রবিবার ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৩ ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

>>

রাজশাহীতে পেয়াজের উৎপাদন সোয়া পাঁচ লাখ মেট্রিক টন দাম বৃদ্ধিতে হতবাগ ক্রেতা ও সংশ্লিষ্ট কৃষি কর্মকর্তারা

ইউসুফ চৌধুরী-রাজশাহী প্রতিনিধি:   |   রবিবার, ১০ ডিসেম্বর ২০২৩   |   প্রিন্ট

রাজশাহীতে পেয়াজের উৎপাদন সোয়া পাঁচ লাখ মেট্রিক টন দাম বৃদ্ধিতে হতবাগ ক্রেতা ও সংশ্লিষ্ট কৃষি কর্মকর্তারা

ভারত আগামী বছরের মার্চ পর্যন্ত পেঁয়াজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার পর বাংলাদেশে এর দাম রাতারাতি বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। দেশের অন্যান্য স্থানের মতো রাজশাহী শহরেও অস্থিরতা দেখা দেয় পেঁয়াজের বাজারে। তবে ভারত সরকারের ঐ ঘোষণার পরের দিন থেকে নগরীর বাজারগুলোতে ঘণ্টায় ঘণ্টায় বৃদ্ধি পেয়েছে পেঁয়াজের দাম। এছাড়াও স্থান ও দোকান ভেদে তারতম্য রয়েছে পেয়াজের দরেও। গত শনিবার (৯ ডিসেম্বর) সকালে নগরীর বাজার ভেঁদে দেশি পেয়াজ খুচরা বিক্রি হয়েছে ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা দরে। দুপুর পেরোতেই সেই পেয়াজ ঠেকেছে কেজিতে ১৬০-১৭০ টাকায়। আর সন্ধ্যা নাগাদ দর এসে ঠেকেছে ১৮০ টাকায়। গতকাল নগরীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, দেশিয় পেয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৬০ থেকে ১৮০ টাকা দরে। শুকনো পেয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২০০-২১০ টাকা কেজিতে। আর গ্রীষ্মকালীন পেয়াজ কেজিতে বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকা দরে। এদিকে, পেয়াজের দাম বৃদ্ধির খবর পেয়ে পেয়াজের ফুলকার দামও বাড়িয়ে দিয়েছে বিক্রেতারা। ৪০ টাকার ফুলকা কেজিতে ২০-৩০ টাকা বেড়ে দাড়িয়েছে ৬০-৭০ টাকাতে।

চাহিদার বিপরীতে যোগান ও উৎপাদনের ভারসাম্য যথেষ্ট পরিমাণে থাকার পরেও রাজশাহীতে পেয়াজের দাম বৃদ্ধির বিষয়টি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্তারাও মানতে পারছেন না। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর রাজশাহীর উপপরিচালক ড. মোঃ মোতালেব হোসেন বলেন, এখন তো নতুন দেশি পেয়াজের পাশাপাশি গ্রীষ্মকালীন পেয়াজও বাজারে এসেছে। এছাড়া রাজশাহী অঞ্চলে এবার উৎপাদনের পরিমাণও অনেক। এরপরেও হঠাৎ করে দাম বৃদ্ধির যৌতিক কোন কারণ নেই বলে মন্তব্য এই কর্মকর্তার। অধিদপ্তরের দেয়া তথ্য মতে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে রাজশাহী অঞ্চলে পেয়াজের আবাদ হয়েছে ২৯,৫৩৬ হেক্টর জমিতে। আর উৎপাদন হয়েছে ৫ লাখ ২২ হাজার ২২৬ মেট্রিক টন পেয়াজ। যেটা কিনা ২০২০-২১ অর্থ বছরের চাইতে ৩৬ হাজার ৭৪০ মেট্রিক টন বেশি। এছাড়াও ২০২১-২২ অর্থ বছরেও উৎপাদন ছিল পূর্ববর্তী অর্থবছরের চাইতে বেশি। কৃষকদের জন্য সরকারি প্রণোদনা আর কৃষিখাতে সরকারি ভর্তুকি সহ গ্রীষ্মকালিন সময়ে পেয়াজ উৎপাদনের পরেও দাম বৃদ্ধির কোন কারণ দেখছে না সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

হঠাৎ করে পেঁয়াজের দাম দ্বিগুণ হওয়ায় মধ্যবিত্ত ও খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ বিপাকে পড়েছে। ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে পেঁয়াজের দাম। এক রাতের ব্যবধানে ১০০ টাকার পেঁয়াজ কেজিতে বেড়েছে ৮০ টাকা। নগরীর মাস্টারপাড়া ও সাহেব বাজার, লক্ষিপুর, সাগরপাড়া, শালবাগান, উপশহর নিউমার্কেট কাঁচা বাজার, শিরোইল স্টেশন বাজার, নওদাপাড়া বাজার, তেরখাদিয়া কাঁচাবাজার, বিনোদপুর বাজার, কোর্ট বাজার সহ বিভিন্ন স্থানের স্থায়ী ও অস্থায়ী কাঁচা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, স্থানভেদে পেয়াজের খুচরা দরে রয়েছে ভিন্নতা। গেল শনি ও রবিবার (৯ ও ১০ ডিসেম্বর) সকাল থেকে রাত্রি পর্যন্ত শহরের বিভিন্ন স্থানের খুচরা বাজারে দামের চিত্রেও ছিল ভিন্নতা।

বাজারে এসে পেঁয়াজের দাম শুনে চোখ যেন মাথায় উঠে গেছে ক্রেতাদের। বাড়তি দাম শুনে কেউ পেঁয়াজ না নিয়ে ফিরে যাচ্ছেন, আবার কেউ সাধ্যমত স্বল্প পরিমাণ পেঁয়াজ কিনে বাড়ি ফিরছেন। যদিও পেঁয়াজ নিত্যপ্রয়োজনীয় তাই দাম বাড়লেও বাধ্য হয়েই আবার ক্রেতাদের কিনতে হচ্ছে। এনিয়ে ক্রেতাদের মধ্যে রয়েছে ক্ষোভ, দাম দর নিয়ে বাকবিতন্ডাও ঘটছে ক্রেতা-বিক্রেতাদের মধ্যে। ক্রেতারা বলছেন, এখন নতুন পেঁয়াজ উঠছে ও উঠবে, তাহলে দাম বাড়বে কেন? সেই প্রশ্নে যেনো নেই উত্তর।

ক্রেতা দিনমজুর আলী আকবর, দুলাল ও ইদ্রিস আলী সহ বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ক্রেতা সুমন, অলিভ আল আসাদ, রুবেল হোসেন ও মুদি ব্যবসায়ি নূর নবী বলেন, ১০০-১১০ টাকার পেঁয়াজ এখন খুচরাবাজারে ১৬০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। আমরা গরিব মানুষ। কীভাবে এতো বেশি দামে পেঁয়াজ কিনে খাবো। অন্যান্য মালের দামও যে খুব একটা কমেছে তাওতো না। আলুর দামটাও নাগালের বাইরে।

এবিষয়ে জানতে চাইলে, নগরীর মাস্টারপাড়া এলাকার মেসার্স আরাফাত ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকার মিঠুন সহ অন্যান্য পাইকাররা বলেন, ভারত থেকে পেয়াজ আসবেনা শোনার পর থেকে অধিকাংশ কৃষক নিজেদের বাড়িতে পেয়াজ মজুদ করে রেখেছেন। তাদের সাথে আমাদের মৌখিক বায়না হবার পরেও তারা এখন পূর্বের দামে পেয়াজ দিতে চাচ্ছেনা। পাইকার ব্যবসায়িরা জানান, কৃষকের সাথে বায়নানুযায়ী প্রতি মণ পেয়াজের দর মেটানো ছিল ২৭০০ থেকে ৩০০০ মধ্যে। ভারতের পেয়াজ রপ্তানি বন্ধ থাকার বিষয়টি মিডিয়াতে আসা মাত্রই কৃষকরা ঐ পেয়াজের দাম হাকাচ্ছেন মণ প্রতি ৪৫০০ থেকে ৫২০০ টাকায়। এদিকে খুচরা ব্যবসায়িরা বলছেন পাইকার ব্যবসায়িরা নিজেদের ইচ্ছে মতো দাম বৃদ্ধির মাধ্যমে পকেট ভারি করার ফন্দি আটছেন। আর ক্রেতারা বলছেন, যে পেয়াজ রাতে কিনলাম ৮০ থেকে সর্বোচ্চ ১০০ টাকা কেজিতে। সেই পেয়াজ সকাল হতেই কেজিতে বৃদ্ধি পেলো দ্বিগুণ। এই ত্রিমূখি সিন্ডিকেটকে প্রতিহত করতে না পারলে ক্রেতারা পড়বেন চরম দুর্ভোগে বলে মন্তব্য সচেতন ব্যক্তিদের।

উল্লেখ্য, ভারতের বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফরেন ট্রেডের (ডিজিএফটি) মহাপরিচালক সন্তোষ কুমার সারাঙ্গী স্বাক্ষরিত আদেশে বলা হয়েছে, গত বৃহস্পতিবারের (৭ ডিসেম্বর) আগে যেসব পেঁয়াজ রপ্তানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে সেসব পেঁয়াজ রপ্তানি করা যাবে। এই আদেশ আগামী ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত বাংলাদেশে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ থাকবে বলে ওই আদেশে বলা হয়েছে।

Facebook Comments Box

Posted ৯:১২ অপরাহ্ণ | রবিবার, ১০ ডিসেম্বর ২০২৩

dainikbanglarnabokantha.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

সম্পাদক

রুমাজ্জল হোসেন রুবেল

বাণিজ্যিক কার্যালয় :

১৪, পুরানা পল্টন, দারুস সালাম আর্কেড, ১১ম তলা, রুম নং-১১-এ, ঢাকা-১০০০।

ফোন: ০১৭১২৮৪৫১৭৬, ০১৬১২-৮৪৫১৮৬, ০২ ৪১০৫০৫৯৮

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

design and development by : webnewsdesign.com

nilüfer escort coin master free spins