মোঃ তোফাজ্জল হোসেন, মোহনপুর, রাজশাহী | শুক্রবার, ৩০ জুলাই ২০২১ | প্রিন্ট
রাজশাহীর মোহনপুরে রাস্তা-ঘাটে হাট বাজারের প্রায় সবার পকেটেই মাস্ক আছে। প্রশাসনের গাড়ি বা পুলিশ দেখামাত্রই মুখে দেন মাস্ক। আবার প্রশাসন চলে মুখ থেকে মাস্ক খুলে রাখেন পকেটে। এমন দৃশ্য দেখে গেছে উপজেলার কেশরহাট, একদিলতলা ও পাকুড়িয়া হাট-বাজারে।করোনা নিয়ে রাজশাহীর মোহনপুরে গ্রামের মানুষের সুর পাল্টেছে। এখন তাঁরা মনে করছেন, গ্রামের মানুষেরও করোনা হয়। তাঁদের কাছে এখন মাস্ক পাওয়া যাচ্ছে। যদিও সেই মাস্ক তাঁরা মুখে না পরে রাখেন পকেটে। পুলিশ দেখলেই মুখে লাগান মাস্ক। করোনায় এখন গ্রামের মানুষও মারা যাচ্ছেন। হাসপাতালে গ্রামের রোগীই এখন বেশি। এই বাস্তবতায় গ্রামের মানুষের মনোভাবে এ পরিবর্তন এসেছে। তবে খেটে খাওয়া গরিব মানুষের অনেকেই আগের মতোই বলছেন, তাঁদের করোনা হবে না। তাঁরা খোলা মাঠে রোদে কাজ করেন। তাঁদের শরীর থেকে ঘাম ঝরে।গত বুধবার রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলার তিনটি হাটে ও বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে সব ধরনের মানুষের সঙ্গে কথা বলে করোনা নিয়ে তাঁদের পরিবর্তিত ভাবনার এই চিত্র পাওয়া গেছে।মোহনপুর উপজেলার একদিলতলা হাটবার ছিল বুধবার।
সকালে এই হাটে ঢুকতেই দেখা যায়, হাটের পশ্চিম সারিতে ৫ থেকে ৭ জন মুচি বসে আছেন। তাঁদের কারও মুখেই মাস্ক নেই। উপজেলার সইপাড়া গ্রামের একজন মুচিকে মাস্কের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করতেই তিনি ভয় পেয়ে বলেন, রাস্তায় আসার সময় মাস্ক পড়ে গেছে। আর তোলা হয়নি। তারপর যখন বুঝলেন সঙ্গে পুলিশ নেই। তখনই ঠোঁট উল্টে বললেন, ‘করোনা নাই, ভালোই তো আছি। অসুখ–বিসুখ নাই।’একদিলতলা হাটে মাস্ক ছাড়াই ফল বিক্রি করছিলেন জনৈক এক ব্যক্তি। মাস্কের কথা জানতে চাইলে সঙ্গে সঙ্গে বলেন, ‘একটা দেন।’ নাম জানতে চাইলে বলেন, ‘কয়জনের নাম লিখবেন। তাকায়ে দেখেন হাটে কারও মুখে মাস্ক নাই। আর আমাদের কথা লিখে কী করবেন? বড়লোকদের কথা লেখেন। আমরা ব্যবসা করে খাচ্ছ।’উপজেলার সবচেয়ে বড় হাট কেশরহাট। বিকেলে এই হাটে গিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন পণ্য গাড়িতে তোলা এই নিয়ে হাটুরেদের ভীষণ ব্যস্ততা। কারও মুখেই মাস্ক নেই। দু-একজনের মুখে মাস্ক দেখা গেলেও তা থুতনির নিচে নামানো ছিল। খোঁজ করতেই পাওয়া গেল হাটের একজন ইজারাদারকে। তাঁর মুখেও মাস্ক নেই। করোনার প্রসঙ্গ তুলতেই তিনি পকেট থেকে মাস্ক বের করে মুখে পরে বললেন, করোনার ব্যাপারে অবহেলার কোনো সুযোগ নেই। এখন গ্রামেগঞ্জে করোনা ছড়িয়ে পড়ছে।
তিনি হাটের ব্যাপারীদের উদ্দেশে হাঁক দিয়ে বললেন, ‘এই সবাই মাস্ক পরো।’উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে গিয়ে সাধারণ মানুষের সাথে কথা বলে জানা গেছে, তাদের ধারণা ছিল করোনা গ্রামে আসবে না। শহরের মানুষের হবে। এখন গ্রামেও করোনা ছড়িয়ে পড়ছে। গ্রামের মানুষের মধ্যেও করোনার আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। তাহলে কারও মুখে মাস্ক নেই কেন, জানতে চাইলে তারা বলেন, গরিব মানুষ পেটের দায়ে কাজ করছেন। তাঁরা মাস্কের ব্যবস্থা করতে পারছেন না। তবে তাদের মধ্যে জাহিদ হোসেন নামের এক যুবক বললেন, অন্য কথা। তিনি বললেন, গ্রামের মানুষের করোনার কোনো ভয় নেই। ভয় শুধু পুলিশকে। পুলিশ এলে সবাই পালান।মোহনপুর উপজেলার বেলনা গ্রামের মাঠে জমিতে কাজ করছেন মালিকসহ কয়েকজন শ্রমিক। মালিক বলেন, ‘আমরা করোনার ব্যাপারে খুবই সচেতন। আমাদের গ্রামে কোনো করোনা নেই।’উপজেলার কামারপাড়া মোড়ে একটি চায়ের দোকানে বেশ কয়েকজন লোক বসেছিলেন। তাঁদের কারও মুখেই মাস্ক ছিল না। করোনার প্রসঙ্গ তুলতেই ৩ থেকে ৪ জন ব্যক্তি পকেট থেকে মাস্ক বের করে পরলেন। তবে গোলাম মোস্তফা নামের এক ব্যক্তি বললেন, জামা বদল করার সময় মাস্ক ওই জামায় থেকে গেছে। আনতে খেয়াল নেই।উপজেলার কেশরহাট পৌরসভার নাকইল গ্রামের ভেতর দিয়ে একটি ভ্যানে ছয়জন দিন মজুর যাচ্ছিলেন। তাঁদের একজনের মুখে মাস্ক ছিল, কিন্তু থুতনিতে নামানো। বাকিদের ছিল না। ভ্যানের চালক তিনি নিজের নাম না বলে বললেন, ‘আমরা অত বুঝি না। ধান লাগানোর কাজ করতে গিছিলাম। কেশরহাট বাজারের রাস্তায় মাস্ক পরে ছিলাম। গ্রামের রাস্তায় নামার পর মাস্ক খুলে রেখেছি।’উপজেলার খাড়তা-মোল্লাডাঙ্গী গ্রামে তিনজন নারীকে এক সাথে পাওয়া গেল। তাঁরা জ্বালানির খোঁজে বের হয়েছেন। বাঁশের লম্বা লাঠি দিয়ে গাছের মরা ডাল ভাঙছেন। করোনার প্রসঙ্গ তুলতেই তাঁদের একজন ঝাঁজালো গলায় বললেন, ‘আমাদের করোনা হবে না। যাদের হচ্ছে। তারা এসি রুমে থাকে। আমরা মাঠে কাজ করি। আমাদের গা দিয়ে ঘাম ঝরে। আমরা এ জন্য মাস্কও ব্যবহার করতে পারি না।’ পাশ থেকে আরেকজন নারী বলে উঠলেন, ‘আমার কাছে মাস্ক আছে। হাটে–বাজারে গেলে পরে যাই।’মোহনপুর উপজেলা নিবাহী অফিসার (ইউএনও) সানওয়ার হোসেন বলেন, মানুষকে করোনার বিষয়ে সচেতন করার জন্য নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছেন। কিন্তু মানুষ নিজেরা সচেতন না হলে শুধু জরিমানা করে করোনা ঠেকানো যাবে না। তিনি বলেন, গ্রামের অনেক মানুষ মাস্ক পরচ্ছেন।
Posted ৭:৩০ অপরাহ্ণ | শুক্রবার, ৩০ জুলাই ২০২১
dainikbanglarnabokantha.com | Romazzal Hossain Robel
এ বিভাগের আরও খবর
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।