯৫৪ সালে তদানীন্তন পাকিস্তানি সিভিল সার্ভিসের (সিএসপি) প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায়উত্তীর্ণ হয়ে তিনি প্রথমে লাহোরের সিভিল সার্ভিস একাডেমি এবং অক্সফোর্ড বিশ^বিদ্যালয়ে জনপ্রসাশনে উচ্চতর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছিলেন। শাহাবুদ্দিন আহমেদের স্ত্রীর নাম আনোয়ারা বেগম, তিনি তিনটি কন্যা ও দুটি পুত্র সন্তানের জননী। তার জ্যেষ্ঠা কন্যা ড.মিসেস সিতারা পারভীন ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ে সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ছিলেন। দ্বিতীয়া কন্যা মিসেসসামিনা পারভীন একজন স্থপতি। তার পুত্রদ্বয় শিবলী আহমেদ একজন পরিবেশ প্রকৌশলী আরেক পুত্র সোহেল আহমেদ কলেজ ছাত্র ও সর্বকনিষ্ঠা কন্যা সামিয়া পারভীন চারুকলা কলেজের ছাত্রী। শাহাবুদ্দিন আহমেদের কর্মজীবন সূচনা ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে। এরপর তিনি গোপালগঞ্জ ও নাটোরের মহকুমায় কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তারপর সহকারী জেলা প্রসাশক হিসেবে পদোন্নতি লাভ করেছিলেন। ১৯৬০
সালে তিনি প্রসাশন থেকে বিচার বিভাগে বদলি হয়েছিলেন। পরবর্তীতে ঢাকা ও বরিশালের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে এবং কুমিল্লা ও চট্রগ্রামের জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। ১৯৬৭ সালে হাইকোর্টের রেজিস্ট্রার, ১৯৭২
সালে হাইকোর্টের বেঞ্চে বিচারক হিসেবে তাকে উন্নীতকরা হয়েছিলো। ১৯৭৩ থেকে ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালের চেয়্যারম্যান, এরপর তাকে হাইকোর্টের বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিলো। ১৯৮০ সালের ৭ ফেব্রæয়ারি শাহাবুদ্দিন আহমেদকে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপীল বিভাগের বিচারক নিয়োগ করা হয়েছিলো। বিচারপতি হিসেবে তাঁর প্রদত্ত বহুসংখ্যক রায় ঢাকা ‘ল’ রিপোর্টাস্ধসঢ়;, বাংলাদেশ লিগ্যাল ডেসিশন্স এবং বাংলাদেশ কেইস রিপোর্টস্ধসঢ়;-এ প্রকাশিত হয়েছিলো। চাকরি সংক্রান্ত বিষয়, নির্বাচনী বিরোধ এবং শ্রমিক ব্যবস্থাপনাসম্পর্ক বিষয়ে তাঁর প্রদত্ত কিছু রায় উচ্ছ¡াসিত প্রশংসা লাভ করেছিলো। বাংলাদেশ সংবিধানের ৮ম সংশোধনীর উপর তাঁর প্রদত্ত রায় দেশের শাসনতান্ত্রিক বিকাশের ক্ষেত্রে এক অনন্য ঘটনা হিসেবে স্বীকৃত পেয়েছিলো।
এখানে তিনি অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে গণতন্ত্রের ছদ্মাবরণে নিজস্ব ক্ষমতা নিরঙ্কুশ করা, গোষ্ঠী শাসন প্রতিষ্ঠা, মৌলিক মানবাধিকার খর্ব করা, মানবাধিকার লঙ্ঘন, জনগণের সার্বভৌমত্বের বিরোধিতা,বিচার বিভাগের স্বাধীনতার অস্বীকৃতি এবং আইনের শাসনের পরিবর্তে আদেশ জারির মাধ্যমে সংবিধান রহিত করার প্রবণতার জন্য তৃতীয় বিশ্বের একনায়ক শাসকদের সমালোচনা করেছিলেন। বিচার বিভাগে নিয়োগ, পদোন্নতি, বদলি ও ছুটির ক্ষেত্রে হাইকোর্টের চিরাচরিত ক্ষমতা খর্ব করা এবং রাষ্ট্রের নির্বাহী বিভাগ কর্তৃক নিম্ন আদালত সমূহ নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারেও তিনি অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন।
১৯৮৩ সালের মধ্য ফেব্রæয়ারিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিক্ষোভরত ছাত্রদের উপর পুলিশের গুলি বর্ষণের ঘটনা তদন্তের জন্য গঠিত তদন্ত কমিশনের চেয়ারম্যান ছিলেন বিচারপতি শাহাবুদ্দিন। ওই ঘটনায় কয়েকজন ছাত্র নিহত এবং বহু ছাত্র আহত হয়। কিন্তু ব্যাপক তদন্ত চালিয়ে প্রতিবেদন দাখিল করা হলেও তৎকালীন সরকার কর্তৃক এই তদন্ত প্রতিবেদন কখনোই সাধারণ্যে প্রকাশ করা হয় নি। তিনি ১৯৮৪ সালে গঠিত জাতীয় বেতন কমিশনের চেয়ারম্যান ছিলেন। তাঁর রিপোর্টের ভিত্তিতে উচ্চতর হারে বেতন স্কেল নির্ধারণ করা হতো। ১৯৭৮ সালের আগস্ট থেকে ১৯৮২ সালের এপ্রিল মাস পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশ রেডক্রস সোসাইটির চেয়ারম্যান হিসেবে দাযয়ত্ব পালন করেছিলেন। ১৯৯০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত আপীল আদালতের বিচারপতিদের আন্তর্জাতিক সম্মেলনে তিনি যোগদান করেছিলেন।
নব্বইয়ের আন্দোলনে এইচ এম এরশাদ সরকারের পদত্যাগের পর নাটকীয়তার মধ্যে আকস্মিকভাবে রাষ্ট্রপ্রধানের দায়িত্বে আসেন তৎকালীন প্রধান বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদ। এরশাদ পদত্যাগ করার পর রাষ্ট্রপতির পদে কে আসবে, নির্বাচন পর্যন্ত অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের প্রধান কে থাকবেন- সেই প্রশ্নে আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ আন্দোলনে অংশ নেওয়া দলগুলো একমত হতে পারছিল না। পরে প্রধান বিচারপতিকে সেই দায়িত্ব দেওয়ার বিষয়ে সমঝোতা হয়। আবার সুপ্রিম কোর্টে ফেরার শর্ত দিয়ে শাহাবুদ্দিন আহমদ তাতে রাজি হয়েছিলেন। মওদুদ আহমেদ উপ-রাষ্ট্রপতির পদ থেকে ইস্তফা দিলে সেই দায়িত্বে আসেন শাহাবুদ্দিন। ৬ ডিসেম্বর এরশাদ ক্ষমতা ছাড়লে শাহাবুদ্দিন আহমেদ রাষ্ট্রপতির পদ গ্রহন করেছিলেন। পরে তার নেতৃত্বাধীন নির্দলীয় সরকারের অধীনে ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রæয়ারি পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়েছিলো।
নির্বাচনের পর আবার প্রধান বিচারপতির পদে ফিরেছিলেন তিনি। তার সেই ফেরার জন্য দেশের সংবিধানেও পরিবর্তন আনতে হয়েছিল। চাকরির মেয়াদ শেষে ওই পদ থেকেই অবসরে গিয়েছিলেন তিনি। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর এই দলের প্রার্থী হিসেবে সংসদীয় সরকার পদ্ধতিতে বিনা প্রতিদ্বন্দিতায় রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন শাহাবুদ্দিন আহমেদ। ২০০১ সালের ১৪ নভেম্বর পর্যন্ত তিনি সেই দায়িত্বে ছিলেন। সাবেক বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদের মৃত্যুতে শোক গভীর প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী সহ উপরমহলের জ্ঞাণী-গুনী ব্যক্তিবর্গ। লেখক নিজেও শাহাবুদ্দিন আহমেদের মৃত্যুতে গভীরভাবে শোকাহত।
তিনি বলেন শাহাবুদ্দিন আহমেদ ছিলেন একজন সৎ ও দক্ষ বিচারক। প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব পালনের সময় থেকে তিনি যে সিদ্ধান্তগুলো দিয়ে গেছেন তা যুগ যুগ ধরে চলতে থাকবে।
এছাড়াও গণতন্ত্র উদ্ধারে তার যে ভূমিকা ছিলো সেটা জাতির কাছে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। কেননা,তিনি একটি সংকট কালে দায়িত্ব গ্রহণ কিেছলেন এবং গণতন্ত্র উদ্ধারের জন্য তিনি সর্বশ্রেষ্ঠ ভূমিকা পালন করেছিলেন। লেখকের সহিত পারিবারিক ভাবে সুসম্পর্ক ছিলো তার। লেখক তার মৃত্যুতে অন্তরের অন্তস্থল থেকে গভীর শ্রদ্ধ্যা নিবেদন ও আতœার মাগফেরাত কামনা করেছেন, আমিন।
বাংলাদেশ সময়: ৭:২৮ অপরাহ্ণ | বুধবার, ২৩ মার্চ ২০২২
dainikbanglarnabokantha.com | Romazzal Hossain Robel