• শিরোনাম

    মানিকগঞ্জ-২ নৌকার মাঝি পরিবর্তন না হলে বিদ্রোহী হওয়ার সম্ভবনা

    মোস্তাক আহম্মেদ সিংগাইর (মানিকগঞ্জ) প্রতিনিধি : বৃহস্পতিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৩

    মানিকগঞ্জ-২ নৌকার মাঝি পরিবর্তন না হলে বিদ্রোহী হওয়ার সম্ভবনা

    apps

    আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সন্নিকটে। মানিকগঞ্জ-২ (সিংগাইর-হরিরামপুর-সদরের আংশিক) আসনের সংসদ সদস্য কণ্ঠশিল্পী মমতাজ বেগম বিভিন্ন বিতর্কিত কর্মকান্ডে সমালোচিত। তার কাছ থেকে সরে গেছেন আওয়ামীলীগ মনোনীত বেশির ভাগ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান। সংসদীয় এ আসনের দুই উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মমতাজের বিরুদ্ধে নির্বাচনের আগেই বিদ্রোহ ঘোষণা করেছেন। জেলা-উপজেলা পর্যায়ের দায়িত্বশীল নেতারাও প্রকাশ্যে মমতাজের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। ফলে ,এ আসনে নৌকার প্রার্থী পরিবর্তন না হলে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে।

    ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনে মহাজোটের প্রার্থী জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য এস এম আব্দুল মান্নান লাঙ্গল প্রতীকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। নৌকার মনোনয়ন পেয়েও আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক দেওয়ান সফিউল আরেফিন টুটুল জোটের কারণে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান।

    আওয়ামীলীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর সংরক্ষিত নারী আসনে সংসদ সদস্য হন কণ্ঠশিল্পী মমতাজ বেগম। এর পর তিনি সিংগাইর উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতির পদ বাগিয়ে নেন। টানা তিনবারের কেন্দ্রীয় কমিটিতে থাকা দেওয়ান সফিউল আরেফিন টুটুল বাদ পড়ায় স্থানীয় রাজনীতিতে মমতাজ একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করেন। টুটুল অনুসারী আওয়ামীলীগের ত্যাগী নেতারা দলের গুরুত্বপুর্ণ দায়িত্বশীল পদ থেক ছিঁটকে পড়েন। এছাড়া দলীয় কর্মসূচী পালন করতে গিয়েও পুলিশী হয়রানির শিকার হন টুটুল অনুসারীরা।

    টানা ১৫ বছর ক্ষমতায় দেশের শীর্ষ রাজনৈতিক দল আওয়ামীলীগ। ২০১৪ সালে হেভিওয়েট প্রার্থী হিসেবে দেওয়ান সফিউল আরেফিন টুটুল তৃণমূলে আলোচনায় থাকলেও তার স্থলে মনোনয়ন পান ফোক সম্রাজ্ঞী মমতাজ বেগম। তিনি ওই সময় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০১৮ সালেও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের মনোয়ন পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

    এ আসনে আগামী নির্বাচনেকে সামনে রেখে আওয়ামীলীগের একাধিক প্রার্থী মাঠে কাজ করছেন। বর্তমান সংসদ সদস্য মমতাজের বিতর্কিত কর্মকান্ডের সুযোগ নিচ্ছেন তারা। এর মধ্যে সংসদীয় এলাকার হরিরামপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়মীলীগের ত্রান ও সমাজকল্যান বিষয়ক সম্পাদক দেওয়ান সায়েদুর রহমানের বালু ব্যবসা নিয়ে ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়া ও একাধিক মামলা হামলার ঘটনা ঘটে। এক পর্যায়ে নৌকা মার্কায় নির্বাচিত এ উপজেলা চেয়ারম্যান সংবাদ সম্মেলন করে নিজের জীবনের নিরাপত্তা চান। এমপির বিরুদ্ধে তার জানমালের ক্ষয় ক্ষতির জন্য আশংকাও করেন তিনি। ঝিটকা হাইস্কুলের ম্যানেজিং কমিটি নির্বাচনে দ্বন্দ্বের জের ধরে এমপি অনুসারীদের হাতে মারধরের শিকার হন উপজেলা চেয়ারম্যানের সমর্থকরা। এ প্রসঙ্গে দেওয়ান সায়েদুর রহমান বলেন, এ আসন থেকে মমতাজ বেগম এমপি বাদে যে কেউ মনোনয়ন পাক, আমি তার হয়ে কাজ করবো।

    মমতাজ বেগমের স্বামী ডা. এ,এস.এম মঈন হাসান চঞ্চল গত বছরের ২৩ আগস্ট পারিবারিক কলহের জের ধরে ধল্লা ইউনিয়নের বাস্তা এলাকায় হামলার শিকার হন স্ত্রীর অনুসারীদের হাতে। বিচার না পেয়ে এক বছর পর গত ২৩ আগস্ট নিজের ফেসবুক আইডিতে আবেগঘন স্ট্যাটাস দেন। সেখানে ডা, মঈন আহত হওয়া নিজের ছবি , গাড়ি ভাঙচুরের ছবি ও অভিযুক্ত হামলাকারী আকাশ আহমেদ নয়নের সাথে মমতাজের ছবি পোস্ট করেন। হামলাকারী নয়ন সিংগাইর উপজেলার ধল্লা ইউনিয়নের গাজিন্দা বড় পাড়া গ্রামে কেন্দ্রিয় জেপি নেতা সালাম বাহাদুর হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে পলাতক রয়েছে। চাঞ্চল্যকর এ হত্যা মামলায় এমপির অনুসারী নয়ন আসামি হওয়ায় এলাকায় বিতর্কের মধ্যে পড়েন তিনি।

    এদিকে. গত সিংগাইর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নৌকা মার্কার প্রার্থী বিদ্রোহী প্রার্থীর কাছে প্রায় ৩০ হাজার ভোটে পরাজিত হন। দুইবার জেলা পরিষদ নির্বাচনে দলের মনোনীত প্রার্থী মানিকগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি অ্যাড. গোলাম মহিউদ্দিন সাত উপজেলার ভোটের ফলাফলে পাশ করলেও মমতাজের উপজেলায় ভরাডুবি ঘটে। ফলাফল বিপর্যের কারণে অনেকটাই ক্ষুব্ধ দলের এ বর্ষীয়ান নেতা। জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি গোলাম মহিউদ্দিন দলের অপর মনোনয়ন প্রত্যাশী দেওয়ান জাহিদ আহমেদ টুলুর পক্ষে রাজনৈতিক সভা-সমাবেশে বক্তব্য দিচ্ছেন। যা নেট দুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে।

    এছাড়া সিংগাইর উপজেলা আওয়ামীলীগের কমিটি নিয়ে ওঠেছে নানান প্রশ্ন। সম্মেলনে সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও যুগ্ন সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণার এক বছর পর গত ৩০ জুলাই ঘোষিত পুর্নাঙ্গ কমিটিতে স্থান পায় পিতা-পুত্র, জামাই-শশুর, চাচা-ভাতিজা, মামা-ভাগ্নে ও আপন দুই ভাই। জেলা আওয়ামীলীগের দায়িত্বশীল পদে থাকা এক নেতা পেয়েছেন উপজেলা কমিটিতেও গুরুত্বপূর্ণ পদ। বহিস্কৃতরাও রয়েছেন কমিটিতে । নতুন এ কমিটির অনেকেই নেই মমতাজের সাথে। মমতাজ বেগম সংসদ সদস্য হওয়ার পর গত দুই মেয়াদে রয়েছেন সিংগাইর উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি। এবার উপজেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতির পদ পেয়েছে কানাডায় অধ্যয়নরত তার ছোট মেয়ে রাইসা রোজ ও জয়মন্টপ ইউনিয়ন ছাত্রলীগ সভাপতি পদে রয়েছে আপন বড় ভাই এবারত হোসেনের ছেলে ফিরোজ কবির।
    অপরদিকে, প্রতিবেশি দেশ ভারতে শক্তি শংকর নামের এক ইভেন্ট অর্গানাইজারের প্রতারণা মামলায় সেখানকার আদালত একাধিকবার গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন মমতাজের বিরুদ্ধে। নিম্ন আদালত থেকে মমতাজ বেগম জামিন নিলেও উচ্চ আদালতে আপীল করেন মামলার বাদি। সর্বশেষ গত ১১ অক্টোবর কলকাতার হাইকোর্টের বিচারক তীর্থস্কর ঘোষ এ মামলায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বাংলাদেশ ডেপুটি হাই কমিশনকে রিপোর্ট তলব করেন। বিষয়টি নিয়ে বহিবির্শে^ সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে।

    মানিকগঞ্জ-২ আসনে মমতাজ বেগম এমপি, সাবেক কেন্দ্রিয় নেতা দেওয়ান সফিউল আরেফিন টুটুল, জেলা আওয়ামীলীগের কোষাধ্যক্ষ দেওয়ান জাহিদ আহমেদ টুলু ছাড়াও সিংগাইর উপজেলা চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা মুশফিকুর রহমান খান হান্নান, হাটিপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম মনির হোসেন ও ইঞ্জিনিয়ার সালাম চৌধুরী মনোনয়ন প্রতিযোগিতায় জোর লবিং করছেন। তবে এ আসনে আওয়ামীলীগের একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশীরা জানান , সারা দেশে যে পরিমাণ উন্নয়ন হয়েছে সেই হিসেবে এ এলাকায় কিছুই হয়নি। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য, ভাষা শহীদ রফিক সেতুর টোল মুক্ত না হওয়া, করা হয়নি মডেল মসজিদ নির্মাণ, প্রসস্থকরণের নামে হেমায়েতপুর-সিংগাইর-মানিকগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কের দুই পাশে গাছগুলো কেটে ফেলায় প্রতিনিয়ত সড়ক দুর্ঘটনায় ঘটছে সম্পদসহ প্রাণহানি। সড়কটি এখন মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে। মনোনয়ন প্রত্যাশীরা আরো বলেন, নৌকার মাঝি পবিবর্তন না হলে একাধিক বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবানা রয়েছে।

    এ ব্যাপারে মানিকগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য কণ্ঠশিল্পী মমতাজ বেগম বলেন, সব চেয়ারম্যানই আমার সাথে। ২-৩ জন চেয়ারম্যান আছেন তারা টাকা খেয়ে অন্য প্রার্থীর সঙ্গে ঘুরলেও নৌকা পেলে তারাও আমার সাথে থাকবেন। গরু জবাই ও টাকা পয়সা ছাড়াই আমার সভা-সমাবেশে মানুষ হুমড়ি খেয়ে পড়ে। নিজেকে দুর্নীতি মুক্ত দাবী করে তিনি আরো বলেন, আমার জনপ্রিয়তা আগের চেয়ে অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। মানুষ নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আবারো আমাকে সংসদ সদস্য বানাবে এটাই জনগণের চাহিদা।

    প্রসঙ্গত, বিএনপির হাইকমান্ড নির্বাচনে অংশ নেয়ার ব্যাপারে এখনো সিদ্ধান্ত নেয়ায় তাদের দলীয় প্রার্থীরা মাঠে নেই। তবে বিএনপি অধ্যুষিত এ আসনে দলের দুই জন হেভিওয়েট মনোনয়ন প্রত্যাশী প্রার্থী হচ্ছে- জেলা বিএনপির সভাপতি আফরোজা খান রিতা ও সাবেক সাংসদ ইঞ্জিনিয়ার মঈনুল ইসলাম খান শান্ত। এছাড়া জাতীয় পার্টি থেকে এস এম আব্দুল মান্নানের মনোনয়নও চুড়ান্ত বলে জানা গেছে।

    বাংলাদেশ সময়: ৮:৪২ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৩

    dainikbanglarnabokantha.com |

    এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

    আর্কাইভ