| বৃহস্পতিবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২০ | প্রিন্ট
নূরুদ্দীন দরজী:
বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের গভীর ও অকৃত্রিম ভালোবাসার কথা কে না জানে। বাংলাদেশের মানুষের জন্য তাঁর ভালবাসা ছিল অফুরন্ত। তাঁর ভালবাসার কথা কোন বাঙালি কোন দিনই অস্বীকার করতে পারেনা , পারবেন ও না। এমন কোন একজন বাঙালির মুখে ও কোন দিন এর অস্বীকার শোনা যায়নি। পক্ষ বিপক্ষ এবং দলমত নির্বিশেষে বঙ্গবন্ধুর উদার ভালবাসায় সবাই মুগ্ধ ছিল এবং আছে।
প্রেম ও ভালোবাসা মানব মনের লালিত এক অদৃশ্য বস্তু। একমাত্র মানুষই কেবল হৃদয় দিয়ে , আবেগ দিয়ে তাদের ভালোবাসা প্রকাশ করতে পারে। মানুষের এ ভালবাসা প্রকাশ পায় নিত্যদিন তার কর্মে আচরণে। ভালোবাসা যদি না থাকতো এ বিশ্ব ব্রম্মান্ডে কোন কিছুরই অস্থিত্ব থাকতো না। মায়া, মমতা শ্রদ্ধাভক্তি আছে বলেই আজকের পৃথিবী এত সুন্দর। আমার আলোচ্য বিষয় বঙ্গবন্ধুর অতুলনীয় ভালবাসা। যার ভালবাসা সীমাহীন আকাশের , গভীর সমুদ্রের বিশালতার চেয়েও বিশাল। বলতে দ্বিধা নেই যে, একমাত্র তিনিই বোধ হয় বেশি জানতেন কিভাবে মানুষকে ভালবাসতে হয়। বিদেশি একজন প্রখ্যাত সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তরে বঙ্গবন্ধু বলেছেন, তাঁর সবল দিক হচ্ছে তিনি বাংলাদেশের মানুষকে ভালবাসেন। পরের প্রশ্নের উত্তরে বলেন, তাঁর দর্বলতা হচ্ছে- তিনি এ দেশের মানুষকে অনেক বেশি ভালবাসেন। তাঁর ভালবাসার গভীরতা বিচার করলেই বুঝা যায় তিনি কেন হাজারো বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি। এ হাজার বছরে বা তার আগে তাঁর চেয়ে বাঙালি জাতির জন্য অন্য কারো বেশি ভালবাসার কথা কেউ জানেন না এবং শুনেনি। আর এ জন্যই তিনি হাজারো বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি। মহান বাঙালি জাতির মহান পিতা।
বঙ্গবন্ধুর এ ভালবাসার কারণেই আমরা পেয়েছি স্বাধীনতা, স্বাধীন সার্বভৌম ভূখণ্ড,লাল সবুজের পতাকা ও মধুময় জাতীয় সঙ্গীত। বাঙালি ফিরে পেয়েছে হারিয়ে যাওয়া আত্মপরিচয়। বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতির মহাকাব্যের অমরবীণা। তিনিই দেখিয়েছেন আমাদের মুক্তির পথ। শিখিয়েছেন কিভাবে সংগ্ৰাম করতে হয়। সমগ্ৰ বাঙালি জাতির অবিচল আস্থা ও ভরসায় শুধুই তিনি।
স্বাধীন সার্বভৌম দেশ যখন বিভিন্ন প্রতিকূলতা অতিক্রম করে বঙ্গবন্ধুর হাত ধরে এগিয়ে যাচ্ছিল -ঠিক তখনই ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্টের কালো রাতে গুটি কয়েক পাপিষ্ট নরাধম তাঁকে পরিবারবর্গ সহ নির্মম ভাবে হত্যা করে। বাঙালি জাতির এ সমস্ত শত্রুরা চেয়েছিল মানুষের ভালবাসা থেকে তাঁকে দূরে, বহুদূরে সরিয়ে দিতে। কিন্তু তা তারা পারেনি । শতভাগ ব্যর্থ হয়েছে। স্বার্থ বিহীন ভালবাসা কখনো বিফলে যায়না। শকুনের দল তাঁকে মুছে দেওয়ার জন্য কুখ্যাত ইনডেমনিটি আইন ও করেছিল। কিন্তু বাংলার আপামর জনগণের ভালবাসায় বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে তাঁর হাত ধরে চিরতরে বিলুপ্ত হয় সে জগন্য আইন। খুনিচক্রকে বিচারের সম্মুখীন করে আদালতের ন্যার্য রায়ে আসে বেঈমানদের ফাঁসির আদেশ। কুচক্রীদের স্বপ্নসৌধ চূরমার হয়ে জয় হয় বাংলার মানুষের। জয় হয় বঙ্গবন্ধুর ভালবাসার।
১৯২০ সালের ১৭ মার্চ স্থোতধারা নদী মধুমতি তীরঘেঁষা গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ার পূর্বাকাশে উদিত হয়েছিল যে রবি,সে রবিই বঙ্গবন্ধু নামে বাংলার রবি। এ রবি উদিত হয়েছিল কেবলই বাঙালি জাতির গ্লানি চিরতরে মুছে দিতে। এনে দিতে বাংলার মানুষের জন্য স্বাধীনতা ও সুন্দর একটি স্বপ্নের দেশ। বাংলার মানুষ কি পারবে কোনদিন তাঁকে ভুলে যেতে ? বঙ্গবন্ধুর ভালবাসায় সিক্ত মানুষ তাঁর প্রতিদান দিতে পারবেনা কোনদিন। বঙ্গবন্ধুর এমন ভালবাসা অমর। বাংলার সকল দিগন্তে তিনি উজ্জ্বল , ঝলমল করা সূর্য ও স্নিগ্ধ চাঁদের আলো। এ আকাশে বঙ্গবন্ধুর চেয়ে সুন্দর আর কিছুই নেই যিনি শুধু তাঁরই বিকল্প।
দ্বিতীয় সর্বশ্রেষ্ট বাঙালি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ২৩তম শ্রেষ্ট বাঙালি শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের মৃত্যু সংবাদে কবিতা লিখে বলেছিলেন, ‘যাহার অমর স্থান প্রেমের আসনে , ক্ষতি তাঁর ক্ষতি নয় মৃত্যুর শাসনে। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধুর জন্য কবিগুরু কি লিখতেন সে কথা ভেবেই মারাত্মক ভাবে রোমাঞ্চিত হয়ে পড়ি। কবি আক্ষেপ করে তার বঙ্গমাতা কবিতায় লিখেন,’সাতকোটি সন্তানের হে মুগ্ধ জননী, রেখেছ বাঙালি করে মানুষ করনি।
কবিগুরুর এ কবিতার উত্তর বঙ্গবন্ধু দিয়ে গেছেন , সোনার বাংলাকে স্বাধীন করে। তিনি বলেছিলেন, হে কবি তোমার কথা আমি ব্যর্থ করে দিয়েছি।
বঙ্গবন্ধুর জন্ম শত বার্ষিকী মুজিব বর্ষের সোজন্যে ক্ষুদ্র এ লেখাটি।
লেখক: কলামিস্ট ও সাবেক উপজেলা শিক্ষা অফিসার (টিইও)
Posted ৮:৫৩ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২০
dainikbanglarnabokantha.com | Romazzal Hossain Robel
এ বিভাগের আরও খবর
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।