| মঙ্গলবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২১ | প্রিন্ট
নূরুদ্দীন দরজী:
ঢং ঢং করে আবার বাজিল ঘন্টা। খুলেছে স্কুলের দরজা, খুলেছে জানালা। কলরবে মুখরিত হলো শ্রেণীকক্ষ ও স্কুল আঙিনা। দীর্ঘ বিরতির হয়েছে অবসান। প্রায় দুটি বছর কেটে গেছে নীরব নিঃশব্দে, থেমে গিয়েছিল প্রাণের স্পন্দন। কর্মচাঞ্চল্যতা বিহিন ছিল সকল কিছু। এ শতাব্দীর বৃহত্তর মহামারি করোনার করাল গ্ৰাসে অচল স্কুল জীবনের মধুর স্মৃতির মধুর আঙিনা। সুন্দর ও মধুর ছাত্র জীবন হেলায় অবেলায় পাড় হলো। সব কিছু মনে হয় গদ্যময়।
বিশ্বের অনেক দেশের ন্যায় ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে আমাদের বাংলাদেশর শিক্ষাঙ্গনগুলো বন্ধ রাখতে হয়েছে। বন্ধ রয়েছে মহামারি করোনার কারণে। এ সময়ে সরকারি নির্দেশে অন লাইন ভিত্তিক ক্লাশ নেওয়ার ব্যবস্থা ছিল বটে-কিন্তু সকল ছাত্রছাত্রী সমভাবে অংশ গ্ৰহণে সমর্থ হয়নি। সরাসরি শিক্ষক-শিক্ষার্থীর মধ্যে সম্পর্কে ছেদ পড়েছিল। তারা ছিল কর্ম চঞ্চলতা থেকে অনেকটা দূরে। ক্ষতি হয়েছে অনেক। মহামারির এমন অবস্থায় জন বান্ধব সরকার নাগরিকদের বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করে প্রণোদনা দিয়েছেন। শিক্ষক-শিক্ষার্থীগণ ও এ সুবিধার বাইরে ছিল না। তাদের জন্য ও প্রাণান্তর চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু এ জাতীয় সহযোগিতায় অন্যান্য ক্ষেত্রের ক্ষতিগুলো কিছু পুষিয়ে নেওয়া গেলে ও শিক্ষার্থীদেথ যে ক্ষতি হয়ে যায় তা পুষিয়ে নেওয়া অনেকটাই অসম্ভব। শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার যে উর্বর ফসল ফলে তা অন্য কোন ভাবেই ফলানো যায়না। ছাত্র-শিক্ষকের মধ্যে যে সন্তান ও পিতৃতুল্য পারস্পারিক সম্পর্ক গড়ে উঠে এবং তা থেকে যে শিক্ষার সুফল আসে তা অন্য কোনক্রমে সহজে হয়না। শ্রেণিকক্ষের শিক্ষাই ছাত্র জীবনে হয়ে যায় বদ্ধমূল। আজীবন থেকে যায়। বাকি জীবনের আঁকে-বাঁকে তা ভেসে উঠে মধুর স্মৃতি হয়ে। প্রাথমিকে পঞ্চম আর মাধ্যমিকের দশম শ্রণির প্রতিটি ছাত্রছাত্রীদেথ লালিত স্মৃতি, দুটি পর্যায়ের শেষ গন্ডি তারা পেরিয়ে যায়। শেষ বর্ষ ও শেষ ক্লাশ বলতে ও স্মতিতে অংকিত হয় অনেক কিছু। সহপাঠি বন্ধুদের সাথে থেকে যায় অনেক কিছু-যা চলে যাওয়া বছরের জন্য তেমন নেই বললেই চলে। তাদের থেকে যাচ্ছে শুধু বেদনায় মলিন অতীতের কথা।
বিশ্ব ব্যাপী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ রাখা হয়েছির কেবলি করোনার ভয়াল থাবা থেকে ছোট ছোট সোনামণি শিশু ও কিশোর-কিশোরী শিক্ষার্থীদের রক্ষার প্রয়াসে। ইতিমধ্যে সমগ্ৰ বিশ্বে মরণঘাতি করোনায় ৪৬ লাখের ও বেশি মানুষ মারা গেছেন। আমার এ লেখাটি পর্যন্ত বাংলাদেশে ২৬৮৮০ টি মূল্যবান প্রাণ হারিয়ে গেছে। প্রায় ষাট সহস্র আক্রান্ত এখনো আছে আমাদের দেশে যারা হুমকী স্বরুপ। ঐ সময়ে যদি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো খোলা রাখা হতো তবে অনায়াসেই আর ও অধিক প্রাণহানি ঘটতে পারতো। সরকার অধিক পরিমাণ মূল্যবান জীবন বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের জীবন বাঁচানোর জন্যই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো পাঠদান বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। আজকের শিশু শিক্ষার্থী আগামীর ভবিষ্যৎ কর্ণধার। কারণ ভবিষ্যত জাতি গঠনে বর্তমান শিক্ষার্থীদের বিরাট ভূমিকা রয়েছে।
১৭ মার্চ/২০ থেকে ১১সেপ্টেম্বর/২১ পর্যন্ত সময় শেষ হয়ে ১২সেপ্টেম্বর অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলেছে। তবে বন্যা কবলিত স্কুলের ছাত্রছাত্রী বন্ধুরা আপাতত স্কুলে যাওয়ার আনন্দ থেকে বঞ্চিতই থেকে গেল। কতৃপক্ষ বেশ কিছু দিন যাবৎ অক্লান্ত পরিশ্রম করে স্কুল খুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করায় অবশ্যই অভিনন্দন প্রাপ্য। আমাদের কতৃপক্ষ সর্তকতার সহিত পদক্ষেপ নিয়েছেন। পুরোপুরি স্বাস্থ্যবিধি মেনে স্কুলে আসা-যাওয়া ও পাঠদান কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বিশেষ নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে এবং কতৃপক্ষ তৎপর রয়েছেন। স্কুল কতৃপক্ষের তত্বাবধায়নে সবাই তা মেনে চলবে এটিই জাতির আশা। ছাত্রছাত্রীরা বাধ্যতামূলক ভাবে মাস্ক পরে আসবে। স্কুলে প্রবেশের সময় সাবান পানি দিয়ে হাত ধুয়ে নিতে হবে। অনেক শিক্ষার্থী এক সাথে জড়ো হয়ে গল্প করা, আড্ডা দেওয়া ও খেলাধুলা করা থেকে বিরত থাকতে হবে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে বসতে ও হাঁটাচলা করতে হবে। শরীরের তাপমাত্রার প্রতি নজর রাখতে তাপ পরীক্ষা করতে হবে। শ্রেণি পাঠের জন্য যে রুটিন তা অনুস্মরণ করতে হবে। শ্রেণিকক্ষ, অফিস কক্ষসহ সকল আঙিনা নিয়মিত পরিস্কার পরিছন্ন করতে হবে। স্কুল গেটে পর্যাপ্ত সাবান পানির ব্যবস্থা নিতে হবে। অন্যান্য সকল নির্দেশনা সঠিকভাবে মেনে চলতে হবে।
এখানে সর্বাগ্ৰে মাস্ক পরিধান এবং হাত ধোয়ার প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে। হাত ধোয়ার কোন বিকল্ক নেই। যে হাত দিয়ে মানুষ সব কাজ করে সে হাত দুটি পরিস্কার থাকলে কোন রোগ জীবাণুই অতি সহজে শরীরে ঢুকতে পারবে না। মাস্ক পরা অবশ্যই একান্ত কর্তব্য। আমাদের দেশের চিকিৎসা বিজ্ঞানীগণ বলেছেন,”শুধু মাত্র প্রতিদিন নিয়মিত মাস্কে শতকরা নব্বই ভাগ করোনা মুক্ত থাকা যায়,। আমরা অনেকেই মাস্ক পরার প্রতি গুরুত্ব দেই না। অনেকে আবার বলেন,মাস্ক পরলে তাদের শ্বাস-প্রশ্বাসে অসুবিধা হয়। এমন হয়তো কারো কারো একটু আধটু হতে পারে। কিন্তু এর ও বিরাট উপকার রয়েছে। নাক মুখ একেবারে মুক্ত না থাকায় শ্বাস নিতে সামান্য সমস্যা হয় বা জোরে জোরে শ্বাস নিতে হয়। জোরে জোরে শ্বাস নেওয়ার অনেক উপকার রয়েছে। এটি শরীরের জন্য অনেক ভাল হয়। এতে শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা বেড়ে যায়, মন প্রফুল্ল থাকে। প্রতিটি শিরায় উপশিরায় অক্সিজেন পৌছে যায়। নানা প্রকার রোগ ব্যাধি থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। জোরে শ্বাস নিলে দেহে রক্ত প্রবাহের ক্ষমতা বেড়ে বেশি শক্তি পাওয়া যায়।
লেখাটি শেষ করতে চাই একটি ঈঙ্গিত দিয়ে। স্কুল কলেজ খোলার পর যদি কোন কারণে করোনার প্রকোপ বেড়ে যায় পুনরায় বন্ধ করে দিতে সরকার বাধ্য হবেন। দীর্ঘ বিরতির পর যদি ক্ষণিক মুখরিত হয়ে স্কুলের উৎসব মুখর পরিবেশ আবার চলে যায় সেটি হবে খুবই দুঃখজনক ও বেদনার। শিক্ষার্থীরা পড়ে যাবে আবার অনিশ্চয়তার মুখে । শুরু হবে তাদের মোবাইল আসক্তি। হতাশায় পড়ে হতে পারে তাদের বিরাট ক্ষত । এখন মৃত্যু ও সনাক্তের হার কমেছে তা বাড়তে দেওয়া যাবেনা। বন্ধুরা সবাই সর্তক হই,থাকি সাবধান!
লেখক: অবসরপ্রাপ্ত উপজেলা শিক্ষা অফিসার (টিইও)
Posted ৩:২২ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২১
dainikbanglarnabokantha.com | Romazzal Hossain Robel
এ বিভাগের আরও খবর
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।