আরাফাত হোসেন সরকার স্টাফ রিপোর্টার | সোমবার, ২১ জুন ২০২১ | প্রিন্ট
আজ বাবা দিবস। ফেসবুকে ঢুকে দেখি সবাই বাবাকে নিয়ে সুন্দর সুন্দর ছবি দিচ্ছে, বাবাকে নিয়ে গল্প করছে, আরও কত কি! আমি আমার বাবাকে ডাকতাম ‘আব্বা। আব্বা আমাকে খুবই আদর করতো,যদিও সব বাবারাই সন্তানকে আদর করে, তারপরও মনে হতো আমাকে বেশি বেশি করে। . আজ আমার আব্বা নেই। আছেন, জান্নাতুল ফেরদাউসে আর আমাদের দেখছেন নিরন্তর। আব্বা, আপনাকে খুব মিস করি,ভীষণ মিস করি। কত গল্প করতাম আপনার সাথে, কত বিচিত্র ছিল গল্পের বিষয়ঃ পরিবারনীতি, সমাজনীতি, রাজনীতি, নিজের লক্ষ্য ও নীতিতে অটুট থাকার আত্মবিশ্বাস, খুব মনে পড়ে এখন! . আব্বা, আমাকে খুব প্রভাবিত করেছেন আপনি; একসময় ভাবতাম, আপনাকে ছাড়া কিভাবে থাকবো, কিভাবে চলবো, এই নিষ্ঠুর স্বার্থপর পৃথিবীতে অথচ এখন আপনি নেই, আমি ঠিক চলছি। দৈনন্দিন কাজ করছি, দিন-মাস -বছর তো চলে যাচ্ছেই জগতের নিয়ম মেনে। কেবল আপনাকে আমি ভুলতে পারিনি এখনো, মনে হয় না পারবো কখন। . .এখনও মাঝে মাঝে আপনাকে স্বপ্ন দেখি। কথা বলি, গল্প করি, তারপর ঘুম ভেঙ্গে গেলে, কেমন জানি লাগে, বুকের ভেতরটা যেন ভেঙেচূড়ে একাকার হয়ে যায়। শুধু শূন্যতা, এমন শূন্যতার অনুভূতি বাধভাঙ্গা জোয়ার নামিয়ে দেয় আমার নয়ন সমুদ্রে, পরানের অনেক গহীনে। আব্বা, আপনাকে যে, আমি এত ভালবাসি, সেটা কখনও আপনাকে মুখ ফুটে বলা হয়নি। আব্বা, আপনি কি বুঝতেন? আমার না বলা ভাষা। . আব্বা, একটা কষ্ট এখনোও আমাকে খুব পীড়া দেয়, তাড়া করে ফিরে। আপনাকে যেদিন শেষ হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছি, আমাদের বর্তমান বাড়ি হতে বের হয়ে আমাদের নতুন বাড়ি “মোন্তাজ ভবনের” সামনে যখন আসলাম, আপনি আমাকে বল্লেন, “বাড়িটা খুব সুন্দর হয়েছে” আপনি খুব খুশি হয়েছেন। আমি বললাম, “আব্বা, এবার হসপিটাল থেকে এসে আপনি এই নতুন বাড়িতে থাকা শুরু করবেন, আপনিই উদ্বোধন করবেন।
আপনি আমাকে বল্লেন, “না, তুই থাকিস” বলতে বলতে প্রাইভেট কার’টা আমাদের বাড়ি পেছনে ফেলে পাকুরিয়া বাজারে চলে এসেছে, ছুটছি ঢাকার উদ্দেশ্যে। আব্বা,কেবল আপনি জানতেন, এই বাড়ির কাজটুকু করতে আমার কতটুকু পরিশ্রম ও কষ্ট হয়েছিল , তবু আমি পরিশ্রম করছি কেবল আপনার অনেক দিনের পোষা ইচ্ছেটা পূরণ করার জন্য কারন আমি জানতাম, বুঝতামও এখানে বাড়ি করাটা আপনার একটি স্বপ্ন ছিল। আপনার জন্য আমি বাড়িটা তৈরি করলাম ঠিকই আর আপনি একটা দিনও এই নতুন বাড়িতে থাকতে পারলেন না, কি আশ্চর্য! আপনি, যেদিন আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন ঠিক তার তিন দিন আগে আমাদের নতুন বাড়ির রঙ’র কাজ শেষ হয়েছিল আর ঐ বাড়িতে আপনি থাকতে পারলেন না একটি রাতও। আপনার স্বপ্নের বাড়ির বিশাল আঙ্গিনায় হলো আপনার পর পর তিনটি জানাজার নামাজ। সবাই চেয়ে ছিলো জানাজা হোক স্কুল মাঠে কেবল আমিই জানি আপনার ইচ্ছের কথা। আপনার কি ভাল লেগেছিল, আপনি কি খুশি হয়েছিলেন আব্বা? . আব্বা,এই কষ্ট আমি কোথায় রাখি! তাই আজ পযন্ত ঐ নতুন বাড়িতে থাকিনি, এখনো আমি পুরাতন বাড়িতে থাকি। যেখানে আপনি ছিলেন, আপনার অজস্র স্মৃতি ‘রা যেখানে পায়চারি করে আমার সাথে। আপনার পদছাপ যেখানে স্পষ্ট হয়ে উঠে আমার দৃষ্টিতে সীমায়। আপনার শরীরে ঘ্রাণ, যে বাতাসে ঘুরপাক খেয়ে ভেসে ভেড়ায় আমাদের বিশাল আঙ্গিনায়, আপনি এখনো আছেন ভেবে সাহসে বুক ফুঁলে উঠে। মনের অজান্তে হঠাৎ শুনতে পাই আপনি ডাকছেন, আমার নাম ধরে “আওলাদ, এই দিকে আস কিংবা শুনে যা”। বিশ্বাস করুন, আব্বা ” এগিয়ে যেয়ে দেখি কেবলই শুন্যতা, খা খা শূন্যতা, সবই আছে শুধু আপনি নেই। .আব্বা, আপনাকে খুব মনে পড়ে। আপনি আমাদের রেখে গেছেন আপনার সাজানো বাগানে, দেয়া করি আল্লাহ যেন, আপনাকে তার সুন্দরতম সাজানো বাগান জান্নাতুল ফেরদাউসে যথাযোগ্য মর্যাদায় রাখেন, আমিন। রাব্বির হাম হুমা কামা রাব্বা ইয়ানি সাগিরা।
Posted ৯:০৬ অপরাহ্ণ | সোমবার, ২১ জুন ২০২১
dainikbanglarnabokantha.com | Romazzal Hossain Robel
এ বিভাগের আরও খবর
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।