
অনলাইন ডেস্ক | বৃহস্পতিবার, ২৬ নভেম্বর ২০২০ | পড়া হয়েছে 720 বার
নূরুদ্দীন দরজী:
আরবী রবিউস সানি মাসের ১১ তারিখ মুসলিম জাহানে একটি অবিস্বরনীয় দিন। এ দিনে তাপসকুল শিরোমণি আধ্ব্যাধিক জগতের শ্রেষ্ঠ সাধক হজরত বড় পীর আবদুল কাদির জিলানী (রহঃ )এর পবিত্র ওফাত দিবস।এ দিনটি পালিত হয় ফাতেহা ইয়াজদাহম রূপে। ইয়াজদাহম একটি আরবী শব্দ-যার অর্থ এগারো। রবিউস সানি মাসের এগারো তারিখ বড় পীর প্রার্থিব এ দুনিয়া ছেড়ে গিয়েছিলেন। আর এ স্বরণে ই ফাতেহা ইয়াজদহমের আয়োজন।বিশ্ব ব্যপি সুফিরা অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে এ দিন পালন করে থাকেন।
পীর কুল শিরোমণি হজরত আবদুল কাদির জিলানী (রহঃ)কে সারা মুসলিম জাহান জানেন বড় পীর হিসেবে। দৃশ্যত,এ যাব্তকালে পৃথিবীতে যত পীর আউলিয়ার আগমন ঘটেছে আবদুল কাদির জিলানী (রহঃ)স্বতন্ত মর্যাদায় অধিষ্ঠিত। তাঁর ঐশী ক্ষমতা ছিল অনেক বেশি। তিনি হিজরি ৪৭১ সনের রমজান মাসের প্রথম দিন ইরাকের বাগদাদ শহরের জিলানে জন্ম গ্ৰহন করেছেন। ৯১ বছর বয়সে হিজরি ৫৬১ সনে ১১ রবিউস সানি পরলোক গমন করেন। তাঁর পবিত্র মাজার শরীফ বাগদাদ শহরে,লাখ লাখ ভক্ত প্রতিনিয়ত আসেন সে মাজারে। শ্রদ্ধা জানায়, জিকির করে আল্লাহর দিদার লাভের বাসনা নিয়ে।
শৈশব কাল থেকেই তিনি খুবই উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন চিন্তার অধিকারী ও মেধাবী ছিলেন। অল্প বয়সে শিক্ষা-দীক্ষায় পূর্নতা অর্জন করে তৎকালে ইসলামের সুমহান বাণী প্রচারের জন্য নিয়োজিত হয়েছিলেন। আরবের বিভিন্ন জায়গায় অনেক অনেক মাহফিলে মধুর ও প্রাঞ্জল ভাষায় ইসলামের মহান আদর্শিক বাণীগুলো মানুষের কাছে তুলে ধরতেন। তাঁর প্রতিটি মাহফিল লোকে লোকারণ্য হয়ে যেত। মানুষজন তাঁর বক্তব্য শুনে মুগ্ধ হতেন। অনেক নন মুসলিম তাৎক্ষণিকভাবে ইসলাম গ্ৰহন করেছেন। তিনি কাব্য, সাহিত্য, দর্শন, ইতিহাস ও আরও নানা বিষয়ে বিশেষ পারদর্শী ছিলেন। তাঁর রচিত বহু মূল্যবান গ্ৰন্থ এখনো সমাদৃত। তিনি ইসলামের আদর্শ ঝান্ডা চতুর্দিকে ছড়িয়ে দিতে চেষ্টা করেছেন। মধুর কন্ঠস্বর শুনে কোটি কোটি মানুষ ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হয়েছেন। সারা দুনিয়া সেসময়ে ইসলামের আলোতে ঝলমল করতো। তাঁর খানকা ছিল ইসলামের বাতিঘর যা চর্চার অন্যতম কেন্দ্র। খানকায় প্রতি সপ্তাহের মাহফিলে তৎসময়েই ৬০ থেকে ৭০হাজার লোকের সমাগম হতো বলে শুনা যায়।
হজরত আবদুল কাদির জিলানী (রহঃ) এর দ্বারা বহু অলৌকিক ঘটনা ঘটেছে বলে বহু মত প্রচলিত আছে। তিনি মায়ের গর্ভে থাকাকালীন ১৮ পারা কোরআন মুখস্থ করেছিলেন। রমজান মাসে ভূমিষ্ঠ হওয়ায় পুরো রমজান দিনের বেলায় তিনি দুধ পান করতেন না এবং এতে তাঁর রোজা হয়ে যেতো। খুবই মাতৃভক্তি ছিল ।মায়ের আদেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করতেন। মা শিখিয়ে দেওয়ার পর কোন অবস্থাতেই জীবনে কোন প্রকার মিথ্যা কথা বলেননি। কেউ মিথ্যা বললে তৎক্ষণাৎ ধরে ফেলতে পারতেন। তাঁর অলৌকিক বিভিন্ন ঘটনার বিবরণ শুনলে শ্রদ্ধায় মন ভরে যায়, মাথা নুয়ে আসে। তাঁর যে আদর্শিক জীবন কাহিনী রয়েছে তা কোন মানুষ অনুসরণ করলে তাদের ইহজাগতিক ও পরকালীন মঙ্গল সাধিত হয়। পবিত্র ফাতহা ইয়াজদহম ২০২০ আমাদের জীবনে আনুক সাম্য, মৈত্রী ভ্রাতৃত্ব ও আদর্শের অঙ্গীকার । মিথ্যা,কুমানসিকতা,সকল প্রকার হিংস্রতা পরিহার করে মানুষ পাবে সুন্দর জীবন, অর্জন করবে অশেষ নেকি। সকল ভেদাভেদ ভুলে বড় পীর হজরত আবদুল কাদির জিলানী (রহঃ) এর সুপরামর্শের পথে চলে মুসলমানদের হারানো ঐতিহ্য ও গৌরব আবার ফিরে আসবে এ প্রত্যাশায় শেষ করছি। আল্লাহ মহান।
লেখক: কলামিস্ট ও সাবেক উপজেলা শিক্ষা অফিসার (টিইও)
বাংলাদেশ সময়: ৭:৪৫ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৬ নভেম্বর ২০২০
dainikbanglarnabokantha.com | Romazzal Hossain Robel