শেখ সাইফুল ইসলাম কবির, বাগেরহাট | রবিবার, ১১ এপ্রিল ২০২১ | প্রিন্ট
বাগেরহাটের শরণখোলায় হঠাৎ বেড়েছে ডায়রিয়ার প্রকোপ। ৫০শয্যাবিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বর্তমানে অন্যান্য রোগীর তুলনায় ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যাই বেশি। ফাঁকা নেই ডায়রিয়া ওয়ার্ডের কোনো বেড। বারান্দায় ঠাই নিয়েছেন অনেক রোগী। গত ১০দিনে ডায়রিয়া আক্রান্ত অর্ধশতাধিক রোগী ভর্তি হয়েছেন হাসপাতালে। তাছাড়া, হাসপাতাল থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন অনেক রোগী। উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় আরো বহু মানুষ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে উপজেলার সর্বত্র বিশুদ্ধ খাবার পানির চরম সংকট চলছে। চৈত্রের খরতাপে এলাকার পুকুরসহ পানির উৎসগুলো শুকিয়ে গেছে। তাছাড়া, নলকুপের পানিও লবণাক্ত। ফলে, গ্রামের মানুষ দুষিত পানি পান করে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে। আক্রান্তদের মধ্যে প্রাপ্তবয়ষ্করাই বেশি। অন্যান্য বছরের তুলনায় ডায়রিয়া রোগীর চাপ এবার কয়েকগুণ বেশি বলে হাসপাতাল সূত্র দাবি করছে।
উপজেলার সাউথখালী ইউনিয়নের সোনাতলা গ্রাম থেকে শনিবার (১০এপ্রিল) ভর্তি হন আ. জলিল হাওলাদার (৪৫)। তিনি বলেন, তাদের এলাকার কোনো পুকরে পানি নেই। দু-একটি পুকুরে পানি থাকলেও তা কোনো মানুষ খেতে পারে না। পানির রঙ নষ্ট হয়ে গেছে। বাধ্য হয়ে সেই পানি ফিটকিরি দিয়ে খেতে হচ্ছে। এলাকার মানুষ সেই দুষিত পানি খেয়ে ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। হাসাপাতালে চিকিৎসাধীন ধানসাগর ইউনিয়নের খেজুরবাড়িয়া গ্রামের স্বপন কুমার রায় (৪০), তার স্ত্রী সাথী রাণী রায় (৩০), রায়েন্দা ইউনিয়নের খাদা গ্রামের এমিলি আক্তার (২২), তাফালবাড়ী গ্রামের জেসমিন বেগম (৩০), আমড়াগাছিয়া গ্রামের মরিয়ম বেগমসহ (৭০) আরো কয়েকজনরে সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা পানি সমস্যার কারণেই ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন।
হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক পল্লব বিশ্বাস জানান, অনেক ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে ভর্তি না হয়ে ইমারজেন্সিতে চিকিৎসা নিয়ে চলে যাচ্ছে। গত (১০এপ্রিল-শনিবার) সকালে এমন দুইজন রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বহু মানুষ ডায়রিয়া আক্রান্ত হচ্ছে বলে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও তাদের স্বজনদের মাধ্যমে জানা গেছে। শরণখোলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কয়েক বছর ধরে কর্মরত নার্সিং সুপারভাইজার রেবা রাণী দেবনাথ জানান, এবার ডায়রিয়া রোগীর চাপ অন্যান্য বছরের তুলনায় বেশি। অন্যসব বছরে সারা মাসে দুই-চারজন্য রোগী আসতো। কিন্তু এবার হঠাৎ করে ১০দিনেই নারী-পুরুষ ও শিশু মিলে ৬২জন রোগী ভর্তি হয়েছে। ডায়রিয়া ওয়ার্ডের বেড ফাঁকা না থাকায় রোগীদের বারান্দায় রাখা হয়েছে।
শরণখোলা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে এলাকায় বিশুদ্ধ পানির ব্যাপক সংকট রয়েছে। একারণে বেশিরভাগ মানুষ বাধ্য হয়ে দুষিত পানি পান করে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে। পানি সমস্যা সমাধান না হলে ডায়রিয়ার প্রকোপ আরো বৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে। ডা. ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, ভর্তি রোগীদের যথাযথ চিকিৎসা চলছে। হাসপাতালে খাবার স্যালাইন, আইভি স্যালাইন এবং অন্যান্য ওষুধের পর্যাপ্ত সরবরাহ রয়েছে।
Posted ৩:১৫ অপরাহ্ণ | রবিবার, ১১ এপ্রিল ২০২১
dainikbanglarnabokantha.com | Romazzal Hossain Robel
এ বিভাগের আরও খবর
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।