আব্দুর রহমান, গাজীপুর সংবাদদাতা : | মঙ্গলবার, ০৮ নভেম্বর ২০২২ | পড়া হয়েছে 67 বার
গাজীপুরে পরিবেশ দূষণ থেকে উত্তরণের উপায় নিয়ে একটি গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়েছে। গাজীপুরে একটি জলাশয় ও দূষণমুক্ত নেই। পরিবেশ দুষণে মারাত্মকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। জলাশয় সংকুচিত হওয়া, দখল হওয়া, কারখানা ও গৃহস্থালির বর্জ্য ফেলা, বনের জমিতে কলকারখানা নির্মাণ, বসতবাড়ি-পার্ক নির্মাণ, প্রাকৃতিক বনজ গাছ কেটে ভিন্ন প্রজাতির গাছ রোপণসহ নানা কারণে দূষণ হচ্ছে। সোমবার সকালে গাজীপুর পিটিআই’র শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার অডিটোরিয়াম এ গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বেলা, বাংলাদেশ নদী পরিব্রাজক দল, ক্যাথলিক এজেন্সি ফর ওভারসিস ডেভেলপমেন্ট ও সুইডেন স্ভেরিজের যৌথভাবে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বেলার প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রেজওয়ানা হাসান।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন গাজীপুর জেলা প্রশাসক আনিসুর রহমান। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন গাজীপুর সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা নদী রক্ষা কমিটির সদস্য এডভোকেট রিনা পারভীন, গাজীপুর ভাষা শহীদ কলেজের অধ্যক্ষ মুকুল কুমার মল্লিক, রিভার এন্ড ডেন্ট রিসার্চ সেন্টার চেয়ারম্যান মোহাম্মদ এজাজ।
নদী পরিব্রাজক দলের গাজীপুরের সভাপতি মোশারফ হোসেন বলেন, মোগরখালের পাড়ে মাদ্রাসা, মসজিদসহ স্থাপনা নির্মাণ করা হচ্ছে। মোগরখালটি ৯টি গ্রামের বুক চিরে প্রবাহিত। খালের দুই পাশে ২০টি গ্রামের উপকারভোগী মানুষ রয়েছে। হাজার হাজার একর জমি আবাদ হয় খালের পানি দিয়ে। যদিও আমরা এখন আর কৃষি জমি আবাদ করতে পারছি না। অতি সম্প্রতি খালের ওপর ব্রিজ নির্মাণ করে খালের প্রবাহ উল্টোদিকে ঘোরানো হয়েছে। ব্রিজটি খালের পানি প্রবাহের দিকে করার অনুরোধ করেন তিনি।
গাজীপুর ইতিহাস ঐতিহ্য উন্নয়ন’র চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. শামসুল হক বলেন, জলাশয়ের আইনের কারণে বিজিএমইএ’র ৫০০ কোটি টাকার ভবনটি ভেঙে ফেলা হয়েছে। কাগজপত্রে গাজীপুরের জনসংখ্যা দেখানো হয় ২৬ লাখ। কিন্তু বাস্তবে রয়েছে ৭০ লাখ। ২৬ লাখ জনগোষ্ঠীর বর্জ্যের জন্য প্রতিদিন ৭০ শতক জায়গার প্রয়োজন।
গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার আব্দুল্লাহ মৃধা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের পাশ দিয়ে খালের পানিতে বিষাক্ত বর্জ্য প্রবাহিত হচ্ছে। এর প্রভাবে গবেষণাগারের মাছের মধ্যে এমন রোগ হয় যা টেস্ট করে পাওয়া যায় না। অর্গানিক পরিবর্তন করে এমনটি হয়েছে। গরুর জন্য চাষ করা ঘাসের মধ্যে এমন কিছু বিষ দেখা গেছে, যা গাভী খাওয়ার পর দুধ পর্যন্ত বিষাক্ত হয়ে উঠেছে। তিনি পরিবেশ দূষণে এসবের প্রতিকার দাবি করেন।
গাজীপুরের জেলা প্রশাসক আনিসুর রহমান বলেন, ‘জেলায় সরকারের একজন প্রতিনিধি হিসেবে আমার অনেক দায় রয়েছে। গত ৩০ বছরে গাজীপুরে অর্থনৈতিক পরিবর্তন হয়েছে। আগে জলাশয়ের যে প্রবাহ খাল-বিলে ছিল, এখন আর নেই। অনেক সীমাবদ্ধতার মধ্য দিয়ে বিভিন্ন সময় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে দোষীদের নিবৃত করার চেষ্টা করেছি।’ একটি গণমাধ্যমের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, সিটি করপোরেশনের ২০৬ টি পুকুর বেদখল হয়ে গিয়েছে।
তিনি বলেন, ‘সেখানে ইতোমধ্যে আমরা ৮টি পুকুর উদ্ধার করেছি। আমার কাছে এনফোর্স করার মতো সুযোগ রয়েছে কিন্তু সাসটেইন করার মতো বাজেট নেই।’ সাসটেইন করার দায়িত্ব তিনি জনসাধারণকে নেওয়ার আহ্বান জানান। মানুষের সম্পৃক্ততা ছাড়া গাজীপুরের সুস্থ পরিবেশ ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয় বলে জানান জেলা প্রশাসক।
এতে বিশেষ আলোচক হিসেবে আলোচনা করেন বাংলাদেশ রিভার ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ মনির হোসেন,। গণশুনানিতে গাজীপুরের শিল্প দূষণ, নদী-খাল-জলাশয়ের বর্তমান অবস্থা, বন দখল, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং জনদুর্ভোগ বিষয়ক উপস্থাপনা করেন গাজীপুর ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক অসীম বিভাকর।
এসময় জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে আসা বাংলাদেশ নদী পরিব্রাজক দলের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক, স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মী, সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তাসহ জেলার নদ-নদী কেন্দ্রিক নানা শ্রেণি পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
এসময় সকলে গাজীপুরের পরিবেশগত সমস্যা তুলে ধরেন যেমন-অপরিকল্পিত শিল্পায়ন,নদী দখল ও দূষণ, পুকুর ও জলাশয় দখল, শালবন দখল, জলাশয় ও ভাওয়াল গড় দখল, অপরিকল্পিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, অননুমোদিত ইটভাটা ও বায়ু দূষণ নিয়ে সমস্যার উত্তরণের উপায় শীর্ষক গণগুনানি হয়।
কিং আউটলেটের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন
বাংলাদেশ সময়: ৪:৫৮ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ০৮ নভেম্বর ২০২২
dainikbanglarnabokantha.com | Romazzal Hossain Robel