নিজস্ব প্রতিবেদক: | মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | প্রিন্ট
চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বজায় রাখতে অনবরত দৌঁড়ঝাপ করছেন বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের এমডি এসএম মাহাবুবুর রহমান। অন্তবর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছিলো ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ শাসন আমলের চুক্তিভিত্তিক সব নিয়োগ বাতিল করা হবে। কিন্তু এ সিদ্ধান্তের পরও এখনো সরানো যায়নি গণঅভ্যুত্থানে পলাতক হাসিনা সরকারের সুবিধাভোগী কর্মকর্তা বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ প্রাপ্ত এমডি এসএম মাহবুবুর রহমানকে।
জানা যায়, চুক্তি বহাল রাখতে তিনি জনপ্রশাসন, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রাণালয়সহ নানা জায়গায় দৌঁড়ঝাপ করে বেড়াচ্ছেন। তার আমলের বিভিন্ন উন্নয়নের ফিরিস্তি তুলে ধরে তাকে স্বপদে বহাল রাখার জন্য তদবির করে বেড়াচ্ছেন। অথচ আওয়ামী পরিবারের একজন হিসেবে নিজেকে তুলে ধরে আওয়ামী লীগ আমলে উপ-সচিব, যুগ্ম সচিব, অতিরিক্ত সচিব হিসেবে পরপর ৩টি পদোন্নতি বাগিয়ে নেন এ কর্মকর্তা। প্রথমবার ৬ জুন ২০২৩ সালে তাকে সচিব হিসেবে পদোন্নতি দেয়ার জন্য তৎকালিন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ.ক.ম মোজাম্মেল হক এবং ৪ জুলাই ২০২৩ সালে সাবেক এমপি শাহজাহান খান জনপ্রশাসন মন্ত্রী ফরহাদ বরাবর ডিও লেটার প্রেরণ করেন। এ নিয়ে সেসময় দৈনিক প্রথম আলো, সমকালসহ বিভিন্ন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়। এরপর সর্বশেষ ০৩ ডিসেম্বর ২০২৩ তারিখ এলপিআর শুরু হবার ২৭ দিন পূর্বে তাকে সচিব পদে পদোন্নতি দিয়ে তিন বছরের জন্য কল্যাণ ট্রাস্টে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়ার জন্য পুনরায়
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ.ক.ম মোজাম্মেল হক
ডিও পত্র দেন। সেখানে তিনি উল্লেখ করেন,
“জনাব এস.এম. মাহাবুবুর রহমান, অতিরিক্ত সচিব (৫৯৯২) এর সহোদর ০৬ ভাই মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। তাঁর বড় ভাই শিকদার মো: জাহিদুর রহমান ১৯৮৪ ব্যাচের পররাষ্ট্র ক্যাডারের সাবেক কর্মকর্তা। বর্তমান মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর
বিরুদ্ধে রাজস্বাক্ষী হতে অস্বীকৃতি জানানোর ফলে পর পর ০৩ বার পদোন্নতি বঞ্চিত হন এবং তাকে লন্ডনস্থ বাংলাদেশ ভবন বিক্রির বিষয়ে অভিযুক্ত করা হয়। ২০০৪ সালের ২৭ ডিসেম্বর অফিসে দায়িত্ব পালনকালে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। এছাড়া ০৪ দলীয় জোট সরকারের আমলে তাঁর পরিবারকে চরম নির্যাতনের শিকার হতে হয়। তাঁর ০২ (দুই) ভাইকে জোরপূর্বক স্বেচ্ছায় অবসরে যেতে বাধ্য করা হয়। এক ভাইকে আড়াই বছর অন্যায়ভাবে Suspend করে রাখা হয়। আরেক ভাইকে ০৫ বৎসরে ০৬ বার বদলী করা হয়। তাঁকেও ২০০১-২০০৬ সময়কাল ৫ বছরে ০৮ বার বদলী করা হয়। এরমধ্যে খাগড়াছড়ি, খুলনার কয়রা, পটুয়াখালীর দুমকিও রয়েছে।”
অথচ এ কর্মকর্তা আওয়ামী লীগ আমলে প্রমোশন ছাড়াও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এপিডি উইং এ এবং ঢাকার ডিসি অফিসের এডিসি হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এপিডি উইং এ সরকারের খাস লোক ছাড়া পদায়ন একেবারেই অসম্ভব। এপিডি উইং এ থাকার ফলে তিনি ঢাকার মত জেলার এডিসির পদটিও বাগিয়ে নেন। সরকারের আস্থাভাজন না হলে ঢাকায় এডিসি হওয়া খুবই কঠিন।
ডিও লেটারটি পর্যালোচনা করলে বোঝা যায় এত বড় ডিও লেটার শতব্যস্ত একজন মন্ত্রী বা এমপির পক্ষে লেখা সম্ভব নয়। অত্যন্ত ধুরন্ধর এ কর্মকর্তা নিজে ডিওগুলো লিখে তাদেরকে দিয়ে স্বাক্ষর করে নিয়েছেন বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। তিনি এই ডিও দ্বারা তাকে বিএনপি সরকারের আমলের একজন নির্যাতিত কর্মকর্তা হিসেবে পরিচয় দিয়ে চরম সুবিধা নিয়েছেন। এখন আবার চুক্তি ধরে রাখার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
বিএনপি ও চারদলীয় জোট সরকারের আমলে নির্যাতিত কর্মকর্তা হিসেবে পরিচয় দিয়ে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সুবিধা নেয়া মাহাবুব এখনও কিভাবে কল্যাণ ট্রাস্ট্রের এমডি হিসেবে কাজ করছেন আর কেনই বা তার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করা হচ্ছে না সেটি এখন সবার মুখে মুখে।
Posted ১১:৩৫ পূর্বাহ্ণ | মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪
dainikbanglarnabokantha.com | Romazzal Hossain Robel
এ বিভাগের আরও খবর
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।