
নরসিংদী জেলা প্রতিনিধি : | রবিবার, ২৮ জানুয়ারি ২০২৪ | প্রিন্ট
নরসিংদী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের অপসারণের দাবিতে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের প্রধান ফটক অবরুদ্ধ করে অবস্থান নিয়েছে শিক্ষার্থীরা। রবিবার (২৮ জানুয়ারি) সকাল সাড়ে ১০টায় শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে জড়ো হতে থাকে। পরে সকাল ১১টায় বিদ্যালয় প্রাঙ্গন থেকে বাদ্যযন্ত্র নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে নরসিংদী শহর পদক্ষিণ করে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে এসে প্রধান ফটক অবরুদ্ধ করে অবস্থান কর্মসূচী পালন করছে স্কুলের সকল শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা।
নরসিংদী জেলা প্রশাসক ড. বদিউল আলম একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে তিন দিনের মধ্যে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিলেও শিক্ষার্থীরা একদিনের মধ্যে প্রধান শিক্ষকের অপসারণের দাবীতে এখনো অবস্থান নিচ্ছেন জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের প্রধান ফটকে।
জেলা প্রশাসক বরাবর শিক্ষার্থীদের অভিযোগ থেকে জানাযায়, এসএসসি পরীক্ষার্থীদের বিদায় অনুষ্ঠানে বিদ্যালয়ে প্রবেশে বাধা, শিক্ষার্থীদের টাকা আত্মসাৎ, নিম্নমানের খাবার পরিবেশন ও প্রধান শিক্ষকের অসৌজন্য মূলক আচরনসহ বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগ এনে নরসিংদী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শিউলি আক্তার এর পদত্যাগের দাবিতে নরসিংদী জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ ও অবস্থান কর্মসূচী পালন করছে শিক্ষার্থীরা। বিদ্যালয়ের ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারি রৌশন আলীর মেয়ের দরিদ্র তহবিলের টাকা আত্মসাৎ করেন এই প্রধান শিক্ষিকা যা বিগত ২২/০৬/২০২২ই তারিখে জেলা প্রশাসক বরাবর অভিযোগ করা হয় এবং তদন্ত সাপেক্ষে অভিযোগটি প্রমানিত হয়। স্কুল ম্যাগাজিন প্রকাশের টাকা আত্মসাৎ, স্কুলের ছাত্রীনিবাসের রুমের পার্টিশন ভেঙ্গে খরগোশ পালন, তীব্রশীতে কোমলমতি শিশুদের শীতবস্ত্র খুলে পিটি করানো এবং পরে তাদের শীতবস্ত্র ফেরত না দিয়ে স্টোর রুমে রেখে দেন যা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আসমা সুলতানা নাসরিন নিজে পরিদর্শন করেন। এসএসসি পরীক্ষার্থী হিন্দু বিবাহি মেয়েদের মাথায় সিদুর পরে পরীক্ষা কেন্দ্রে আসতে নিষেধাজ্ঞা যারি, পরিচ্ছন্ন কর্মী রাণী দাসের উপর তার স্বামীর কু-দৃষ্টি ও কু-প্রস্তাবের বিচার চাওয়ায় চাকুরি থেকে বের করে দেয়ার হুমকিসহ স্কুলের প্রত্যেকের সাথে তিনি অশোভনীয় আচরন করেন বলেও অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়।
নরসিংদীর জেলা প্রশাসক ড. বদিউল আলম জানান, শিক্ষার্থীদের দাবীর বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আসমা সুলতানা নাসরিনকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী পাঁচ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন প্রাপ্তির প্রেক্ষিতে প্রধান শিক্ষিকার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
নরসিংদী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকা শিউলী আক্তার তার বিরুদ্ধে অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, আমরা প্রতি বছর বিদায় অনুষ্ঠানটি মাঠে করি। কিন্তু আনুসাঙ্গীক খরচ হওয়ার কারণে এবছর আমরা ক্লাস রুমে বিদায় অনুষ্ঠানের আয়োজন করি। পরে সেখান থেকে আমাদের হলরুমে তাদের নিয়ে আসি। হলরুমে মিলাদ মাহফিল শেষ করে আপ্যায়নের মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীদের বাড়ী ফিরে যেতে বলি।
পরীক্ষার্থী মৌরি আক্তার অভিযোগ করে বলেন, বৃহস্পতিবার (২৫ জানুয়ারি) বিকেলে আমাদের বিদায় অনুষ্ঠান ও মিলাদ মাহফিলের কথা ছিল। এ অনুষ্ঠানের আমাদের কাছ থেকে প্রধান শিক্ষক চাঁদা নেয়। কিন্তু তিনি চাঁদা নিয়েও বিদায় অনুষ্ঠান করেননি। এমনকি প্রথমে আমাদের বিদ্যালয়ে প্রবেশ করতেও দেননি। প্রধান শিক্ষক বিভিন্ন অযুহাত দেখিয়ে আমাদেরকে বিদ্যালয়ের একটি হলরুমে নিয়ে গিয়ে ৩ জন শিক্ষক দিয়ে তিন মিনিটের একটি মিলাদ করান।
পরীক্ষার্থী সামিয়া বলেন, আমাদের স্কুলে ৫১ জন শিক্ষক ছিল, কিন্তু বিদায় অনুষ্ঠানে প্রধান শিক্ষক কাউকে আসতে দেননি। উনি নিজে অফিস কক্ষে বসে ছিলেন। মাত্র তিন জন শিক্ষককে পাঠিয়েছেন আমাদের বুঝিয়ে বাড়ী পাঠিয়ে দিতে বলেন।
নুসরাত বলেন, প্রধান শিক্ষক শিউলি আক্তার গত দুই বছর আগে আমাদের স্কুলে এসেছেন। উনি আসার পরপর বিভিন্ন অজুহাতে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ফান্ডের নামে টাকা তোলা হয়। প্রতিদিন আমাদেরকে যে খাবার দেয়া হয় তা খুবই নিম্ন মানের। এর প্রতিবাদ করলে বিভিন্নভাবে আমাদেরকে প্রধান শিক্ষক মানসিক নির্যাতন করে। আমাদের অনেক সহপাঠীদের বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে স্কুল থেকে বের করে দিয়েছেন।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার (২৫ জানুয়ারী) একই দাবীতে শিক্ষার্থীরা বিকেল থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচী ও বিক্ষোভ করেছে শিক্ষার্থীরা । পরে নরসিংদী সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার আশ্বাসে শিক্ষার্থীরা রাত সাড়ে ৮টায় জেলা প্রশাসক বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন অবস্থান কর্মসূচী তুলে নিয়ে বাড়ী ফিরে যায়।
Posted ৯:৫৮ অপরাহ্ণ | রবিবার, ২৮ জানুয়ারি ২০২৪
dainikbanglarnabokantha.com | Romazzal Hossain Robel
এ বিভাগের আরও খবর
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।