শাকিলা ইসলাম | বৃহস্পতিবার, ০১ জুলাই ২০২১ | প্রিন্ট
গত বছর করোনাকালে তার সাথে পরিচয়। বরিশাল জেলা প্রশাসনের একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আমাকে একদিন ফোন করে জানান- আপা আমাদের বরিশাল বিভাগের এক সিনিয়র স্যার তার কণ্যার জন্মদিনে কিছু অসহায় শিশুকে উপহার দিতে চান। যেহেতু আপনি এবং ইয়ুথনেট বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক কাজ করে থাকেন তাই আমি স্যারকে আপনার মোবাইল নম্বরটি দিয়েছি। তিনি হয়তো আপনার সাথে যোগাযোগ করবেন। তিনি যোগাযোগ করেন।
এরপর কণ্যার জন্মদিনে তাকে সাথে নিয়ে আমরা শহরের কয়েকটি স্থানে যেয়ে অসহায় শিশুদের নিকট উপহার পৌঁছে দেই। তার সাথে পরিচয়ের আগ পর্যন্ত উপ-ভূমি সংস্কার কমিশনার (ডিএলআরসি) এর পদ বা এ পদের কাজের ধরণ সম্পর্কে আমার কোনো ধারণাই ছিলো না। পরে জেনেছিলাম প্রতিটি বিভাগে একজন করে উপ-ভূমি সংস্কার কমিশনার (ডিএলআরসি) দায়িত্ব পালন করে থাকেন। তারা সাধারণতঃ বিভাগের সকল জেলার প্রতিটি ভূমি অফিস পরিদর্শন করেন এবং সমস্যা থাকলে তা উপস্থাপন করে সমাধানের সুপারিশ করে থাকেন।
তারা মন্ত্রণালয় বা ভূমি সংস্কার বোর্ডের নির্দেশনা মেনে কাজ করেন এবং মূলত: মনিটরিং এর দায়িত্ব পালন করে থাকেন। কেননা অর্থ মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রদত্ত বাংলাদেশের সকল ভূমি অফিসের বাজেট ভূমি সংস্কার বোর্ডের মাধ্যমে প্রদান করে হয়ে থাকে। ফলে ভূমি অফিসসমূহের জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতার জন্য তদারকির প্রয়োজন রয়েছে। করোনাকালে গত বছর যখন বিভিন্ন জায়গায় ত্রাণ চুরির খবর গণমাধ্যমে আসছিলো তখন বরিশালের তৎকালিন বিভাগীয় কমিশনার বিভাগীয় পর্যায়ের কর্মকর্তাদের বিভিন্ন উপজেলায় পাঠিয়ে মনিটরিং এর দায়িত্ব প্রদান করেন।
এসময় তাকেও দায়িত্ব দেয়া হলে তিনি নিবিড়ভাবে তদারকির কাজটি সম্পন্ন করেন। তিনি সকল ট্যাগ অফিসার, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে বসেন। তাদেরকে নিজ নিজ দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন করেন। করোনাকালে তার মানবিকতাও আমরা লক্ষ্য করেছি। সেসময় নিজের বেতনের টাকায় উপহার নিয়ে তিনি মুচিদের পাশে যেয়ে দাঁড়ান। নিজ অফিসের কর্মকর্ত-কর্মচারিদের উদ্বুদ্ধ করে প্রতিবন্ধী মানুষের বাড়ি বাড়ি যেয়ে পৌছে দেন উপহার ।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের বলে মান্তাদের নৌকায় এবং নরসুন্দাদের হাতে তুলে দেন ত্রাণ। আমার সৌভাগ্য মানবিক এ কাজগুলোতে আমিও তার সাথে ছিলাম। যতদূর জানি বরিশাল বিভাগের ৬ জেলার ৪২টি উপজেলা ভূমি অফিস এবং ২৫৪ টি ইউনিয়ন ভূমি অফিসের প্রায় সবগুলিতে তিনি পা রেখেছেন। সাধারণত: কোনো অফিসে উধ্বর্তন কোনো কর্মকর্তা ভিজিটে আসলে সেই অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তার সেবা প্রদানের জন্য উৎকন্ঠিত থাকেন- তাকে কিভাবে রিসিভ করবেন, কি দিয়ে আপ্যায়ন করে সন্তুষ্ঠ করবেন তা নিয়ে থাকেন উদ্বিগ্ন। কিন্তু এর ব্যতিক্রম ছিলেন তরফদার মো: আক্তার জামীল। তিনি বলতেন ফুল দিয়ে অভ্যর্থণা জানানো, নাস্তা বা লাঞ্চ এর জন্য কোনো প্রটোকল বাজেটতো তোমাদের দেওয়া হয়না।
এগুলোতো শেষ পর্যন্ত জনগণের ঘাড়ে যেয়ে পড়ে। একবার এক সেবাগ্রহীতা নেছারাবাদ ভূমি অফিসে তার নামজারির পর্চা নিতে গেলে ভূমি অফিস হতে সময়ক্ষেপন করা হচ্ছিলো। ভদ্রলোক সে সময় জামীল সাহেবের দারস্থ হন। তিনি তৎক্ষণাৎ এসি ল্যান্ডকে ফোন দিয়ে বিষয়টি অবহিত করলে কাজটির দ্রুত সমাধান হয়ে যায়। আরেকবার ঈদ-উল-ফিতরের দু’দিন আগে বিকালে অফিসের একজন কর্মচারীকে নিয়ে তিনি শহরের ফলপট্টি এলাকায় হাঁটছিলেন। হঠাৎ দেখেন এক মহিলা তার ৭/৮ বছরের শিশুকন্যাটিকে নিয়ে হাত বাড়িয়ে পথচারিদের সাহায্য প্রার্থণা করছে।
তিনি তাৎক্ষণিক সেখানে যেয়ে ছোট মেয়েটির হাত ধরে মহিলাকে বলেন তার সাথে আসতে। এরপর তাদের নিয়ে চন্দ্রবিন্দু’র শোরুমে যান এবং মেয়েটির জন্য দু’টি জামা কিনে দেন। এরকম অসংখ্য মানবিক কাজের উদাহরণ ছিলেন তিনি যদিও এগুলো প্রকাশের বিষয়ে তিনি বরাবরই ছিলেন বিমুখ। নতুন কর্মস্থলে যোগ দিতে তিনি ইতোমধ্যে বরিশাল বিভাগের দায়িত্ব ছেড়ে দিয়েছেন। নতুন জায়গায় আরও ভালো ভালো কাজের সাথে সংযুক্ত থেকে দেশমাতৃকার সেবা দিয়ে যাবেন তিনি-এটাই আমাদের প্রত্যাশা। # লেখক প্রধান সমন্বয়ক, ইয়ুথনেট ফর ক্লাইমেট জাস্টিস
Posted ১:১৪ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০১ জুলাই ২০২১
dainikbanglarnabokantha.com | Romazzal Hossain Robel
এ বিভাগের আরও খবর
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।