ইউসুফ আলী চৌধুরী | বুধবার, ৩০ জুন ২০২১ | প্রিন্ট
রাজশাহী জেলা প্রশাসনের আয়োজনে জাকাতের সংগৃহীত অর্থ বিতরণ অনুষ্ঠানে ৫ লাখ ৬৩ হাজার ৮৮৫ টাকা পেলেন ১৩৪ জন হতদরিদ্র, অভাবী ও অক্ষম মুসলিম জনগোষ্ঠী। সোমবার (২৮ জুন) সকাল ১১ টায় জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জাকাতের সংগৃহীত অর্থ বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মুহাম্মদ শরিফুল হক এর সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন, রাজশাহী ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পরিচালক মুহাম্মদ জালাল আহমদ, রাজশাহী মহানগর আ’লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও বিশিষ্ট সমাজসেবী শাহীন আকতার রেণী। জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল জানান, ইসলামি সমাজে জাকাত একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ বণ্টনব্যবস্থা। জাকাত ইসলামের পঞ্চস্তম্ভের অন্যতম ফরজ আর্থিক ইবাদত। আর যাদের সম্পদের সমপরিমাণ অর্থ রয়েছে তাদের জাকাত দেয়া ফরজ। কিন্তু অনেকে জাকাত দিতে চায় না। জাকাত না দেয়ার জন্য অনেকে বিভিন্ন ভাবে মনগড়া মন্তব্য করে, যা ঠিক না। আমরা রাজশাহীতে সিটি কর্পোরেশন সহ ৯ টি উপজেলায় ১৩৪ জনকে যাকাতের আদায়কৃত ৮ লাখ ৫ হাজার ৫৫৫ টাকা থেকে ৫ লাখ ৬৩ হাজার ৮৮৫ টাকা বিতরণ করছি। এর মধ্যে রাজশাহী জেলার ১৩৪ জন মুসলিমের মধ্যে মহানগর এলাকায় ৫৪ জনকে ২ লাখ ৪৭ হাজার ২০৮ টাকা, বাগমারা উপজেলায় ২৪ জনকে ১ লাখ ৪৩ হাজার ৫০০ টাকা, গোদাগাড়ী উপজেলায় ১০ জনকে ৫২ হাজার ৫০০ টাকা, পবা উপজেলায় ৯ জনকে ৪৫ হাজার ৯২০ টাকা, তানোর উপজেলায় ১৭ জনকে ২৮ হাজার ৪২০ টাকা, মোহনপুর উপজেলায় ৭ জনকে ২১ হাজার ১৪০ টাকা, পুঠিয়া উপজেলায় ৫ জনৈ ১৫ হাজার ৪০০ টাকা, চারঘাট ৭ জনকে ৯ হাজার ১০০ টাকা, দূর্গাপুর উপজেলায় ১ জন ১ হাজার টাকার চেক হস্তান্তর করা হচ্ছে। জাকাতের গুরুত্ব ও তাৎপর্য উল্লেখ পূর্বক জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল জানান, ক্ষুধা ও দারিদ্র্য বিশ্বমানবতার জন্য একটি চরম অভিশাপ। তাই ধনী ও দরিদ্রের অর্থনৈতিক বৈষম্য দূরীকরণের লক্ষ্যে ইসলাম কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য আর্থিক সাহায্যের বিধান রেখেছে।
তাই সম্পদ যেন শুধু বিত্তবানদের মধ্যেই পুঞ্জিভুত না থাকে, সে জন্য এতে দরিদ্রের একটা নির্দিষ্ট প্রাপ্য অধিকার নিশ্চিত করে দেয়া হয়েছে। একটি সুখি, সুন্দর ও উন্নত সামাজিক পরিবেশ গঠনে ধনাঢ্য মুসলমানদের অবশ্যই তাদের নিসাব পরিমাণ সম্পদের একটি নির্ধারিত অংশ দরিদ্র ও অভাবগ্রস্ত ব্যক্তিদের দুর্দশা মোচনের জন্য ব্যয় করতে হবে। ফলে অসহায় ও দুস্থ মানবতার কল্যাণই হবে না; বরং সমাজে আয়বণ্টনের ক্ষেত্রেও বৈষম্য হ্রাস পাবে। তিনি আরও জানান, দরিদ্র্য দূরীকরণে জাকাতের মতো আর কোনো অর্থব্যবস্থাই সমাজের সার্বিক হিত সাধন করতে পারে নি। তাই জাকাত হতদরিদ্র, অভাবী ও অক্ষম জনগোষ্ঠীকে সামাজিক নিরাপত্তার নিশ্চয়তা প্রদান করেছে। নবী করিম (সা.) তাঁর জীবনব্যাপি দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য সংগ্রাম করে গেছেন। দারিদ্র্যের কষাঘাতে জর্জরিত আরবদের তিনি অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী জাতি হিসেবে গড়ে তুলেছেন। তাঁর প্রবর্তিত অর্থব্যবস্থার মূল লক্ষ্য ছিল সমাজে সুষম, ভারসাম্যপূর্ণ ও কার্যকরী জাকাতব্যবস্থা প্রচলনের মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচন। তাই জাকাত অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও প্রবৃদ্ধির অন্যতম প্রধান হাতিয়ার বলে জানান তিনি।
বিশিষ্ট সমাজসেবী শাহীন আকতার রেনী বলেন, জাকাত দিলে ধনীদের অর্থ পবিত্র হয়। জাকাতের কথা মনে হলে রমজান মাসের কথা মনে পড়ে যায়। কিন্তু জাকাতের টাকা শুধু রমজান মাসে নয়- বছরের যে কোনো সময় দেয়া যায়। তিনি আরও জানান, বিশ্বজুড়ে প্রতিনিয়ত দারিদ্র্যের থাবা বিস্তৃত হচ্ছে। শুধুমাত্র জাকাতের মাধ্যমে ইসলাম সমাজকে দারিদ্র্যের হাত থেকে উদ্ধার করা সম্ভব। তাই দেশে সুষ্ঠুভাবে জাকাত আদায় ও বণ্টন করে, জাকাত গ্রহীতার স্থায়ীভাবে পুনর্বাসন করতে হবে। তিনি আরও জানান, রাজশাহীতে করোনা মহামারি প্রকোপ আকার ধারণ করেছে। তাই আমাদের সকলকে স্বাস্থ্য বিধি অনুযায়ী সরকারি বিধিনিষেধ মেনে চলতে হবে। তাহলে আমরা করোনা মোকাবেলা করতে সক্ষম হবো বলে জানান তিনি। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মুহাম্মদ শরিফুল হক জানান, যুগ যুগ ধরে যাকাত ধনী ও গরিবের বৈষম্য দূর করণে অন্যতম অনুসঙ্গ। এছাড়াও রাষ্ট্রীয়ভাবে স্থানীয় প্রশাসন, ধর্ম মন্ত্রণালয় ও ইসলামি ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে যাকাতের টাকা বিতরণ করা হয়ে থাকে। তাই রাজশাহী সরকারি যাকাত ফান্ডে আবেদনকারীদের মধ্য থেকে মহানগর এলাকার সুবিধা ভোগকরিদের চেক হস্তান্তর করা হচ্ছে এবং আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের মাধ্যমে ৯ টি উপজেলায় যাকাতের টাকা বিতরণ করা হচ্ছে।
Posted ৪:৪২ অপরাহ্ণ | বুধবার, ৩০ জুন ২০২১
dainikbanglarnabokantha.com | Romazzal Hossain Robel
এ বিভাগের আরও খবর
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।