সোমবার ৭ অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২২ আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

>>

পুষ্টিকর খাদ্যাভাসে সনাতন ধর্মাবলম্বী যাযাবরদের পাবনায় শুকর পালন

জামিল হোসেন পাবনা   |   বুধবার, ০১ সেপ্টেম্বর ২০২১   |   প্রিন্ট

পুষ্টিকর খাদ্যাভাসে সনাতন ধর্মাবলম্বী যাযাবরদের পাবনায় শুকর পালন

পুষ্টিকর খাদ্যাভাসে সনাতন ধর্মাবলম্বী যাযাবরদের পাবনায় শুকর পালন

মহান আল্লাহ তায়ালা মুসলিম জাহানের জন্য শুকরের মাংস হারাম করেছেন। কিন্তু সনাতন, বৌদ্ধ এবং খ্রিষ্টানসহ অনেক ধর্মের মানুষ শুকরের মাংগ খেয়ে থাকেন। তাদের মুখ থেকে শোনা যায়, এই পশুর মাংস নরম, সুসাদু এবং পুষ্টিকর। অল্প সময়ে শুকর তারাতারি বেড়ে ওঠায়, চাষও তুলনামূলক অনেক লাভ জনক। একটা মাঝারী সাইজের শুকর ১০ থেকে ১২ হাজার টাকায় বিক্রয় হয়। রাজধানী ঢাকা এবং বন্দর নগরী চট্টগ্রামে এই পশুর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এ কারণেই মুসলিম অধ্যুষিত বাংলাদেশের কিছু সনাতন ধর্মাবলম্বী মানুষ শুকর লালন পালনে আগ্রহী হয়ে থাকেন। শুকর চাষে স্থায়ী আবাস না থাকায় যে টাকা লাভ হয়, তার সিংহভাগ টাকা জায়গা পরিবর্তন করার কারণে খরচ হয়ে যায়। দুঃখ দুর্দশা এবং কষ্টের শেষ নেই তাদের শুকর পালন এবং জীবন যাপনে। শুকর যেখানে পালন করা হয় সেখানের পরিবেশ দূর্গন্ধ হয়ে যায়। সাধারণ মানুষজন তার পাশ দিয়ে যেতে মুখে রুমাল দিয়ে পার হয়। স্বাভাবিক ভাবেই এমন পরিবেশ কদাচিৎ আমাদের সন্মুখীন হতে হয়। শুকর লালন পালনে সাথে জড়িত মানুষেরা এক জায়গায় স্থির থাকে না। আদীম সমাজের মতো যাযাবর জীবন তাদের। শুকরের খাবারের সন্ধানে এক জেলা থেকে অন্য জেলায় স্থানান্তর হয়। এভাবে চলতে চলতে যেখানে সন্ধ্যা নামে সেখানেই কোন মাঠের মধ্যে গাছপালা নিচে অস্থায়ী ছোট তাবু টানিয়ে শুকর গুলোকে রাখা হয়। শুধু তাই নয়, যারা শুকর লালন পালন করেন, তারাও রাতে ঘুমাতে পারেন না। কেননা শুকর রাতের অন্ধকারে দেখতে পায়, এজন্য যেকোন একাই চলে যেতে পারে। আবার অনেক সময় শিয়াল বা অন্য জীবজন্ত এসে এদের ধরে খেয়ে ফেলে। সে কারণে শুকর চাষীরা পালাক্রমে একজন জেগে থাকেন, অন্যজন ঘুমান। এভাবেই রাত শেষে প্রভাতের সূর্য্যদয় শুরু হলে শুকর নিয়ে আবার খাবারের সন্ধানে বের হতে হয়। সম্প্রতি রংপুর এবং সিরাজগঞ্জ জেলা থেকে কয়েকজন সনাতন ধর্মবলম্বী পাবনায় এসেছেন শুকর লালন পালন করতে। পাবনার খাদ্যাভাস পুষ্টিকর এবং আবহাওয়া জলবায়ু শুকর তাড়াতাড়ি স্বাস্থ্যবান হয়ে বেড়ে ওঠে। কিন্ত তাদের এই পশু লালন পালনে প্রতিনিয়ত নানা সমস্যায় পড়তে হয়। কেউ মাঠে জায়গা দিয়ে রাখতে চায় না। সিরাজগঞ্জ জেলার রায়গঞ্জ উপজেলার সলঙ্গা থানার অধিবাসী রামদাস (৩৫) শুকর চাষের বিষয়ে জানান, আমরা শুকর চড়াই যেখানে রাত হয়ে যায় সেখানেই বাগানের মধ্যে গাছের নিচে তাদের রেখে লালন পালন করি। পাবনায় শুকরের খুব ভাল খাবার পাওয়া যায়। সেজন্য আমরা এখন পাবনা জেলার দুলাইয়ে বাগানের মধ্যে আস্থায়ীভাবে পশুর জন্য আবাস গড়েছি। এ অঞ্চলে খাবার শেষ হয়ে গেলে আবার নতুন জায়গা খাবারের সন্ধ্যানে চলে যাবো। রংপুর জেলার সদর থানার ওতশেখপাড়া এলাকার যতিন বাড়ি (৪০) বলেন, এই পশু অল্প সময়ে বড় হয়। তাই দীর্ঘদিন ধরে আমরা শুকর লালন পালন করে আসছি। রাজধানী ঢাকা এবং চট্টগামে এদেশে চাকরির সুবাদে বসবাসকারী বিদেশীরা শুকরের মাংস খুবই পছন্দ করেন। কিন্তু সেখানে এই পশু পালন করার পরিবেশ নেই। সে কারণেই উত্তরাঞ্চলে শুকর চাষ করা হয়। কিন্তু আমাদের কেউ জায়গা দেয়না রাখার জন্য। অপর দিকে আমরা যে কজন এখানে একসাথে কাজ করি, আমাদের নিজের খাবার সংগ্রহ অনেক কষ্ট সাধ্য হয়ে যায়। এজন্যও অনেক সমস্যার সন্মুখীন হতে হয়। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ সম্মিলিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-সভাপতি হাসানুজ্জামান সোহাগ শুকর চাষীদের দুঃখ কষ্ট দেখে কিছু খাদ্য সামগ্রী নিয়ে তাদের সহযোগিতা করেন। সেই সাথে তার নিজ গ্রামের বাগান বাড়িতে শুকর রাখার ব্যবস্থা করে দেন। যে কয়দিন এ অঞ্চলে শুকরের খাবার পাওয়া যায় প্রয়োজনে তার বাগানে থাকতে পারবেন বলেও তিনি জানান। এ সময় তিনি আরও বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অসহায় মানুষের বিপদে আপদে ছাত্রলীগকে তাদের পাশে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। তাঁর নির্দেশনাকে শ্রদ্ধা জানিয়ে আমার এ ক্ষুদ্র প্রয়াস।

Facebook Comments Box

Posted ৬:০৩ অপরাহ্ণ | বুধবার, ০১ সেপ্টেম্বর ২০২১

dainikbanglarnabokantha.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

সম্পাদক

রুমাজ্জল হোসেন রুবেল

বাণিজ্যিক কার্যালয় :

১৪, পুরানা পল্টন, দারুস সালাম আর্কেড, ১০ম তলা, রুম নং-১১-এ, ঢাকা-১০০০।

ফোন: ০১৭১২৮৪৫১৭৬, ০১৬১২-৮৪৫১৮৬

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

design and development by : webnewsdesign.com

nilüfer escort coin master free spins