টি.এম.এ হাসান, সিরাজগঞ্জ: | শনিবার, ২৯ মে ২০২১ | প্রিন্ট
সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া (সদর) ৩০শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে বিদ্যুৎ চলে গেলেই মোমবাতি ও মোবাইলের আলোতে চলে চিকিৎসা সেবা। না চলে বাতি, না ঘোরে ফ্যান। পুরো হাসপাতাল জুড়ে নেমে আসে ঘন কালো আমাবস্যা। আর এতে যেমন দূর্ভোগ সহ্য করেন রোগি ও তার স্বজনেরা তেমনি অবহেলার অভিযোগ হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ফিরোজ হোসেন তালুকদারের বিরুদ্ধে। তার উদাসীনতা ও স্বেচ্ছাচারিতাকেই দায়ী করছেন সবাই। একদিকে হাসপাতালের নেই নিজস্ব বৈদ্যতিক সিস্টেম অন্যদিকে এমনকি মাত্র পঞ্চাশ টাকার একটা ছকেটের অভাবে চালু করা হচ্ছেনা অন্যের দেয়া একটি আইপিএস (Instant power supply)। শুধু তাই নয়, আবাসিক মেডিকেল অফিসারের উদাসীনতা ও স্বেচ্ছাচারিতায় বিদ্যুৎ থাকলেও জ্বলেনা হাসপাতাল ভবনের সামনের আলো সহ অসংখ্য আলোক বাতি। যার ফলে রাত আসলেই বোঝার উপায় নেই এটি হাসপাতাল নাকি অন্য কিছু। সরেজমিনে উল্লাপাড়া সদর ৩০শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে গিয়ে জানা যায়, হাসপাতালে বিদ্যুৎ চলে গেলে আলো বা ফ্যানের কোনো বিকল্প ব্যাবস্থা না থাকায় স্থানীয় একজন ব্যাবসায়ী নিজ তহবিল থেকে ৪-৫মাস পূর্বে হাসপাতাল ও রোগীদের সুবিধার্থে একটি আইপিএস প্রদান করেন। সেটি কয়েকদিন চলার পরে কিছু ত্রুটির কারণে বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু বিগত প্রায় ৫মাস হলো আইপিএস টি বন্ধ থাকায় বিদ্যুৎ চলে গেলে হাসপাতাল অন্ধকার থাকলেও আবাসিক মেডিকেল অফিসারের অসহযোগিতা ও অবহেলায় সেটি আর ঠিক করা হয়নি। জানা যায়, মাত্র পঞ্চাশ টাকার একটি ছকেটের অভাবে আইপিএস টি অকেজো হয়ে পড়ে আছে। আর কতৃপক্ষের এই অবহেলায় এর ভোগান্তি ও অসহ্য কষ্ট ভোগ করছে উপজেলার হাজার হাজার রোগী ও সেবা প্রার্থীরা। হাসপাতালের স্টোর কিপার কিবরিয়া বলেন, আইপিএস টির কিছু সমস্যা থাকলেও আমি নিজে এটি ঠিক করে এনেছি।
এখন শুধু মাত্র পঞ্চাশ টাকা মূল্যের একটি ছকেট লাগালেই চলবে। আমি বিষয়টি কতৃপক্ষকে একাধিকবার বললেও আজ অবধি কোনও সমাধান মেলেনি। হাসপাতালে আইপিএস প্রদানকারী ব্যাবসায়ী মো. শাহিদুল ইসলাম বলেন, আমার যেহেতু হাসপাতালের পাশেই বাড়ি তাই বিদ্যুৎ না থাকলে রোগীদের কষ্ট ও হাসপাতালের ভোগান্তি খুব ভালো করেই জানি। তাই নিজে একটি আইপিএস দিয়েছিলাম কিন্তু আবাসিক মেডিকেল অফিসারের অবহেলা ও স্বেচ্ছাচারিতায় সেটিও আর চলেনা। খুব দুঃখ জনক হলেও সত্য যে শুধু মাত্র তার অবহেলায় আজও হাসপাতালটি অন্ধকারে থাকে, রোগীরা থাকে দূর্ভোগে। পুরুষ ও নারী ওয়ার্ডের একাধিক রোগী বলেন, দিনে বিদ্যুৎ গেলে তবু শুধু গরমে কষ্ট হয় কিন্তু রাতে যখন বিদ্যুৎ যায় তখন মোবাইলের ও মোমবাতির আলোই হয় শেষ ভরসা।
একটা অজানা আতংকও এসময় কাজ করে বলে জানান তারা। হাসপাতালে স্বাস্থ্যসেবায় দায়িত্বে থাকা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সেবিকা বলেন, রাতে বিদ্যুৎ চলে গেলে রোগীরা মোমবাতি জ্বালায় আর আমরা মোবাইলের আলোতে চিকিৎসা সেবা দেই। কিন্তু এর বেশি কিছু বলতে রাজি হননি তিনি। তবে এবিষয় নিয়ে উল্লাপাড়া (সদর) ৩০শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আর.এম.ও) ডাঃ মো. ফিরোজ হোসেন তালুকদারের সঙ্গে কথা বললে তার দায়িত্বহীনতা, স্বেচ্ছাচারিতা ও উদাসীনতার ব্যাপারটি পরিষ্কার হয়ে যায়। তিনি বলেন, আইপিএসটি অনেকদিন হলো নষ্ট হয়ে থাকায় এই দূর্ভোগ। আইপিএসটি সারাতে অনেক টাকার দরকার ও অনেক ঝামেলা তাই ঠিক করানো হচ্ছেনা। তবে তার স্টাফ কিবরিয়ার বক্তব্য শুধু একটি ছকেট হলেই ঠিক হয়ে যাবে এটি বললে তিনি যে আসলে হাসপাতালের কিছুই জানেননা ও সম্পুর্ন উদাসীন ও স্বেচ্ছাচারিতা মতো হাসপাতালটি চালান সেই বিষয়টি সামনে চলে আসে। তখন তিনি আর এবিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি।
সিরাজগঞ্জের সিভিল সার্জন ডাঃ রাম পদ রায় ছুটিতে থাকায় তার অবর্তমানে দায়িত্বে থাকা সিভিল সার্জন অফিসের মেডিকেল অফিসার ডাঃ সৌমিত্র বসাক বলেন, আমি বিষোয়টি জানতাম না তবে আপনার কাছ থেকেই জানলাম। এখন আইপিএসটি ঠিক করানোর ব্যাবস্থা করছি ও প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা নিচ্ছি।
Posted ১২:৩১ অপরাহ্ণ | শনিবার, ২৯ মে ২০২১
dainikbanglarnabokantha.com | Romazzal Hossain Robel
এ বিভাগের আরও খবর
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।