গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে ইউএনও’র বন্ধ করা সেই বাল্যবিয়ে আবারও আয়োজন করে সম্পন্ন করার অভিযোগ উঠেছে খোদ পৌরসভার কাউন্সিলর মাজেদুর রহমান রুনু প্রামাণিকের বিরুদ্ধে। গত ৩০ আগস্ট রাতে আয়োজন করে তিনি তার নিজ বাসায় এ বাল্যবিয়ের অনুষ্ঠান সম্পন্ন করেন। এ ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। প্রশ্ন দেখা দিয়েছে আসলে ক্ষমতা কার বেশি। ইউএনও‘র না কাউন্সিলরের। মাজেদুর রহমান রুনু প্রামাণিক পৌরসভার ২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও ওই ওয়ার্ডের মৃত মজিবর রহমানের ছেলে। বেলকা ইউনিয়নের কাজী আবু রায়হান এ বাল্য বিয়ে রেজিষ্ট্রি করেন এবং বাহিড়গোলা জামে মসজিদের ইমাম হাফেজ মাওলানা রুহুল আমিন এ বিয়ে পড়িয়ে দেন। জানা যায়, উপজেলার দহবন্দ ইউনিয়নের দক্ষিণ বামনজল (দোবাপাড়া) গ্রামের ইমদাদুল হকের ছেলে আব্দুস সালাম মিয়া (১৬)। সে ঢাকার একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে দশম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত। মেয়ে নাছিমা আক্তার (১৪) পৌরসভার ২নং ওয়ার্ডের বামনজল (হেলিপ্যাড) গ্রামের আফফার আলীর। সুন্দরগঞ্জ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত মেয়েটি। ছেলে-মেয়ের বয়স না হওয়ায় বিয়ে দিতে সাহস পায়নি তাদের পরিবারের লোকজন। পরে কাউন্সিলর তার নিজ বাসায় আয়োজন করে এ বিয়ের অনুষ্ঠান সম্পন্ন করেন। স্থানীয়দের অভিযোগ, ইতিপূর্বে এই বিয়েটি আরও একবার হয়েছিলো। বাল্যবিয়ে প্রামাণিত হওয়ায় সুন্দরগঞ্জের দায়িত্বে থাকা তৎকালিন উপজেলা নির্বাহী কর্মকতা (ইউএনও) কাজী লুৎফুল হাসান বিয়েটি বাতিল করেছিলেন। সেটি আবারও সম্পন্ন করলেন প্রভাশালী কাউন্সিলর। অথচ এখনও তাদের বয়স হয়নি। তারা বলেন, কাউন্সিলর হলেন সরকারের মাঠ পর্যায়ের একজন জনপ্রতিনিধি। বাল্যবিয়ে রোধে ভুমিকা থাকার কথা ছিলো তাঁর। কিন্তু তিনি সেটি না করে নিজে উপস্থিত থেকে তাঁর নিজ বাসায় বাল্যবিয়েটি সম্পন্ন করেছেন। আমরা সাধারণ মানুষ। আইনকে শ্রদ্ধা করি। তাই বিয়েটি দিতে নিরুৎসাহিত করেছিলাম ছেলে-মেয়ের পরিবারকে। কি লাভ হলো! এ বিষয়ে বর আব্দুস সালাম বলেন, ‘আমার শ্বশুর বাড়ির লোকজন তাদের বাসায় বিয়ে পড়াতে সাহস না পেয়ে ওই কাউন্সিলরের বাসায় বিয়ে রেজিষ্ট্রি করেন।’ সংরক্ষিত নারী (১,২,৩) কাউন্সিলর রুবিয়া বেগম বিয়ে পরানোর বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ‘এ বিয়েটি আরও একবার পড়ানো হয়েছিলো। বাল্যবিয়ে প্রমাণিত হওয়ায় ইউএনও কাজী লুতফুল হাসান স্যার সেটি বাতিল করে দিয়েছিলেন। এখনও ছেলে-মেয়ের বয়স হয়নি। কিন্ত কমিশনার রুনু নিজে উপস্থিত থেকে তার বাসায় আবারও বিয়েটি সম্পন্ন করেন।’ এ বিষয়ে কাজী আবু রায়হান বাল্যবিয়ে রেজিষ্ট্রি করার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, ‘এ বিয়ে কেন? গত দু’মাসে আমি কোনো বিয়ে পড়াইনি।’ ইমাম হাফেজ মাওলানা রুহুল আমিন কমিশনার মাজেদুর রহমান রুনুর বাসায় বিয়েটি পড়ানো হয়েছে নিশ্চিত করে বলেন, ‘পাপের ভাগিদার হওয়া যাবে না। সে কারণে আমি বিয়েটি পড়ে দিয়েছি।’ কাউন্সিলর মাজেদুর রহমান রুনু প্রামাণিক বলেন, ‘আমি একজন কাউন্সিলর। এ ধরণের কাজ আমার দ্বারা কখনো সম্ভব না। আমার সুনাম নষ্ট করতে কয়েকজন গাঁজারু এ অপপ্রচার চালাচ্ছে।’ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ-আল-মারুফ বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দেখছি। তিনি আরও বলেন, যারা একাজগুলো করেন কোনো প্রামাণ না রেখে তাঁরা সু-কৌশলে কাজগুলো করে থাকেন