নিজস্ব প্রতিবেদক :- | বৃহস্পতিবার, ২৬ অক্টোবর ২০২৩ | প্রিন্ট
সরকারী যে কোন পদোন্নতির ক্ষেত্রে মূল ভিত্তি হলো সরকারী যে প্রতিষ্ঠানে পদোন্নতি দেয়া হবে সে প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ বিধিমালা। উক্ত নিয়োগ বিধিমালাতে প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের পদোন্নতি সংক্রান্ত যাবতীয় বিষয়াদি উল্লেখ থাকে। যদি কোন কারণে কোন পদোন্নতি নিয়োগ বিধিমালার ব্যত্যয় ঘটিয়ে করা হয়, তাহলে তা হবে দূর্নীতির শামিল। একই সাথে সামগ্রীক দূর্নীতির বিষয়টি জানা সত্ত্বেও যদি কর্তৃপক্ষ নিরব থাকেন এবং দূর্নীতির মাধ্যমে পদোন্নতি পাওয়া কর্মকর্তাদের আরও উচ্চতর পদে পদোন্নতি দেয়ার জন্য উদ্যত হন, সেটাকেও দূর্নীতির বাইরে রাখা যাবেনা। এমনই ঘটনা ঘটেছে পরিবেশ অধিদপ্তরে।
গত ১৫/১২/২০১৬ ইং তারিখে ০৫২.১২.০০২.২০১৬-৯১৩ প্রজ্ঞাপনে পরিবেশ অধিদপ্তরে উপ-পরিচালক পদে ১২ জন কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেয়া হয়েছিল। কিন্তু উক্ত পদোন্নতিটি ছিল তৎকালীন বলবৎ পরিবেশ অধিদপ্তর (কর্মকর্তা ও কর্মচারী) নিয়োগ বিধিমালা, ১৯৯৪ এর সহিত সাংঘর্ষিক। পরিবেশ অধিদপ্তর (কর্মকর্তা ও কর্মচারী) নিয়োগ বিধিমালা, ১৯৯৪ এ উপ-পরিচালক পদসমূহ উপ-পরিচালক (কারিগরী/প্রশাসন ও অর্থ) নামে বিন্যস্ত করা আছে। এ পদগুলোকে বন্ধনিবন্ধ শব্দ যেমন কারিগরী, প্রশাসন ও অর্থ, প্রচার ইত্যাদি বিলুপ্ত করে শুধুমাত্র উপ- পরিচালক পদনাম দিয়ে পদ তৈরী করে পদোন্নতি দিতে হলে তৎকালীন প্রযোজ্য ১৯৯৪ সালের নিয়োগ বিধিমালাতে প্রয়োজনীয় সংশোধনী এনে গেজেটভূক্ত করার প্রয়োজন ছিল। কিন্তু সেসকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার আগেই গত ১৫/১২/২০১৬ ই তারিখে ১২ জন কর্মকর্তাকে উপ-পরিচালক পদে পদোন্নতি দেয়া হয়, যা সম্পূর্ণ অবৈধ। অধিদপ্তরে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সহকারী পরিচালক জানান যে, পদোন্নতির জন্য প্রশাসনিক মন্ত্রণালয়ের সচিবের সভাপতিত্বে একটি নিয়োগ বোর্ড রয়েছে। উক্ত নিয়োগ বোর্ডে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও অর্থ বিভাগের প্রতিনিধি সদস্য হিসাবে রয়েছেন। গত ১৫/১২/২০১৬ তারিখে উপ-পরিচালক পদে যে পদোন্নতি দেয়া হয়েছিল, তার সভা হয়েছিল ০১/১২/২০১৬ ইং তারিখে। উক্ত সভায় জনপ্রশাসন ও অর্থ বিভাগের প্রতিনিধিগণ নিয়োগ বিধিমালার সাথে সাংঘর্ষিক হওয়ায় পদোন্নতি প্রস্তাবে আপত্তি জানান ও অধিকতর পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্য গুরুত্বারোপ করলেও বিষয়টি উপেক্ষা করা হয়। সেখানেও মোটা অঙ্কের টাকা লেনদেন হয় বলে অভিযোগ আছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন উপ-পরিচালক পদে কর্মরত অধিদপ্তরের কর্মকর্তা জানান যে, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এর সওব্য-১ শাখা হতে ১/৩/২০১৫ তারিখে ০৫.০০.০০০০.১৫.০০৪.১৪-৫৫ নং স্মারকে পরিচালক (প্রশাসন ও উন্নয়ন/কারিগরী), উপ-পরিচালক (কারিগরী/উন্নয়ন ও পরিকল্পনা/প্রচার/প্রশাসন ও অর্থ), সহকারী পরিচালক (কারিগরী/প্রচার/প্রশাসন), বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, পিএবিএক্স কম্পিউটার পদগুলোর নাম পরিবর্তনের জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সম্মতি দিলেও শর্ত দেয়া হয়েছিল যে, তৎকালীন বিদ্যমান বিধি অর্থাৎ পরিবেশ অধিদপ্তর (কর্মকর্তা ও কর্মচারী) নিয়োগ বিধিমালা, ১৯৯৪-এর প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনয়ন করতে হবে। কিন্তু সংশোধনী না এনেই এবং নিয়োগ বোর্ডের জনপ্রশাসন ও অর্থ বিভাগের মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রতিনিধিদের আপত্তি থাকা সত্বেও ১৫/১২/২০১৬ ইং তারিখে পদোন্নতির প্রজ্ঞাপন জারী করা হয়। উক্ত কর্মকর্তা আরও উল্লেখ করেন যে, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ১/৩/২০১৫ ইং তারিখে উক্ত স্মারকটিতে লাইব্রেরিয়ান পদেটির নাম উল্লেখই ছিলনা। কিন্তু গত ১৫/১২/২০১৬ ইং তারিখের পদোন্নতির প্রজ্ঞাপনে লাইব্রেরিয়ান পদের ব্যক্তিকেও উপ-পরিচালক পদে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে। এই অবৈধ্য পদন্নোতি বাস্তবায়নের আর্থিক লেনদেনের মূলদায়িত্ব পালন করেন পদন্নোতি পাওয়া কর্মকর্তা খালিদ হাসান, যাহাকে দূর্নীতির অভিযোগে পরিবেশ অধিদপ্তর প্রধান কার্যালয় থেকে ব্রাম্মনবাড়ীয়া অফিসে বদলি করা হয়, আরও জানান যে, দূর্নীতির মাধ্যমে পদোন্নতি পাওয়া উপ-পরিচালকদের সম্প্রতি আবার পরিচালক পদে পদোন্নতি দেয়ার জন্য তোরজোর চলছে। এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে মহাপরিচালক পরিবেশ অধিদপ্তরে যোগাযোগ করা হলে কোন কথা বলতে চাননি। পরবর্তীতে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করা হলে সচিবের কার্যালয় থেকে জানা যায় নিয়মমাফিকই পদোন্নতি ব্যবস্থা করা হবে, কোন প্রকার অনিয়মকে প্রশ্রয় দেওয়া হবে না বলে মন্তব্য করেন ।
Posted ৩:৫১ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৬ অক্টোবর ২০২৩
dainikbanglarnabokantha.com | Romazzal Hossain Robel
এ বিভাগের আরও খবর
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।