| শনিবার, ১০ অক্টোবর ২০২০ | প্রিন্ট
নূরুদ্দীন দরজী: বর্তমান সময় প্রেক্ষাপটে সবচেয়ে প্রাসঙ্গিক বিষয়টি নিয়ে লিখতে বসেছি। সুহৃদ পাঠকগণ নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন প্রসঙ্গ কি। আজ কদিন যাবত যে বিষয় নিয়ে সর্ব মহলে বিশেষ করে পত্র পত্রিকায় হেডলাইন হয়ে আসছে – ধর্ষণ ও ধর্ষক। শব্দ দুটি উচ্চারণ করতে ও ঘৃনা হয়। আমাদের বাংলা ভাষায় প্রায় এক লাখ পঁচিশ হাজার শব্দ ব্যবহার হয়ে আসছে। আমার সাথে অবশ্যই অনেকে ঐক্যমত পোষণ করবেন, এ দুটি শব্দের চেয়ে ঘৃণিত শব্দ বোধ হয় আর একটিও নেই। বাঙালি সভ্য জাতি , তাদের রয়েছে ইতিহাস আছে সংস্কৃতি। আয়তনে জন সংখ্যানুপাতে কম হলেও বিশ্বে রয়েছে আমাদের সুপরিচিতি। আমরা উন্নয়নের সিঁড়ি বেয়ে বেয়ে এগিয়ে যাচ্ছি দীপ্ত পদভারে। তাদের মাঝে ও তাদের সমাজে এমন ঘৃণিত কাজ কোনভাবেই সহ্য করা যায় না।
সিলেটে এমসি কলেজে স্বামীকে আটকে রেখে নব বিবাহিত স্ত্রীকে পাষান্ডের দল যেভাবে ধর্ষণ করেছে তার বর্ণনা লিখতে লজ্জা লাগে। লজ্জা নারীর প্রধান ভূষণ- নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে একজন নারীকে বিবস্ত্র করে পৈশাচিক যে নির্যাতন চালানো হয়েছে এ দুঃখ রাখার জায়গা নেই। শুধুই সিলেট ও নোয়াখালী নয় শকুনের দল সামান্যতম সুযোগ পেলেই মেয়েদের উপর ঝাপিয়ে পড়ে। কুপ্রবৃত্তি চরিতার্থ করতে চেষ্টা করে। প্রতিদিন দেশের কোন না কোন স্থান থেকে এমন সব ঘৃণিত খবর আমাদের শুনতে হয়। এসব শুনে বধির হয়ে যাবার উপক্রম।
নর পশুরা একবারও চিন্তা করে না- নারীরা আছে বলেই পরিবার, সমাজ ,সংসারও সভ্যতার আজকে অভূতপূর্ব উন্নয়ন। মানব সভ্যতার উষালগ্মে মেয়েদের উদ্যোগেই শান্তির নীড় রচিত হয়েছিল। কৃষি কাজের সূচনা করেছিল তারাই। ঘরবাড়ি বেঁধে সুখী ও সুন্দর জীবন যাপনের স্বপ্ন রঙিন করেছিল নারীরাই। সেটি না হলে বোধ হয় আজও থাকতে হতো বর্বর। মানুষ জাতিকে অগ্ৰগতি ও উন্নতির পথে আনতে আমাদের নারীগণ অনেক ত্যাগ ও কষ্ট স্বীকার করেছেন। কবি নজরুল যথার্থই বলেছেন,’পুরুষ হৃদয়হীন, মানুষ করিতে নারী দিল তারে আধেক হৃদয় ঋণ, আজ সমগ্ৰ দেশ কতিপয় পাপিষ্ট বিকৃত রুচির মানুষ নামক পশুদের বিরুদ্ধে সোচ্চার। নারী পুরুষ নির্বিশেষে সবাই রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করছে। তাদের শেষ বিচারের ব্যবস্থা না করে আমাদের শান্ত হওয়া যাবে না। নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে এসব ধর্ষকদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের বিশাল প্রাচীর গড়ে তুলতে হবে। আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সরকার ইতিমধ্যেই ধর্ষণের বিরুদ্ধে ধর্ষকদের মৃত্যুদণ্ড প্রদানের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়েছেন। প্রয়োজনের নিরিখে তাই করতে হবে। বিশ্বের অনেক দেশে এমন সব ধর্ষকদের জন্য কঠিন আইন প্রচলিত আছে। ইউক্রেনে আইন করা হয়েছে ধর্ষণকারীকে ইনজেকশন পুশ করে নপুংশক করে দেওয়ার। যুক্তরাষ্ট্রের আলবামা রাজ্যে ও এমন আইন রয়েছে। রাশিয়ার কাজাখস্তানে রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় ধর্ষকদের খোঁজা করে দেওয়ার বিধান রয়েছে। প্রাচীন কালে মোঘল সাম্রাজ্যে ও এমন রেওয়াজ ছিল।
সরকারের পাশাপাশি বাংলাদেশে আমাদের ও শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। গাম্য সালিশীসহ সকল বিচারে এদের মোটেও ছার দেওয়া যাবেনা। তাদের কুকর্ম যেখানেই পরিলক্ষিত হবে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। পুলিশের সহায়তায় তাদের চূড়ান্ত বিচারের আওতায় আনতে হবে। আমাদের মা বোনদের এগিয়ে আসতে হবে। ভয়ের কিছুই নেই। আমাদের মেয়েরা দেশের উন্নয়নে যেভাবে অবদান রাখছে , বিভিন্ন সেক্টরে বিশেষ করে- সেনাবাহিনী, পুলিশ, ডিসি, এসপি প্রশাসনের উচ্চ পদে তারা আসীন। তাদের অবশ্যই নিজেদের সুরক্ষায় অগ্ৰগামী হতে হবে। সাহস নিয়ে বাঁধা দিতে হবে। আমরা সবাই মিলে ধর্ষণের মত এমন সব অনৈতিকতার কপাট চিরতরে বন্ধের জন্য সম্মিলিত ভাবে সচেষ্ট হতে হবে। এ সমস্ত কুকীর্তি চির অবসানের ব্যবস্থা করে অবশ্যই এগিয়ে যাব উন্নয়নের পথে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে। কবির বাণী ব্যর্থ হয়না, হবে ও না কোনদিন। শেষ করছি বিদ্রোহী কবির চরণ দিয়ে-নর বাহে হল নারী বহে জল, সেই জল মাটি মিশে , ফসল হইয়া ফলিয়া উঠিল সোনালী ধানের শীষে। অবশ্যই আমরা করবো সকল দুর্বৃত্তায়নের অবসান, হবো সুখী দেশ। বাঁচবো নারী পুরুষ সবাই মিলে।
লেখক: কলামিস্ট ও সাবেক উপজেলা শিক্ষা অফিসার (টিইও)
প্রকাশ সম্পাদনা: শান্ত বণিক
Posted ১:৩৯ অপরাহ্ণ | শনিবার, ১০ অক্টোবর ২০২০
dainikbanglarnabokantha.com | Romazzal Hossain Robel
এ বিভাগের আরও খবর
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।