শনিবার ৭ ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২২ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

>>

কুলি থেকে কোটিপতি আবেদ আলী : পিএসসির প্রশ্নপত্র ফাঁস

  |   মঙ্গলবার, ০৯ জুলাই ২০২৪   |   প্রিন্ট

কুলি থেকে কোটিপতি আবেদ আলী : পিএসসির প্রশ্নপত্র ফাঁস

পিএসসির সাবেক ড্রাইভার সৈয়দ আবেদ আলী জীবন। বাড়ি মাদারীপুর জেলার ডাসার উপজেলার পশ্চিম বোতলা গ্রামে। ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় ঢাকায় চলে যান তিনি। এরপর জীবনযুদ্ধে নেমে পড়েন।

প্রথমে কুলির কাজ দিয়ে শুরু হয় তার কর্মজীবন। এরপর রিকশা চালানো, হোটেলে কাজ, চাল বিক্রি করাসহ নানা পেশায় নেমে পড়েন সৈয়দ আবেদ আলী।

এরপর ড্রাইভিং শিখে চাকরি নেন পিএসসিতে। এতে ভাগ্য খুলতে থাকে তার।

বর্তমানে তিনি বহু টাকা ও সম্পত্তির মালিক। ডাসার উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হওয়ার স্বপ্নও দেখছেন আবেদ আলী। নিজ গ্রামে গড়ে তুলেছেন তিনতলা বিশিষ্ট দৃষ্টিনন্দন দালানঘর। কুয়াকাটায় আছে তার সান মেরিন হোটেল, একটি পাকা মসজিদ ও বাগান। কিনেছেন বহু ফসলি জমিও।

সরেজমিন ঘুরে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, মাদারীপুর জেলার ডাসার উপজেলার পশ্চিম বোতলা গ্রামের মৃত সৈয়দ আব্দুর রহমানের ছেলে সৈয়দ আবেদ আলী জীবন। তারা তিন ভাই, এক বোন। ছোট বেলায় তার বাবা মারা যান। তখন তার মা অনেক কষ্টে সংসার চালান।

মানুষের জমিতে ধান কুড়িয়ে বিক্রি করে সংসারের খরচ জোগাড় করতেন তিনি। এমনকি কোরবানির ঈদের সময় মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে মাংস কুড়িয়ে বিক্রি করে খাবার কিনতে হতো সৈয়দ আবেদ আলীর মা।

ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় অভাবের কারণে পড়াশোনা বাদ দিয়ে জীবন জীবিকার জন্য ঢাকায় চলে যান তিনি। শুরু করেন কুলির কাজ। বহুরাত একা একা রেলস্টেশনে ঘুমিয়েছেন। কখনো কখনো রাতে ফুটপাতেও ঘুমিয়েছেন তিনি। এরপর ড্রাইভিং শিখে পিএসসির চেয়ারম্যানের চালক হিসেবে চাকরি নেন সৈয়দ আবেদ আলী জীবন।খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তার বড় ভাই জবেদ আলী একজন কৃষক। বাড়িতে কৃষি কাজ করে সংসার চালান তিনি। এক বছর ধরে তার এক ছেলেকে ইতালী পাঠিয়েছেন তিনি। আবেদ আলী মেঝ, ছোট ভাই সাবেদ আলী। তিনিও দীর্ঘদিন সৌদি আরবে ছিলেন। সম্প্রতি দেশে এসে ধার-দেনা করে ছেলেকে লিবিয়া হয়ে ইতালী পাঠানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু পাঁচ মাস অতিবাহিত হলেও এখনো ইতালী যেতে পারেনি। ডাসার উপজেলার পশ্চিম বোতলা গ্রামের পৈত্রিক ভিটায় এক তলার বিল্ডিং বাড়িতে দুই ভাই থাকেন।

এদিকে সাবেক ড্রাইভার সৈয়দ আবেদ আলী জীবন পৈত্রিক ভিটা থেকে বেশ দূরে জমি কিনে তিনতলা বিশিষ্ট দৃষ্টিনন্দন বাড়ি বানিয়েছেন। বর্তমানে বাড়িটির রঙের কাজ চলছে। বাড়ির সামনে গড়ে তুলেছেন সৈয়দ আবেদ আলী কেন্দ্রীয় মসজিদ ও ইদগাহ মাঠ। পাশেই আছে আমসহ বিভিন্ন গাছের ছোট্ট একটি বাগান।তাছাড়া নিজ নামে, স্ত্রী, সন্তান, শ্বশুর-শাশুড়িসহ বিভিন্ন নামে বহু জমি কিনেছেন সৈয়দ আবেদ আলী। বড় ছেলে সৈয়দ সোহানুর রহমান সিয়ামকে পড়িয়েছেন ভারতে। সিয়াম বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, ঢাকা মহানগর উত্তরের ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সম্পাদক এবং মাদারীপুরের ডাসার উপজেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি। ছোট ছেলে ও মেয়ে ঢাকাতে পড়াশোনা করেন। ঢাকাতেও তার বাড়ি ও দামি গাড়ি আছে। পরিবার নিয়ে ঢাকাতে থাকেন সৈয়দ আবেদ আলী। মাসে দুই একবার আসেন গ্রামের বাড়িতে।

দীর্ঘদিন ধরে ডাসার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনের জন্য প্রচার প্রচারণাও চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি।সৈয়দ আবেদ আলী বাড়িতে এসে গ্রামের বিভিন্ন গরীব-অসহায় মানুষদের নানা ধরনের সহযোগিতা করে থাকেন। এবার কোরবানির ঈদে বহু মাংস গরীব মানুষের মধ্যে বিলি করেছেন। এজন্য গ্রামের মানুষ তাকে অনেক পছন্দ করেন। তারা সৈয়দ আবেদ আলীর এ ধরনের অভিযোগ কিছুতেই মানতে পারছেন না।

জানা যায়, সৈয়দ আবেদ আলী জীবন রাস্তার পাশে সরকারি জায়গা দখল করে গরুর খামার ও মার্কেট নির্মাণের চেষ্টা করেন। পরে সেই কাজ বন্ধ হয়ে যায়। ডাসার উপজেলার পান্তাপাড়া ও পূর্ব বোতলা গ্রামেও তার জমি আছে। কয়েক মাস আগেও এলাকার মানুষ তাকে তেমন একটা চিনতেন না। গত কোরবানির ঈদে দামি গাড়িতে চড়ে ১০০ জনকে এক কেজি করে মাংস বণ্টন করেন। সেই ভিডিও শেয়ার করেন নিজের ফেসবুকে। আবেদ আলীর ছেলে সিয়ামও দামি গাড়ি ব্যবহার করেন।এদিকে সৈয়দ আবেদ আলীর গ্রামের বাড়িতে গেলে তালাবদ্ধ পাওয়া যায়। এসময় বাড়িতে কাউকে পাওয়া যায়নি।স্থানীয় মিন্টু সরদার বলেন, আবেদ  (সৈয়দ আবেদ আলী) আমার কাছ থেকে ২৬ শতাংশ জমি কিনেছেন।

প্রায় এক বছর আগে আমি তার কাছে এই জমি বিক্রি করেছি।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই গ্রামের কয়েকজন বলেন, আবেদ আলী গ্রামে বহু ফসলি জমি কিনেছেন। নিজের নামে, স্ত্রী, সন্তান ও শ্বশুর-শাশুড়ির নামেও কিনেছেন জমি। যা তদন্ত করলে বেড়িয়ে আসবে।প্রতিবেশ আব্দুর রহিম মাতুব্বর বলেন, আবেদ আলী অনেক কষ্ট করেছেন। তিনি কুলির কাজ, হোটেলে কাজ, রিকশা চালানো, চাল বিক্রিসহ নানা কাজ করেছেন। ফুটপাতেও থেকেছেন। গাড়ি চালানো শিখে তিনি ড্রাইভারের চাকরি করেছেন। ধাপে ধাপে তিনি ধনী হয়েছেন। বর্তমানে তিনি গাড়ির ব্যবসা, হাউজিং ব্যবসা, জমির ব্যবসায়সহ নানা ধরনের ব্যবসা করেন। ব্যবসা করেই তিনি বড়লোক হয়েছেন।ডাসার বালীগ্রাম ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বার সেলিম ফকির বলেন, সৈয়দ আবেদ আলী অত্যন্ত ভালো মানুষ। তিনি অনেক কষ্ট করে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।

এলাকার মানুষদের অনেক সহযোগিতা করেন। তার এই প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ আমরা কিছুতেই মানতে পারছি না।দুর্নীতি দমন কমিশনের মাদারীপুর সমন্বিত কার্যালয়ের উপ-পরিচালক আতিকুর রহমান বলেন, বিষয়টি নিয়ে কেউ অভিযোগ দিলে আমরা প্রধান কার্যালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে অনুসন্ধান করব।মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মারুফুর রশীদ বলেন, পিএসসি’র সাবেক ড্রাইভার সৈয়দ আবেদ আলী জীবনের সম্পত্তির ব্যাপারে খোঁজ-খবর নেয়া হচ্ছে। এ ব্যাপারে সত্যতা পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

Facebook Comments Box

Posted ১:৩০ পূর্বাহ্ণ | মঙ্গলবার, ০৯ জুলাই ২০২৪

dainikbanglarnabokantha.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

সম্পাদক

রুমাজ্জল হোসেন রুবেল

বাণিজ্যিক কার্যালয় :

১৪, পুরানা পল্টন, দারুস সালাম আর্কেড, ১১ম তলা, রুম নং-১১-এ, ঢাকা-১০০০।

ফোন: ০১৭১২৮৪৫১৭৬, ০১৬১২-৮৪৫১৮৬, ০২ ৪১০৫০৫৯৮

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

design and development by : webnewsdesign.com

nilüfer escort coin master free spins