
টি এম এ হাসান সিরাজগঞ্জ | মঙ্গলবার, ১০ মে ২০২২ | পড়া হয়েছে 13 বার
সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতন জমি দখল সহ নানা অভিযোগ
তালম ইউনিয়ন আ’লীগের সভাপতির বিরুদ্ধে সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি জমি দখল, নিরহ পরিবারদের সমাজচ্যুত ও সংখ্যালঘুদের নির্যাতনসহ নানা অভিযোগ সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার তালম ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক চেয়াম্যারন আব্বাছ-উজ-জামানের বিরুদ্ধে। মঙ্গলবার (১০ মে) দুপুরে সরেজমিনে গেলে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করে বলেন, আব্বাছ-উজ-জামান ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি হওয়ার পর থেকে শুরু হয় জমি দখল, এলাকার নিরহ মানুষদের অত্যাচার, সংখ্যালঘু পরিবারের উপর নির্যাতন। চেয়ারম্যান হওয়ার পর আরও বেড়ে যায় নির্যাতনের তীব্রতা। আস্তে আস্তে নিজের হাতের মুঠোয় নিতে চায় তালম ইউনিয়ন বাসির বাক স্বাধীনতা। রাস্তাঘাটে তার পেটুয়া বাহিনী দ্বারা সংখ্যালঘুদের উপর চালায় অমানবিক নির্যাতন। এতেও তিনি ক্ষান্ত হননি। গত ৫ জানুয়ারী তাড়াশ উপজেলার ১নং তালম ইউনিয়নের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে তিনি দলীয় প্রতিক নৌকা চেয়েছিলেন। কিন্তু তার অপকর্মের কথা প্রকাশ পাওয়ায় দল তাকে নৌকা প্রতিক থেকে বঞ্চিত করা হয়। এর পর নির্বাচনে নৌকাকে হারাতে শুরু করেন নতুন কৌশল। নৌকা প্রার্থীর বিরুদ্ধে দাড় কড়িয়ে দেন তার নিজস্ব প্রার্থী জয়নাল হাজারী ওরফে খাড়া জয়নালকে। কিন্তু সেখানেইও তিনি হেরে যান। পরে আব্বাছ-উজ-জামান শুরু করেন আবারো নতুন কৌশল। যারা নির্বাচনে নৌকার পক্ষে কাজ করেছেন তাদের উপর শুরু হয় নানা নির্যাতন। ভুক্তভোগীরা আরো বলেন, নৌকার পক্ষে কাজ ও ভোট দেওয়ায় তারটিয়া গ্রামের ৫টি পরিবারকে সমাজচ্যুত করেছেন আব্বাছ-উজ-জামান। গত ১ মাস ধরে ওই পরিবারগুলো সমাজের কারও সঙ্গে কথা ও চলাফেরা করতে পারছেন না। এছাড়াও পরিবারের লোকজন রমজান মাসে মসজিদে মুসল্লিদের ইফতারী করা তো দুরের কথা পবিত্র ঈদুল ফিতরের নামাজও মাঠে পরতে দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ ওই পরিবারগুলোর। ভুক্তভোগী তালম ইউনিয়নের তারটিয়া গ্রামের আব্দুস সাত্তার, আব্দুল আজিজ অভিযোগ করে বলেন, প্রায় ১ মাস যাবত আব্বাছ-উজ-জামান আমাদের সমাজচ্যুত করে রেখেছেন। গ্রামের মানুষদের হুমকি-ধামকি দিচ্ছিন আমাদের সাথে কেউ চলাফেরা না করা হয়। কোন প্রকার লেনদেন না করা জন্য। সমাজের কারও সঙ্গে কথা বলাও নাকি আমাদের অপরাধ। সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের কাছে আমরা সুষ্টু বিচার দাবি করছি। একই এলাকার নজিবর রহমান, ইসাহাক আলী, আলম শেখ বলেন, প্রতিবছর রমজান মাসে আমরা মসজিদে ইফতার দেয়া হয় মুসুল্লিদের। কিন্তু এবার আব্বাছ-উজ-জামান তার নিজস্ব প্রার্থী নির্বাচনে হেরে যাওয়ায় মসজিদে ইফতারী দিতে দেয়নি। এমন কি আমাদের ঈদের নামাজ মাঠে আদায় করতে দেয়নি। এই জুলুমবাজের হাত থেকে আমরা পরিত্রান চাই। তারটিয়া গ্রামের সুধর চন্দ্র (৪৫) কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, দীর্ঘদিন যাবত সাবেক চেয়ারম্যান আব্বাস আমাদের হিন্দু পরিবারগুলোকে নানাভাবে হয়রানি করে আসছে। শুধু তাই নয় প্রভাব খাটিয়ে মন্দিরের জায়গাসহ অনেক জায়গা দখল করে নিয়েছে। তার ভয়ে হিন্দু পরিবার গুলো মুখ খুলতে পারে না। কিছু বলতে গেলে তার পেটুয়া বাহিনী দিয়ে হামলা চালায়। সমাজচুত ইউনিয়ন যুবলীগের সহ-সভাপতি আব্দুল হান্নান বলেন, তালম ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি ও আমি একই গ্রামের বাসিন্দা। ৫ জানুয়ারী ইউনিয়নের নির্বাচন আমি নৌকার পক্ষে কাজ করেছি। আর সভাপতি তার মনোনীত প্রার্থী জয়নালের কাজ করেছে। নৌকার বিদ্রোহী প্রার্থী হেরে যাওয়ায় সে আমাকে দায়ী করেন। এরপর থেকে আব্বাছ-উজ-জামান আমাদের ৫ পরিবারকে সমাজচ্যুত করেছে। তালম ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সাবেক চেয়ারম্যান আব্বাছ-উজ-জামান সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমি কাউকে সমাজচ্যুত করি নাই। নির্বাচন ও রাজনীতি নিয়ে এলাকার একটি কুচক্রী মহল আমার নামে বিভিন্ন ধরনের ষড়যন্ত্র করছে। তালম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুল খালেক বলেন, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক চেয়ারম্যান আব্বাছ-উজ-জামান ইউনিয়ন বাসির সাথে কি করেছে সেটা আমার জানা নেই। তবে একটি কথা চিরসত্য যেমন কর্ম তেমন ফল। সে যা করেছে তালম ইউনিয়ন বাসি তার ফল দিচ্ছে। তাড়াশ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সনজিত কুমার কর্মকার বলেন, তালম ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি/সম্পাদকের মধ্যে কি নিয়ে সমস্যা হয়েছে আমার জানা নেই। তবে আওয়ামীলীগের নেতা হয়ে তারা দ্বন্দে জড়িয়ে পড়েছে। এ নিয়ে তালম ইউনিয়ন আওয়ামী লীগকে নিয়ে নানা আলোচনা ও সমালোচনা হচ্ছে। এধরনের কাজকে তীব্র নিন্দা জানাই।
বাংলাদেশ সময়: ৬:৫৫ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ১০ মে ২০২২
dainikbanglarnabokantha.com | Romazzal Hossain Robel