নিজস্ব প্রতিনিধি : | মঙ্গলবার, ২৭ জুলাই ২০২১ | প্রিন্ট
যুদ্ধাপরাধীর মামলার আসামী সোহরাব উদ্দিনকে আহবায়ক করায় এবার পাকুন্দিয়ায় মুক্তিযোদ্ধারা প্রতিবাদ সমাবেশ ও বিক্ষোভ কর্মসূচী পালর করেছে। গত বৃহষ্পতিবার (২২ জুলাই) সন্ধ্যায় জেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির এক সভায় যুদ্ধাপরাধী মামলায় অভিযুক্ত এ্যাড. সোহরাব উদ্দিনকে পাকুন্দিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের আহবায়ক ঘোষণা করা হয়। এরপরই শুরু হয় বিভিন্ন কর্মসূচী। এরই ধারাবাহিকতায় সোমবার (২৬ জুলাই) দুপুরে পাকুন্দিয়া উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের উদ্যোগে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কার্যালয়ের সামনে এক প্রতিবাদ সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিবাদ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন পাকুন্দিয়া উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের সাবেক কমান্ডার মেজবাহ উদ্দিন। বক্তারা বলেন, যুদ্ধাপরাধীর মামলার আসামী এ্যাড. সোহরাব উদ্দিনকে আহবায়ক করে পাকুন্দিয়া উপজেলা আহবায়ক কমিটি একক নাম ঘোষণা করায় মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। ক্ষোভের বর্হিপ্রকাশ হিসেবে বয়োবৃদ্ধ মুক্তিযোদ্ধাগণ ৭১’র দিনের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, আমরা তখন পালিয়ে থেকে যুদ্ধ করেছি যে শত্রুর বিরুদ্ধে। তখন সে শত্রুদের পৃষ্ঠপোষক ছিল পাকিস্তান। বর্তমানে তাকে আহবায়ক ঘোষণা করায় ৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের পর আবার মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে মুখোমুখি হচ্ছে তৎকালীন স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি। আমাদের প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রশ্ন বর্তমান প্রজন্মের আওয়ামী লীগের বিরোধী শক্তিকে আহবায়ক করে কমিটি ঘোষণা করে কে বা কারা পৃষ্ঠপোষকতা করছেন তা জানার খুব ইচ্ছা হয়। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন অচিরেই যুদ্ধাপরাধী মামলার আসামীকে আহবায়ক থেকে বহিষ্কার করে পাকুন্দিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগকে কলঙ্ক মুক্ত করুন। তার পরিবারে এবং তার বংশে কোনদিন নৌকায় ভোট দেয়নি। ৯১, ৯৬ সালে নৌকার পোস্টার ছেড়া তাদের কাজ ছিল। আজ তারাই নৌকার জন্য জীবন বাজি রাখার সৈনিকদের বিরুদ্ধে মাঠে নামতে চায়। বয়স ৭০ পার হলেও এইসব যুদ্ধাপরাধীর বিরুদ্ধে আমরা মুক্তিযোদ্ধারা আবার রক্ত দিতে প্রস্তুত। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা মাস্টার আলী, বীর মুক্তিযোদ্ধা জুবেদ আলী, বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী, বীর মুক্তিযোদ্ধা তাহের মাস্টার, বীর মুক্তিযোদ্ধা আঃ রহমান, বীর মুক্তিযোদ্ধা গেনু মাস্টার, পাকুন্দিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক মোতায়েম হোসেন স্বপন, পাকুন্দিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট মোঃ হুমায়ুন, জেলা শ্রমিক লীগের উপদেষ্টা আতাউল্লাহ সিদ্দিক মাসুদ, উপজেলা কৃষক লীগের সাবেক সভাপতি বাবুল আহমেদ প্রমুখ। উল্লেখ্য পাকুন্দিয়া উপজেলার হোসেন্দী ইউনিয়নের আউলিয়াপাড়া গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী বাদী হয়ে সাবেক সংসদ সদস্য সোহরাব উদ্দিনকে আসামী করে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত নং-৩, কিশোরগঞ্জে মানবতাবিরোধী অপরাধের একটি মামলা দায়ের করেন। মামলাটিতে ২০জন সাক্ষী রয়েছেন। তিনি মামলায় ৪টি ঘটনার কথা উল্লেখ করেন। মামলাটি তদন্তনাধীন রয়েছে। মামলার বিবরণীতে বলা হয়, সোহরাব উদ্দিন একজন রাজাকার ও যুদ্ধাপরাধী এবং স্বাধীনতাবিরোধী পরিবারের সন্তান। তিনি তৎকালীন পাটুয়াভাঙ্গা ইউনিয়ন ইসলামী ছাত্র সংঘের সহ-সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। সাবেক সাংসদের আপন চাচা মোহাম্মদ আলী ছিলেন পাটুয়াভাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের তৎকালীন চেয়ারম্যান। তিনি মুক্তিযুদ্ধের সময় তার ভাতিজা সোহরাব উদ্দিনকে সঙ্গে নিয়ে কিশোরগঞ্জ শহরের আতরজান উচ্চ বিদ্যালয়ে স্থাপিত রাজাকার ক্যাম্পে থাকতেন। ওই সময় মোহাম্মদ আলীর নির্দেশে সোহরাব উদ্দিন পাটুয়াভাঙ্গা এলাকায় বিভিন্ন গ্রাম থেকে যুবক ছেলেদের প্ররোচনা ও প্রলোভন দিয়ে কৌশলে আতরজান উচ্চ বিদ্যালয়ে রাজাকার ক্যাম্পে নিয়ে যেতেন। পরে সেখান থেকে ওই লোকদের প্রশিক্ষণ করিয়ে এলাকায় নিয়ে সোহরাব উদ্দিন রাজকারদের উসকানি দিয়ে হিন্দু বাড়ি ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের বাড়িসহ বিভিন্ন হাটবাজারে অগ্নিসংযোগ, লুটতরাজ, গণহত্যা ও নারী নিযার্তনের মত মানবতাবিরোধী অপরাধ করেন।
Posted ১:৫৩ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ২৭ জুলাই ২০২১
dainikbanglarnabokantha.com | Romazzal Hossain Robel
এ বিভাগের আরও খবর
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।