শুক্রবার ২৩ মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৯ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

>>

বগুড়া জেলায় বাংলার প্রাচীনতম সভ্যতা

আহসান হাবীব শুভ, শেরপুর   |   বুধবার, ০৭ মে ২০২৫   |   প্রিন্ট

বগুড়া জেলায় বাংলার প্রাচীনতম সভ্যতা

দেশের বগুড়া জেলায় বাংলার প্রাচীনতম একটি সভ্যতা গড়ে উঠেছিল। মহাস্থানগড়সহ বিভিন্ন প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন পাওয়া যায় এ অঞ্চলজুড়ে। এর মধ্যে অন্যতম একটি নিদর্শন হলো খেরুয়া মসজিদ। প্রায় পাঁচশ বছরের পুরোনো এই মসজিদ বগুড়ার শেরপুর উপজেলা সদর থেকে এক কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে খন্দকারটোলা গ্রামে অবস্থিত। মসজিদের চারপাশ সীমানা প্রাচীর দিয়ে ঘেরা। আশপাশটা সবুজ ঘাসে ছাওয়া।

৫৯ শতাংশ ভূমি নিয়ে গঠিত মসজিদের সম্পূর্ণ অংশ। ইটের দেয়ালের ওপরটা লোহার রেলিং দিয়ে ঘেরা। মূল গেটের কাছেই রয়েছে বেশ বড় একটি সাইনবোর্ড। বাংলা ও ইংরেজিতে এতে লেখা আছে মসজিদের ইতিহাস। রং উঠে যাওয়ায় বোর্ডের লেখার পাঠোদ্ধার করা যায় না। তবে মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলামের ‘ঐতিহ্যের স্বরূপ সন্ধানে’ এবং অধ্যক্ষ মুহম্মদ রোস্তম আলীর ‘শেরপুরের ইতিহাস (অতীত ও বর্তমান)’ থেকে পাওয়া যায় মসজিদটির সংক্ষিপ্ত নির্মাণ ইতিহাস। তখন ১৫৮০ খ্রিস্টাব্দ। স্থানীয় বুজুর্গ ফকির আবদুস সামাদ একটি মসজিদ প্রতিষ্ঠার চিন্তা করেন। সে সময়ে এখানকার প্রাদেশিক জায়গিরদার মির্জা মুরাদ খান কাকশালের পৃষ্ঠপোষকতায় মসজিদের নির্মাণকাজ শুরু করেন। দিল্লির মসনদে তখন আসীন মোগল সম্রাট জালালুদ্দিন আকবর। ১৫৮২ সালে তিনি দ্বীনে এলাহি প্রতিষ্ঠা করলে বাংলার কিছু অঞ্চলে তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ দেখা দেয়। মির্জা মুরাদ খান কাকশালও যোগ দেন সম্রাটের বিদ্রোহীদের দলে। এই বিদ্রোহের সময় বন্ধ থাকে মসজিদ নির্মাণের কাজ। শেষ পর্যন্ত মুরাদ খান সম্রাটের প্রতি আনুগত্য স্বীকারে বাধ্য হন। সম্রাটের আনুগত্য মেনে নেওয়ার পর আবারও শুরু হয় খেরুয়া মসজিদের নির্মাণকাজ। ফলে প্রায় পাঁচ বছর লেগে যায় মসজিদটির নির্মাণ প্রক্রিয়া।

মসজিদটি উত্তর-দক্ষিণে ৫৭ ফুট দৈর্ঘ্য ও পূর্ব-পশ্চিমে ২৭ ফুট প্রস্থ। মসজিদের দেয়ালগুলো ৬ ফুট চওড়া। পূর্ব দেয়ালে রয়েছে তিনটি প্রবেশ পথ। উত্তর ও দক্ষিণের দেয়ালে আছে একটি করে ছোট্ট দরজা। মূল প্রবেশপথের দরজার নিচে রয়েছে কালো পাথরের পাটাতন। এর ওপরের দিকে ফার্সি অক্ষরে লেখা একটি শিলালিপি রয়েছে। পূর্ব দেয়ালের তিনটি দরজার সোজা পশ্চিমে আছে তিনটি মেহরাব। মধ্যেরটি অপেক্ষাকৃত বড়। কারুকার্যময় মেহরাবগুলো আজও মোগল আমলের স্থাপত্যশৈলীর নিদর্শন বহন করছে। ছাদের ওপরে রয়েছে তিনটি গম্বুজ। সমান আকৃতির গম্বুজগুলোর প্রত্যেকটি ৩.৭১ মিটার ব্যাসের। অর্ধগোলাকৃতির গম্বুজগুলোর কার্নিশ ধনুকের মতো বাঁকা। এ ছাড়া মসজিদের চার কোণে রয়েছে আট কোনা আকৃতির চারটি মিনার।

খেরুয়া মসজিদের নামকরণ স্পষ্ট নয়। আবুল কালাম মোহাম্মদ জাকারিয়া তার ‘বাংলাদেশের প্রত্নসম্পদ’ বইতে উল্লেখ করেছেন, ‘মসজিদটি খেরুয়া বলে নামকরণের কারণ সম্পর্কে বেশি কিছু জানা যায় না। আরবি ভাষায় খেরুয়া বলে কোনো শব্দ নেই। তবে ফার্সিতে ‘খায়ের গাহ’ বলে একটি শব্দ আছে। যার অর্থ ‘কোনো স্থানের ভেতরে’। রাজা মানসিংহ যখন বাংলার সুবাদার তখন তিনি শেরপুরে একটি দুর্গ নির্মাণ করেছিলেন। এই দুর্গের কোনো অস্তিত্ব এখন নেই। তবে মসজিদটি যদি শেরপুর দুর্গের ভেতরে নির্মিত হয়ে থাকে, তবে ‘খায়ের গাহ’ থেকে খেরুয়া নাম হতে পারে বলে অনুমান করা হয়।’

মসজিদটিতে একসঙ্গে প্রায় একশজন নামাজ পড়তে পারেন। বর্তমানে স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় সামাজিকভাবে মসজিদটি পরিচালিত হয়। ৯০-এর দশকে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ মসজিদটি সংস্কারের উদ্যোগ নিলে মসজিদটি ব্যবহারের উপযুক্ত হয়। ইতিহাস সমৃদ্ধ এ মসজিদটি পরিদর্শনে প্রতিনিয়ত দেশ-বিদেশের বহু পর্যটক ও দর্শনার্থীসহ স্থাপত্যবিশারদ।

Facebook Comments Box

Posted ৪:২১ অপরাহ্ণ | বুধবার, ০৭ মে ২০২৫

dainikbanglarnabokantha.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

সম্পাদক

রুমাজ্জল হোসেন রুবেল

বাণিজ্যিক কার্যালয় :

১৪, পুরানা পল্টন, দারুস সালাম আর্কেড, ১১ম তলা, রুম নং-১১-এ, ঢাকা-১০০০।

ফোন: ০১৭১২৮৪৫১৭৬, ০১৬১২-৮৪৫১৮৬, ০২ ৪১০৫০৫৯৮

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

design and development by : webnewsdesign.com

nilüfer escort coin master free spins