• শিরোনাম

    পলো নেমেছিল গ‌ইরা বিলে

    অনলাইন ডেস্ক বুধবার, ১১ নভেম্বর ২০২০

    পলো নেমেছিল গ‌ইরা বিলে

    apps

    নূরুদ্দীন দরজী:

    পলো বাইতে গিয়েছিলাম গ‌ইরা বিলে। এসেছিল চতুর্দিকের কয়েক হাজার মাছ শিকারি মানুষ।বিলের সব দিকেই মানুষের অবস্থান। একটু আগে বা পরে এলেও এক সাথে পলো ,জাল ও অন্যান্য মাছ ধরার সামগ্ৰী নিয়ে নেমে যায় ।নামার আগে কি জানি যাদুর বাঁশি বেজে উঠে।চতুর দিকে আনন্দ চিৎকার,হর্ষ ধ্বনি হ-ই-ই ধ্বনি।যেন এক মহা মিলনের যুদ্ধযাত্রা। বিলের দক্ষিণ দিক থেকে শুরু।নানা বয়সী যোদ্ধা, দশ বার বছরের বালক থেকে আরম্ভ করে পঞ্চাশ ষাট বছর বয়সী মানুষ ও রয়েছে মনে হয়। পারে পারে ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা দাঁড়িয়ে। তাদের কারো কারো হাতে ঢোলা ও বড় সাইজের ডেকসি । বিলে নেমে গেছে আপনজন
    মাছ ধরলে এরা তাদের সহায়তা করবে ।বড় মাছ ধরলে আনন্দ করবে।চলছে ঝুপ ঝুপ, ছলাৎ ছলাৎ পলো বেয়ে মাছ ধরা। এ যেন এক মহা মিলনের মহোৎসব।
    পূর্বেই উল্লেখ করেছি গ‌ইরা বিলে পলো নামার কথা।গ‌ইরা নরসিংদী জেলার শিবপুর উপজেলায় একটি প্রসিদ্ধ বিল। এ বিল এক সময় দক্ষিণ দিকে খাল হয়ে হয়ে বর্তমান নরসিংদী’ জেলা শহরের দক্ষিণে মেঘনায় পতিত হয়েছিল। আগের সে রেখ এখন হয়তো আর নেই। শুধুই গ‌ইরা নয় এমন আরও বহু বিলে বছরে একবার করে সাজ সাজ রবে পলো নামতো সারা নরসিংদীতে। যতটুকু মনে পড়ে এগুলো নলুয়া, মলাডাঙা, হাল, দোয়াত্তা, ডাঙি, মামুভাগিনা, শীতলক্ষার খাড়ি সহ‌ সারা বাংলার অনেক বিলে। প্রতি বছর আশ্বিন কার্তিক মাসে বিলগুলোতে পলো নেমে মাছ ধরার উৎসব চলতো। বর্তমান প্রজন্মের অনেকেই সে খবর জানে না। পলো নামাকে কেন্দ্র করে বিল এলাকায় কয়েক দিন ধরে স্বতন্ত্র ইমেজ বিরাজ করতো। দু,এক দিন আগেই বিল পারের মেয়েরা শ্বশুরবাড়ি থেকে বাবার বাড়ি চলে আসতো। আসার অনেক উদ্দেশ্যের মধ্যে একটি ছিল বাড়িতে মাকে, ভাবিকে মাছ কাটতে বা ধুইতে সাহায্য করা। পলোর দিনে ধরা মাছে বিল পারের মানুষদের অনেক দিন চলে যেতো। আবার কয়েক দিন খাওয়ার মাছ রেখে বাকি মাছ শুঁটকি দিয়ে বহু দিন ধরে রোদে শুকানো হতো। সে শুঁটকি গন্ধে অনভ্যস্ত মানুষের অনেকে বিরক্ত ও বোধ করতো।
    এমনি একটি দিন ছিল গত ৮ নভেম্বর, গ‌ইরা বিলে পলো নেমেছিল।আগের দিন কে জানি সারা এলাকায় মাইকিং করে জানিয়েছিল-বিশাল পলো নামার আয়োজন করা হয়েছে বলে। পূর্বের দিনের মাছ ধরার সেই আনন্দ পাবো চিন্তা করে উৎসাহ ভরে অনেকের সাথে গ‌ইরা বিলে গিয়েছিলাম। কিন্তু না!সে আনন্দ নেই। অল্প সংখ্যক উৎসাহী মানুষ পলো নিয়ে নেমেছিল। জালের সংখ্যা বেশি। আনন্দের চিৎকার দু, একটি শোনা গেলেও আগের দিনের মত নয়। অতীতের স্রোত যেন কোথায় হারিয়ে গেছে। অনেকেই দেখলাম বিফল মনোরথে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন। শুধুই অতীতের কথা রোমন্থন। অনেকে জীবন সায়াহ্নে এসে পুরাতন দিনের কথা মনে করে দুঃখ ভরা মনে বাড়ি ফিরেছেন।
    অতীত অতীত‌ই। অতীত কখনো ফিরে আসেনা, আসতে পারেনা। স্বয়ং বিধাতাও নাকি অতীত ফিরিয়ে দেন না। যদিও অতীতের প্রতি মানুষের চিরন্তন মোহ রয়ে যায়। এ মোহ‌ মানুষকে সবকিছু ফিরে পাওয়ার বাসনায় আবদ্ধ রাখে। আমাদের জন বান্ধব সরকার হারিয়ে যাওয়া অনেক নদী পুনঃ খননের ব্যবস্তা করে নাব্যতা ফিরিয়ে এনেছেন। নদীগুলো পেয়েছে পুনঃ জীবন, হারানো গৌরব। নদী পারের মানুষজন দেখা শুরু করেছে নতুন স্বপ্ন। আমরা আশা করতেই পারি এ জনগণের সরকার অবশ্যই একদিন ভরাট হয়ে যাওয়া বিলগুলো পুনঃ খননের ব্যবস্থা করে ফিরিয়ে আনবেন এদের হারানো গৌরব ও ঐতিহ্য। আবার ভরা বিলে মহোৎসবে নামবে পলো। মানুষ পাবে আনন্দ, ধরবে মাছ। আমরা দেখেই যাব স্বপ্ন। স্বপ্ন‌ই একদিন নিয়ে যাবে বাস্তবে। আশায় ছাড়া স্বপ্ন ছাড়া কে বাঁচতে পারে? রবীন্দ্রনাথতো বলেছেন, ভবিষ্যত অসীম হলেও অতীতকে স্মরন করে।

    লেখক: সাবেক উপজেলা শিক্ষা অফিসার (টিইও)

    বাংলাদেশ সময়: ৯:৪৯ অপরাহ্ণ | বুধবার, ১১ নভেম্বর ২০২০

    dainikbanglarnabokantha.com |

    এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

    রূপা

    ২৪ অক্টোবর ২০২০

    নায়িকা হয়েও কবি ছিলেন

    ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২০

    ছোটগল্প (দেনা)

    ২৫ জুলাই ২০২১

    আর্কাইভ