মঙ্গলবার ৮ জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৪ আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

>>

কিডনি কেনা-বেচার সাথে জড়িত আন্তঃদেশীয় দালালচক্রের সক্রিয় ০৩ সদস্যকে গ্রেফতার

  |   রবিবার, ১২ মে ২০২৪   |   প্রিন্ট

কিডনি কেনা-বেচার সাথে জড়িত আন্তঃদেশীয় দালালচক্রের সক্রিয় ০৩ সদস্যকে গ্রেফতার

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের রমনা বিভাগের ধানমণ্ডি থানা পুলিশ কর্তৃক বিশেষ কায়দায় নিম্ন আয়ের সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে কিডনি কেনা-বেচার সাথে জড়িত আন্তঃদেশীয় দালালচক্রের ০২ সদস্যকে ১১ মে ২০১৪ ধানমন্ডি ২/এ রোডস্থ ইবনেসিনা আয়াগনোস্টিক সেন্টার এর সামনে হতে গ্রেফতার করেছে ও পরবর্তীতে ধৃত আসামী রাজু হাওলাদারের দেওয়া তথ্যমতে ১২ মে ২০১৪ ভোর ০৫:৩০ ঘটিকায় বাগেরহাট হতে অভিযান পরিচালনা করে অপর একজন আসামীকে গ্রেফতার করা হয়। (এজাহারনামীয় ৬ জন সহ অজ্ঞাতনামা আরোও ১০/১২ জনের বিরুদ্ধে ধানমন্ডি মডেল থানায় মামলা হয়)

গ্রেফতারকৃত আসামীদের নামঃ ১। মোঃ রাজু হাওলাদার (৩২), ২। শাহেদ উদ্দীন (২২), ৩। মোঃ আতাহার হোসেন বাপ্পী (২৮) (এজাহারে ৪ নং আসামী)।

উক্ত দালালচক্রের খপ্পরে পড়ে কিডনি হারানো ভিকটিম জনৈক রবিনের (৩৩) এজাহারে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে এপ্রিল মাসের কোনো এক তারিখে মিরপুর-১০ নং শাহ আলী মার্কেটের পিছনে চায়ের দোকানে রবিন তার এক বন্ধুর সাথে চা খাচ্ছিল এবং সংসারের অভাব অনটন নিয়ে কথাবার্তা বলছিল। উক্ত কথাবার্তা চলাকালীন পাশে বসা অভিযুক্ত ৩নং পলাতক আসামী মাছুমও (২৭) চা পান করছিল। এসব কথাবার্তা শুনে মাছুম নিজ থেকেই ভিকটিমকে বলে যে, ভারতে তার ব্যবসা আছে এবং উক্ত প্রতিষ্ঠানে চাকুরি দিতে পারবে। একপর্যায়ে মোবাইল নম্বর আদান প্রদান হয় এবং পরবর্তীতে ৩নং পলাতক আসামীর সাথে প্রায় ১৫/২০ দিন মোবাইলে কথা হয়। অভিযুক্ত ৩নং পলাকত আসামী মাছুম (২৭) ভিকটিমকে ভারত নিয়ে যাবে এবং সকল কার্যক্রম করবে মর্মে প্রস্তাব দেন, যাতে ভিকটিম রাজি হয়।

পরবর্তীতে ৩নং পলাতক আসামী ভিকটিমকে পাসপোর্ট করে দিতে সহায়তা করে বলে যে, ভারতে তার প্রতিষ্ঠানে চাকুরির জন্য যেতে হলে ডাক্তারি কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হবে। গত ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৩ সকাল অনুমান ১০:৩০ ঘটিকার সময় ধানমন্ডি মডেল থানাধীন ৪নং রোডস্থ ল্যাব এইড হাসপাতালে ভিকটিমকে নিয়ে যায় এবং সেখানে অভিযুক্ত ১নং ধৃত আসামী মোঃ রাজু হাওলাদার (৩২) এর সাথে পরিচয় হয়। অভিযুক্ত ১নং ধৃত আসামী ও ৩নং পলাতক আসামী উক্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষার রিপোর্ট সংগ্রহ করে ভারতের ভিসা করানোর জন্য ভিকটিমের নিকট হতে পাসপোর্ট নিয়ে নেয়। ভিসার সকল কার্যক্রম শেষ করে অভিযুক্ত ১নং ধৃত আসামী ও ৩নং পলাতক আসামী ভিকটিমের সাথে অভিযুক্ত ২নং ধৃত আসামী শাহেদ উদ্দিন (২২) এবং ৪নং ধৃত আসামী মোঃ ‘আতাহার হোসেন বাপ্পি (২৮) দ্বয়ের সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়ে বলে যে, তারা একে অপরের ব্যবসায়িক পার্টনার, বাংলাদেশ ও ভারতে তারা যৌথভাবে ব্যবসা পরিচালনা করে। আসামীরা অনলাইনে বিমানের টিকেট ক্রয়পূর্বক ভিকটিমের হোয়াটস্ এ্যাপ এ প্রেরণ করে। উক্ত টিকেট নিয়ে ভিকটিম গত ২২ ডিসেম্বর ২০২৩ বিকাল ০৪:২৫ ঘটিকার সময় ঢাকা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর হতে ইনডিগো এয়ারলাইনস এর বিমানে করে ভারতের নয়া দিল্লিতে পৌঁছায়। সেখানে অভিযুক্ত ৫নং ও ৬নং পলাতক আসামীরা ভিকটিমের ছবির প্রিন্ট কপি নিয়ে ভিকটিমকে রিসিভ করার জন্য অপেক্ষারত ছিল। ভিকটিমকে রিসিভ করেই অভিযুক্ত ৫নং ও ৬নং পলাতক আসামীরা পাসপোর্ট কেড়ে নেয় এবং ভাড়াকৃত একটি প্রাইভেট কারযোগে প্রায় ০১ ঘন্টা ২০ মিনিটের দূরত্বে ভারতের ফরিদাবাদ এলাকায় ৫৬৪ নম্বর বাসায় (২ তলা বিশিষ্ট বাসা) নিয়ে যায়। এভাবে ভারতের ফরিদাবাদ এলাকার উক্ত ৫৬৪ নম্বর বাসায় ভিকটিমকে ৫নং ও ৬নং পলাতক আসামীরা প্রায় ২০/২৫ দিন আটকে রাখে। আটক রাখাকালীন অভিযুক্ত ৩নং আসামী মোঃ মাছুম বাংলাদেশ হতে সেখানে যায়। মাছুমকে পেয়ে ভিকটিম তার চাকুরির কথা জিজ্ঞাসা করলে সে বিভিন্ন রকম তালবাহানামূলক কথাবার্তা বলে। অভিযুক্ত ৩নং আসামী ভিকটিমকে তার আর্থিক অনটন, সাংসারিক অর্থনৈতিক দুরবস্থার সুযোগ নিয়ে একটি কিডনি প্রদানের জন্য প্ররোচিত করে এবং ভয়ভীতি দেখায় যে, পাসপোর্ট ছাড়া সে দেশেও ফিরে আসতে পারবে না। একপর্যায়ে আসামীরা ভিকটিমকে নয়া দিল্লির এশিয়ান হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে কিডনি সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ডাক্তারি পরীক্ষা নিরীক্ষা করায়। ডাক্তারি পরীক্ষা নিরীক্ষা শেষে কিছুদিন পর ভারতের গুজরাটে নিয়ে যায় এবং মুক্তিনগর এলাকায় ২ তলা বিশিষ্ট একটি বাসায় রাখে।

জনৈক রবিনের এজাহার প্রদান করা বক্তব্য অনুযায়ী, দারিদ্র্যের সুযোগ নিয়ে অর্থের প্রলোভন দেখিয়ে ফুসলিয়ে কাউকে কিছু না বলার শর্তে আসামীরা পরস্পর যোগসাজসে ইচ্ছার বিরুদ্ধে এবং বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখিয়ে ও সুকৌশলে গত ০৪ মার্চ ২০২৪ ভারতের গুজরাট কিডনি এন্ড স্পেশালাইজড হাসপাতালে নাভীর নিচে তলপেট বরাবর অপারেশনের মাধ্যমে ০১ (এক) টি কিডনি প্রদানে বাধ্য করে এবং ফুসলিয়ে কিছু কাগজপত্রে স্বাক্ষর নেয়। অপারেশন শেষে উক্ত হাসপাতাল থেকে ৪ দিন পরে ছাড়পত্র প্রদান করে। হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর আসামীদের দালাল চক্র ভারতের অজ্ঞাত স্থানে প্রায় ১০/১১ দিন ভিকটিমকে আটক রাখে। উল্লেখ্য, হাসপাতালে থাকা অবস্থায় বিভিন্ন মাধ্যমে ভিকটিম জানতে পারে যে, উক্ত কিডনি আসামীরা নালাল চক্রের নিকট প্রায় ৫০ লক্ষ টাকায় বিক্রি করে। বিভিন্ন সময়ে ভারতে থাকাকালীন অবস্থায় আসামীরা ভিকটিমকে বলে যে, তাকে ভারতে মেরে ফেললে কী হবে? এমন ভয়ভীতি দেখিয়ে দালালচক্র ভিকটিমকে কিছু টাকা দেওয়ার কথা বলে। বাংলাদেশে অবস্থানকৃত চক্রের অন্য সদস্যরা ভিকটিমের স্ত্রী ইশরাত জাহানের বিকাশ নম্বরে বিভিন্ন তারিখ ও সময়ে মোট ৩,০০,০০০/- (তিন লক্ষ) টাকা প্রদান করে এবং পরবর্তীতে আরও ৩,০০,০০০/- (তিন লক্ষ) টাকা দেওয়ার আশ্বাস প্রদান করে। এভাবে দেশে এসে ভিকটিম বুঝতে পারে যে, সে বড় দালালচক্রের খপ্পরে পড়ে তার কিডনি হারিয়েছে। কিডনি অপারেশনের ফলে প্রায় ৫ ইঞ্চি পরিমান কাটা দাগ রয়েছে ভিকটিমের শরীরে। উল্লেখ্য, ভিকটিম শারীরিকভাবে অসুস্থবোধ করায় গত ১০ মে ২০১৪ ধানমণ্ডি থানাধীন ল্যাব এইড হাসপাতালে আল্ট্রাসনোগ্রাম করে যাতে লেখা আছে Non Visualized left Kidney। কিডনি হারিয়ে আজ সে এক কর্মক্ষমতাহীন মানুষ। এমতাবস্থায় এই চক্রের দ্বারা অন্য আরেকজন ব্যক্তি প্রতারিত হতে গেলে ভিকটিম রবিন তা জানতে পারলে ধানমণ্ডি থানা পুলিশের সহায়তায় উল্লিখিত ০৩ জন আসমীকে গ্রেফতার করা হয়। পলাতক আসামীদের দ্রুত গ্রেফতারের জন্য অভিযান চালানো হচ্ছে।

Facebook Comments Box

Posted ৫:৩১ অপরাহ্ণ | রবিবার, ১২ মে ২০২৪

dainikbanglarnabokantha.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

সম্পাদক

রুমাজ্জল হোসেন রুবেল

বাণিজ্যিক কার্যালয় :

১৪, পুরানা পল্টন, দারুস সালাম আর্কেড, ১১ম তলা, রুম নং-১১-এ, ঢাকা-১০০০।

ফোন: ০১৭১২৮৪৫১৭৬, ০১৬১২-৮৪৫১৮৬, ০২ ৪১০৫০৫৯৮

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

design and development by : webnewsdesign.com

nilüfer escort coin master free spins