| শনিবার, ০৭ নভেম্বর ২০২০ | প্রিন্ট
নূরদ্দীন দরজী:
বন্ধুর বাড়ি পদ্মার পারে। তার বাড়িতে বেড়ানোর জন্য বার বার নিমন্ত্রণ করে আসছে। যাওয়া সম্ভব হয়ে উঠে নাই। কিন্তু বন্ধু ও বন্ধুর নিমন্ত্রণের কথাটি সব সময়ই মনে ঘুরপাক খাচ্ছিল। হঠাৎ একদিন সন্ধ্যায় কোন কিছু না বলেই চলে গেলাম তার বাড়ি। দেখে কত যে খুশি হয়েছিল তা এখন বুঝানো কোনভাবেই সম্ভব নয়। এক রাত ছিলাম। রাতে খাওয়ার পর দুই বন্ধু অতীতের স্মৃতি ময় ঘটনা নিয়ে অনেক মধুময় গল্প করি। বাড়ি এবং আশপাশের সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে। রাত প্রায় বারোটা বাজে। সুহৃদ বন্ধুটি বললো-এখন ঘুমিয়ে পড়ো। পদ্মাপারের বাড়ি হওয়ায় ঘরদোর তেমন নয়।পাকা ভিটি টিনের চালা। পার্টিশন আছে ঘরে। শুয়ে পড়ার সাথে সাথে ঘুমরানি এলো বুঝি অবস্থা। মনে হলো আজ ভালো ঘুম হবে। কিন্তু এ কি? পার্টিশনের ওপাশে প্রচন্ড ও বিকট আওয়াজ। টিনের শব্দ ও একই সাথে বেরসা স্কুইক !স্কুইক!! ডাক। উঁকি দিয়ে দেখি পার্টিশনের ওপাশে আলুর বস্তা। আর এ বস্তা ঘিরেই ইঁদুরের মহোৎসব। ঘুম চলে গেল নির্বাসনে। প্রহরী না হয়ে ও প্রহরীর মত সারা রাত জাগরণ।
আমরা জানি ও চিনি ইঁদুর এক প্রকার ছোট প্রাণী। প্রাণী ছোট হলেও এরা সর্বনাশ করে বিরাট আকারে, বিশেষ করে কৃষকদের। কৃষি বিভাগের পরিসংখ্যান অনুযায়ী জানা যায়- একটি ইঁদুর বছরে প্রায় দশ হাজার টাকা মূল্যের খাদ্য শস্য নষ্ট করে। বাংলাদেশের ষাট লাখ মানুষের এক বছর যে পরিমাণ খাদ্য লাগে তা ইঁদুর সে বছর বিনষ্ট করে। জমির উঠতি ফসল নষ্ট করে এবং কেটে কেটে কৃষকের রাতের ঘুম হারাম করে। আমন ধান উঠার সময় ইঁদুরের উপদ্রব বৃদ্ধি পায়। ইরি ফসল ও এরা নষ্ট করে প্রচুর। বসত বাড়ি ঘরে ও এদের আক্রমণে মূল্যবান আসবাবপত্র ,দামী জামিকাপড় কুচ কুচ করে কেটে ফেলে। এদের দুগন্ধে দম বন্ধ হয়ে আসে। সুন্দর পরিবেশ ক্ষণিকেই অস্থস্তিকর হয়। ইঁদুর প্লেগসহ অনেক রোগ জীবাণু বহন করে। আমাদের দেশে ইঁদুরের গড় আয়ু প্রায় দুই বছর। আবার দুই মাস বয়স হলেই প্রজননক্ষম হয়। ২১ দিন পর পর ৮টি করে বাচ্চা দেয়। পাহাড়ে এবং সমতলে সর্বত্রই অবাধ চলাফেরা। রাতের বেলা এরা উৎসবে মেতে ওঠে। নদী নালা খাল বিলে ও প্রচুর ইঁদুর রয়েছে। এদের দমনে নানাবিধ কৌশল সহ প্রচুর কীটনাশক ব্যবহার করেও আশানুরূপ ফল পাওয়া যায় না। প্রতি বছর ইঁদুরের বিরুদ্ধে সরকারিভাবে অভিযান ও পরিচালিত হয়।
বিশেষজ্ঞগণ এর মতে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার কারণেই ইঁদুরের দৌরাত্ম অনেক বেড়ে গেছে। পেঁচা ইঁদুরের পরম শত্রু। পেঁচার প্রধান খাদ্যই ইঁদুর। প্রতি দিন কম করে হলেও একটি পেঁচা একটি ইঁদুর খায়। সে হিসেবে একটি পেঁচা বছরে খাবে ৩৬৫টি ইঁদুর। প্রতিটি ইঁদুর যেহেতু বছরে ১০ হাজার টাকার ফসল নষ্ট করে। বছর ভরে পেঁচা ইঁদুর খেলে বেঁচে যাবে বছরে ৩৬৫০০০০ টাকার ফসল। কিন্তু দুঃখের বিষয় যে সে পেঁচা এখন বাংলাদেশে তেমন নেই। পাহাড় অঞ্চলে দেখা গেলেও গ্ৰামাঞ্চলে খুবই কম। আবার আমাদের গ্ৰামাঞ্চলে এক সময় অনেক খেকঁ শিয়াল ও সাপের বিচরণ ছিল। সাপ ও খেঁক শিয়াল প্রচুর ইঁদুর খেতো। বন্যাসহ অনেক সময়ই সাপ মেরে ফেলা হয়েছে এবং হচ্ছে। দলবেঁধে শিয়াল মারা হয়েছে বা তাড়ানো হয়েছে।
সুতরাং, এ কারণে ইঁদুর বৃদ্ধি পাচ্ছে বহুলাংশে। গৃহস্থের বাড়ির বিড়াল আর আগের মত খপ করে ইঁদুর ধরে খেলা করেনা। মানুষের অর্থনৈতিক উন্নয়নের কারণে খাদ্যাভাসে উন্নতি এসেছে। বিড়ালেরা আগের চেয়ে অনেক বেশি খাবার পায় এবং খেয়ে খেয়ে স্ফীত হচ্ছে। পরিশ্রম করে এরা ইঁদুর ধরতে যাবে কেন? প্রয়োজন হয়না। মানুষ না জেনে ,না বুঝে অনেক জীবই মেরে ফেলছি। সাপ কখনো কখনো ভয়ংকর হলেও এরা আমাদের ফসল রক্ষায় সহায়তা করে।
এর পরেও বলতে হয় পৃথিবীতে কোন কিছুই এমনি আসেনি বা অনর্থক সৃষ্টি হয়না।
প্রত্যেক প্রাণীই কোন না কোনভাবে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে। নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে একান্তই জেনে শুনে অন্যান্য প্রাণীর ক্ষতি করেনা। কোন কোন অধিবাসী এখনো ইঁদুর ধরে তাদের খাদ্য হিসেবে। দু, একটি ঔষধ ও শুনেছি ইঁদুর থেকে তৈরি হয়। ক্ষতি বেশি বেশি বলেই এরা প্রতিযোগিতায় টিকতে পারে না। ইঁদুর ধ্বংস করতে হয় মানুষকে নিজেদের স্বার্থে। বিগত পাঁচ বছর ধরে আমাদের দেশে’ জাতীয় ইঁদুর নিধন অভিযান, পরিচালিত হচ্ছে। ২০২০সালে ৭ অক্টোবর ছিল এ অভিযান । প্রতিপাদ্য বিষয় ,-সমন্বিত ইঁদুর নিধন-সুফল পাবে জনগণ,। জাতীয় স্বার্থে বাংলাদেশের মানুষকে অবশ্যই ইঁদুর নিধন করতে হবে। ইঁদুরে বিনষ্ট করার হাত থেকে খাদ্যের সুরক্ষা করতেই হবে। যদি কেউ পারে হেমিলনের বংশিওয়ালা হয়ে বাঁশি বাজিয়ে নিয়ে যাক ইঁদুর অন্য কোনখানে , পাহাড়ের গভীরে বা সাগরের তলদেশে। আমাদের বাঁশি বাজানোর সময় নেই। দেখা মাত্রই ধরবো ইঁদুর -করবো নিধন।
লেখক: কলামিস্ট ও সাবেক উপজেলা শিক্ষা অফিসার (টিইও)
Posted ৯:৪৬ পূর্বাহ্ণ | শনিবার, ০৭ নভেম্বর ২০২০
dainikbanglarnabokantha.com | Romazzal Hossain Robel
এ বিভাগের আরও খবর
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।