| শনিবার, ২৪ অক্টোবর ২০২০ | প্রিন্ট
সাখাওয়াত জামিল সৈকত: অথচ ইলিশ মাছের জীবনের লক্ষ্য কিন্তু একটাই, মা হওয়া। যদিও পুরুষ ইলিশ কী হতে চেয়েছিলে তা আজ আর কেউ মনে রাখেনি। লিঙ্গ বৈষম্য সবখানে!
এদিকে বাংলাদেশে যা কিছু জাতীয়, তার মাঝে ইলিশই সত্যিকারের জাতীয়।
জাতীয় পাখি দোয়েল। এক সময় প্রতিদিন দেখতাম, গাছের ডালে নয়, দু’টাকার নোটে। এখন দু’টাকার নোটও দোয়েলের ন্যায় হারিয়ে গিয়েছে। জাতীয় পাখি দেখতে হলে আপনাকে এখন যেতে হবে দোয়েল চত্বরে।
জাতীয় ফুল শাপলা। কোনো বিখ্যাত কবি শাপলাকে নিয়ে দু’লাইন কবিতা লিখে একে অমরত্ব দান করেনি। বিশ্ব সংসার তন্নতন্ন করে কেউ কাউকে পটানোর জন্য ১০৮টি শাপলা খুঁজে আনেনি। অসম্ভব সুন্দর এই ফুলটির দুর্ভাগ্যই বলতে হয়। একরকম বিনে পরিচর্যায় জন্ম নিয়ে সে নিজেকে বড্ড সহজলভ্য করে ফেলেছে হয়তো। তাই মূল্য পাচ্ছে না।
জাতীয় ফল কাঁঠাল। মৌসুমি ফল, সারা বছর পাওয়া যায় না। অন্যান্য ফল যেমন আম, লিচু, আঙুর, আপেল, বেদানা প্রভৃতির চেয়ে কম জনপ্রিয়। একমাত্র ফল যার আদি নিবাস গাঙ্গেয় বদ্বীপ মানে বাংলাদেশ।
জাতীয় পশু রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার। ১০০ বছর আগে ব্রহ্মপুত্রের চরের নলখাগড়ার বনেও এই পশু ছিলো প্রচুর। দেশের বিশাল এক জনগোষ্ঠীর সাথে টাইগারের কোনো সম্পর্ক নেই, না ভৌগোলিক না অর্থনৈতিক। অন্য যে অংশ আমরা টাইগার নিয়ে ভাবি, সেই আমরা জন্ম থেকে এই জাতীয় পশু নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি। এই বুঝি তারা বিপন্ন হয়ে হারিয়ে গেলো, এই বুঝি পরিবেশ বিপর্যয় তাদের শেষ করে দিলো, এই হয়তো বাঘ অভিমান করে ভারতে চলে গেলো, এহেন শত দুশ্চিন্তা উপহার দিচ্ছে জাতীয় পশু।
অন্যদিকে ইলিশ, জাতীয় মাছ। দেশের অন্যতম জি আই (ভৌগোলিক নির্দেশক) পণ্য এই মাছ বাংলাদেশ, মায়ানমার, ভারত, পাকিস্থান এমনকি ইরানে পাওয়া যায়। কিন্তু আসল ও আদি ইলিশ পৃথিবীতে একমাত্র বাংলাদেশেই পাওয়া যায়। সারা বিশ্বের ৮৬% ইলিশ বাংলাদেশে আহরিত হয় যা সবচেয়ে সুস্বাদু, সুশ্রী আর রাজকীয় ইলিশ।
ইলিশ মাছ বাংলাদেশের সবচেয়ে পরিচিত আর জনপ্রিয় ব্যক্তিত্বের অধিকারী। ইলিশ চেনে না এমন মানুষ নেই দেশে। একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের প্লেটে কাতল/ রুই/ শিং/ মাগুর/ মৃগেল/ আইড় প্রভৃতি অতিপরিচিত মাছ ভাজা দিয়ে জিজ্ঞেস করুন মাছের নাম। দেখবেন অনেকেই বলতে পারবে না। কিন্তু রান্না করে প্লেটে দিলেও ইলিশ চেনে না এরকম লোক পাবেন না।
ইলিশ দেখতেও বেশ, কাঁচা অথবা রান্না করা। চমৎকার গড়ন, দেখলেই চেনা যায়। শরীরের উপরের দিক ঝলকানো রূপালি। অভিজাত ও ধারালো চেহারা। কাতল মাছকে দেখুন। দেখে মনে হবে জীবনযুদ্ধে পরাজিত ক্লান্ত প্রাণ এক। জীবনে তার কোনো চাওয়া পাওয়া নেই। অথচ প্রাপ্তবয়স্ক ইলিশ দেখুন। মন ভালো হয়ে যাবে।
ইলিশ গভীর সামুদ্রিক মাছ। নীল জলে তার বিচরণ। মা হওয়ার জন্য জন্মস্থানে হিজরত করে সে। সন্তান জন্ম দিয়ে বা দিতে এসে ইহলীলা সাঙ্গ করে সে।
প্রচণ্ড অভিমানী ও কুলীন মাছ সে। চাষ করতে পারবেন না। ছোট জায়গায় আটকে রাখতে পারবেন না। আজেবাজে খাবার খায় না, খায় প্ল্যাঙ্কটন। দুর্দান্ত সাঁতারু। ঘন্টায় ১২০০ কিমি বেগে ছুটতে পারে। পানির উপরে তুলে ছটফটানি দেখে মজা লুটবেন, তাও হবে না, আত্মাহুতি দেবে সে। কোন পুণ্যে বাংলাদেশ যে সে বেছে নিয়েছে তা কেবল সৃষ্টিকর্তা জানেন।
সারাদেশে চলছে ইলিশ প্রজনন মৌসুম। এ সময়ে ইলিশ মাছ আহরণ, ক্রয় ,বিক্রয়, মজুদ ও খাওয়া একেকটি ফৌজদারি অপরাধ। একটি মাছের মা হওয়া উপলক্ষ্যে দেশের গোটা প্রশাসন বিনিদ্র রজনী পাড় করছে। যারা দেশের কোনো ইতিবাচক দিক পাচ্ছেন না, এটা দেখুন। এরকম উদ্যোগ বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ ইতিবাচক দিকগুলোর একটি। এর পেছনে যে উদ্দেশ্য আছে তা শতভাগ দেশ ও জনগণের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট। ইলিশকে মা হতে দিন, তার এইম ইন লাইফ সফল হতে দিন। ঘটনাচক্রে ওটা আমাদেরও এইম অফ কান্ট্রি।
Posted ৮:৩২ অপরাহ্ণ | শনিবার, ২৪ অক্টোবর ২০২০
dainikbanglarnabokantha.com | Romazzal Hossain Robel
এ বিভাগের আরও খবর
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।