শুক্রবার ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৫ আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

>>

ধর্মচিন্তা যেভাবে জীবন বদলে দেয়

  |   শুক্রবার, ০৯ অক্টোবর ২০২০   |   প্রিন্ট

ধর্মচিন্তা যেভাবে জীবন বদলে দেয়

ড. আবু সালেহ মুহাম্মদ তোহা : চিন্তা মানবতার একটি অপরিহার্য কার্যকলাপের অন্যতম, যা মানুষের মস্তিস্কের মধ্যে সঞ্চালিত হয়। চিন্তা থেকে কাজের ইচ্ছা জাগ্রত হয়। ইচ্ছা সুদৃঢ় হয়ে সিদ্ধান্ত হয়। এরপর সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করার জন্য উপায়-উপকরণ প্রস্তুত করা হয়। অবশেষে কাজের বাস্তবায়ন হয়। সংযত ও সুচিন্তা মানুষকে ভালো কাজের সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে। ফলে কল্যাণকর কাজের প্রতিফলন হয়। এ জন্যই উন্মুক্ত ও অসৎ চিন্তা ও বুদ্ধির চর্চা ইসলামে গ্রহণযোগ্য নয়।

 

এক. ইসলামের শিক্ষা ছড়িয়ে দেওয়ার চিন্তা

 

আল্লাহ তাআলা মানুষের কল্যাণের জন্য ইসলাম ধর্মকে মনোনীত করেছেন। কিয়ামত পর্যন্ত আর কোনো ধর্ম মহান আল্লাহর কাছে গৃহীত হবে না। আল্লাহ বলেন, ‘আর যে কেউ ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো ধর্ম তালাশ করে, কস্মিনকালেও তা গ্রহণ করা হবে না এবং আখিরাতে সে হবে ক্ষতিগ্রস্ত।’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ৮৫)

 

অন্যত্র আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের জন্য এ ধর্ম (ইসলাম) মনোনীত করেছেন। কাজেই তোমরা মুসলমান না হয়ে মৃত্যুবরণ কোরো না।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৩২)

 

এ জন্য ইসলাম ধর্ম নিয়ে চিন্তা-গবেষণা এবং এর শিক্ষা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দেওয়া ঈমানের দাবি।

 

দুই. সৃষ্টিজগৎ নিয়ে চিন্তা

 

মহান আল্লাহর অপরূপ সৃষ্টিজগৎ নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করা কাম্য। এর মাধ্যমে আল্লাহ তাআলার পরিচয় লাভ করা যায় এবং আল্লাহর প্রতি ঈমানের মাত্রা বেড়ে যায়। যে চিন্তা ও গবেষণা আল্লাহর পরিচয় লাভে ব্যর্থ হয়, তা কাম্য নয়। আল্লাহ বলেন, ‘আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর সৃষ্টিতে, দিন ও রাতের পরিবর্তনে নিদর্শনাবলি রয়েছে বোধশক্তিসম্পন্ন লোকের জন্য, যারা দাঁড়িয়ে, বসে ও শুয়ে আল্লাহর স্মরণ করে এবং আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর সৃষ্টি সম্পর্কে চিন্তা করে ও বলে, হে আমাদের প্রতিপালক, তুমি তা নিরর্থক সৃষ্টি করোনি, তুমি পবিত্র, তুমি আমাদের অগ্নিশাস্তি থেকে রক্ষা করো।’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১৯০-১৯১)

 

তিন. মৃত্যুর চিন্তা

 

মৃত্যুর চিন্তা একটি অন্যতম ইবাদত। পৃথিবীতে আল্লাহ তাআলা মানুষকে একটি নির্ধারিত সময়কাল (হায়াত) দিয়ে প্রেরণ করেন। এই সময়কালের কোনো হেরফের বা কমবেশি হয় না। যার জন্য যতটুকু সময় নির্ধারিত ততটুকু ফুরিয়ে গেলেই জীবন সমাপ্ত হয়ে যায়। মৃত্যুর স্মরণ মানুষকে আখিরাতমুখী করে এবং দ্বিনদার হতে সাহায্য করে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমরা স্বাদ বিনষ্টকারী মৃত্যুকে বেশি করে স্মরণ করো।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৩০৭)

 

চার. পরকালের চিন্তা

 

পরকালের চিন্তা মানবজীবনের গতিই পাল্টে দেয়। যেকোনো গর্হিত আচরণ থেকে অত্যন্ত কার্যকরভাবে বিরত রাখে। এ চিন্তার মাধ্যমেই মূলত মুসলমানরা অন্যান্য জাতির মোকাবেলায় একটি অনন্য বৈশিষ্ট্যপূর্ণ আসনে উত্তীর্ণ হয়। পরকালের চিন্তার প্রতি উৎসাহিত করে আল্লাহ বলেন, ‘হে মুমিনরা! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো, প্রত্যেকেই ভেবে দেখুক আগামীকালের জন্য সে কী অগ্রিম পাঠিয়েছে। আর তোমরা আল্লাহকে ভয় করো, তোমরা যা করো আল্লাহ সে সম্পর্কে অবহিত।’ (সুরা : হাশর, আয়াত : ১৮)

 

পাঁচ. জীবন-ভাবনা

 

নিজের জীবন, জীবনের ধারাবাহিকতা, জীবনের অতীত-বর্তমান, পরকালের প্রস্তুতি ইত্যাদি নিয়ে একটু চিন্তা-ভাবনা করা উচিত। আল্লাহ তাআলা এক অদ্ভুত পরিক্রমায় বান্দাকে সৃষ্টি করেছেন। আবার আল্লাহর কাছেই বান্দাকে ফিরে যেতে হবে। জীবন-ভাবনা মানুষকে বিনয়ী ও কৃতজ্ঞ হতে সহায়তা করে। আল্লাহ বলেন, ‘মানুষের ওপর এমন কিছু সময় অতিবাহিত হয়েছে, যখন সে উল্লেখযোগ্য কিছু ছিল না। আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি মিশ্র শুক্রবিন্দু থেকে—এভাবে যে তাকে পরীক্ষা করব। অতঃপর তাকে করে দিয়েছি শ্রবণ ও দৃষ্টিশক্তি সম্পন্ন। আমি তাকে পথ দেখিয়ে দিয়েছি। এখন সে হয় কৃতজ্ঞ হয়, না হয় অকৃতজ্ঞ হয়।’ (সুরা : হাশর, আয়াত : ১৮)

 

হাদিসেও জীবন-ভাবনায় উৎসাহিত করা হয়েছে। রাসুল (সা.) বলেন, ‘বুদ্ধিমান সে, যে নিজেকে চিনেছে আর মৃত্যুর পরের জীবনের জন্য আমল করে। নির্বোধ সে, যে তার প্রবৃত্তির অনুসরণ করে আর আল্লাহর কাছে আশা রাখে।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৪৫৯)

 

ছয়. সংযত চিন্তা ও বুদ্ধির চর্চা

 

ঈমানদার মানুষের চিন্তা ও বুদ্ধি চর্চা একেবারে স্বাধীন, মুক্ত ও বাধাহীন হতে পারে না। তাদের পার্থিব জীবনের সব কিছুতেই ইসলামী নির্দেশনার বাস্তবায়ন থাকতে হবে। কাজেই ঈমানদার মানুষের চিন্তা ও বুদ্ধি চর্চাও হতে হবে সংযত, মার্জিত ও পরিশীলিত। মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে ঈমানদাররা! তোমরা পরিপূর্ণভাবে ইসলামের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাও আর শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ কোরো না। নিশ্চয়ই শয়তান তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২০৮)

 

এ আয়াত থেকে বোঝা যায়, চিন্তা-চেতনা ও বিদ্যা-বুদ্ধিতেও ইসলামের প্রতিফলন বাধ্যতামূলক। ইসলামের শ্রেষ্ঠত্ব ও গ্রহণযোগ্যতা সন্তুষ্টচিত্তে মেনে নিতে হবে এবং প্রতিটি নির্দেশনা প্রাণপণ দিয়ে বাস্তবায়ন করতে হবে। এখানে দ্বিমুখী চিন্তা-ভাবনার কোনো অবকাশ নেই।

 

সাত. আল্লাহর অস্তিত্ব নিয়ে চিন্তা নয়

 

এমন বিষয় নিয়েও ভাবা যাবে না, যাতে মহান আল্লাহর অস্তিত্ব নিয়ে মনে সংশয়ের জন্ম হয়। আল্লাহ সম্পর্কে চিন্তা ও গবেষণার মাত্রা নির্ণয় করে দেওয়া হয়েছে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, মানুষ পরস্পর জিজ্ঞাসাবাদ করে। এমনকি বলা হয়, এসবকে তো আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন, তাহলে আল্লাহকে কে সৃষ্টি করেছেন? যার এমন প্রশ্ন জাগবে, তার বলা উচিত যে আমি আল্লাহ ও তার রাসুলের প্রতি ঈমান এনেছি। (বুখারি, হাদিস : ৬৮৬৬; মুসলিম, হাদিস : ৩৬০)

 

কাজেই বোঝা যায়, আল্লাহ তাআলার অস্তিত্ব নিয়ে কোনো জিজ্ঞাসাবাদ বা চিন্তা-ভাবনার অবকাশ নেই। এটি শয়তানি প্ররোচনা ও ঈমানবিধ্বংসী অপপ্রয়াস। এমন ধারণা হলেই ঈমানের দিকে ফিরে আসতে হবে।

 

লেখক : সহযোগী অধ্যাপক

 

আরবি বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

Facebook Comments Box

Posted ৯:৩৩ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ০৯ অক্টোবর ২০২০

dainikbanglarnabokantha.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

হাদিসের শিক্ষা
(552 বার পঠিত)

এ বিভাগের আরও খবর

সম্পাদক

রুমাজ্জল হোসেন রুবেল

বাণিজ্যিক কার্যালয় :

১৪, পুরানা পল্টন, দারুস সালাম আর্কেড, ১০ম তলা, রুম নং-১১-এ, ঢাকা-১০০০।

ফোন: ০১৭১২৮৪৫১৭৬, ০১৬১২-৮৪৫১৮৬

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

design and development by : webnewsdesign.com

nilüfer escort coin master free spins