
শান্ত বণিক, বিশেষ প্রতিনিধি | শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫ | প্রিন্ট
স্বাধীনতার লাল সূর্য ছিনিয়ে আনতে অস্ত্র তুলে নিয়েছিলেন যাঁরা, তাঁদের অনেকেই সময়ের স্রোতে হারিয়ে গেছেন। কিন্তু মো. আব্দুল হালিম মিঞা, যিনি এলাকায় ‘হালিম ইঞ্জিনিয়ার’ নামে সুপরিচিত, এখনও রাজপথে অদম্য। তিনি কেবল একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা নন—একজন সাহসী সংগঠক, ত্যাগী রাজনৈতিক নেতা, মানবিক সমাজসেবক এবং নির্ভরতার প্রতীক। পুরো জীবনজুড়ে তিনি মানুষের জন্য কাজ করে গেছেন নিরলসভাবে।
মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক থেকে যুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ:
হালিম ইঞ্জিনিয়ারের রাজনৈতিক জীবনের সূচনা ছাত্রাবস্থায়। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হলে তিনি থানা পর্যায়ের সংগঠক ও মুক্তিযোদ্ধা সংগ্রহ সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করেন। শুধু সংগঠক হিসেবেই নয়, নিজেও সরাসরি যুদ্ধে অংশ নেন। অস্ত্র হাতে দেশের স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করে বীরত্বের স্বাক্ষর রাখেন।
দলের প্রতি শতভাগ নিষ্ঠা, আন্দোলনের রাজপথে অবিচল পদচারণা:
২০১২ সালের ২ জুলাই আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলে যোগ দেন তিনি। এরপর থেকে বিএনপির সব আন্দোলন-সংগ্রামে রাজপথে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছেন। গুম-গ্রেফতার-হয়রানি কিছুই তাঁকে দমাতে পারেনি। কঠিন সময়ে তিনি রাজপথে থেকেছেন, মিছিল-সমাবেশে ছিলেন সাহসী নেতৃত্বে।
দলের দুঃসময়ে নেতা-কর্মীদের পাশে দাঁড়ানো ছিল তাঁর দায়িত্ব নয়, বরং ভালোবাসা। দলের যে কোনো কর্মসূচিতে প্রচার কার্যক্রমের সময় বিএনপির দলীয় লিফলেট নিজ হাতে সাধারণ মানুষের হাতে তুলে দিয়েছেন তিনি। বাজার, হাট কিংবা পাড়া-মহল্লার অলিগলিতে তাঁকে দেখা গেছে জনগণের সঙ্গে কথা বলতে, দলের বার্তা পৌঁছে দিতে।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নপ্রাপ্ত হয়ে ত্যাগের অনন্য নজির:
দলের প্রতি তাঁর নিষ্ঠা ও জনপ্রিয়তার স্বীকৃতিস্বরূপ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে টাঙ্গাইল-৪ (কালিহাতী) আসনে তিনি বিএনপির প্রাথমিক মনোনয়ন লাভ করেন। তবে দলের বৃহত্তর স্বার্থে এবং ঐক্যফ্রন্টের কৌশলের অংশ হিসেবে মনোনয়ন ত্যাগ করে শরিক দলের জন্য আসনটি ছেড়ে দেন। তাঁর এই ত্যাগী সিদ্ধান্তকে আজও নেতাকর্মীরা সম্মানের চোখে দেখেন।
নেতৃত্বে বহুমাত্রিকতা, সংগঠনে সক্রিয় ভূমিকা:
তিনি প্রকৌশল শ্রমিক ইউনিয়ন, ভ্যান শ্রমিক ইউনিয়ন, রিক্সা শ্রমিক ইউনিয়ন, হকার সমিতি এবং বাউল শিল্পী সমিতির প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করছেন। এ ছাড়াও তিনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সহ-সভাপতি, ঢাকা মহানগরীর সভাপতি, এসোসিয়েশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশের সহ-সভাপতি এবং জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের আজীবন সদস্য।
করোনাকালে জনসেবায় ইতিহাস গড়া মানবিক কর্মযজ্ঞ:
মহামারি যখন চরমে, মানুষ যখন কর্মহীন, বাজারে খাদ্যদ্রব্য যখন সোনার হরিণ—তখন হালিম ইঞ্জিনিয়ার ছুটে গেছেন কালিহাতী উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নের প্রতিটি গ্রামে।
কোকডহরা, গোহালিয়াবাড়ী, দশকিয়া, দুর্গাপুর, নাগবাড়ী, নারান্দিয়া, পাইকড়া, সহদেবপুর, এলেঙ্গা, সল্লা, বাংড়া—এই সব ইউনিয়নের মানুষের হাতে তিনি নিজ হাতে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দিয়েছেন। তাঁর বিতরণ করা খাদ্যপ্যাকেট শুধু চাল-ডাল ছিল না, ছিল আশার আলো।
স্থানীয় বৃদ্ধা মনোয়ারা খাতুন বলেন, হালিম সাহেব যদি নিজ হাতে খাবার না দিতেন, আমাদের পরিবার অনাহারে কাটাত। এলেঙ্গা ও কালিহাতীর প্রতিটি গ্রামের মানুষের হৃদয়ে গেঁথে আছে তাঁর সেই মানবিক অবদান।
শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান উন্নয়নে অক্লান্ত প্রয়াস:
কালিহাতীর বিভিন্ন ইউনিয়নে তাঁর সহায়তায় গড়ে উঠেছে একাধিক প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কলেজ, মসজিদ, মন্দির ও মাদ্রাসা। শুধু প্রতিষ্ঠানই নয়, অনেক জায়গায় তিনি ব্যক্তিগত অর্থে ভবন নির্মাণ এবং শিক্ষার্থীদের বৃত্তি প্রদানের মাধ্যমে শিক্ষা বিস্তারে রেখেছেন দৃষ্টান্তমূলক অবদান। আজ অনেক তরুণ-তরুণীর শিক্ষা জীবনের পেছনে রয়েছে এই হালিম ইঞ্জিনিয়ারের নিঃশব্দ অবদান।
ছাত্র রাজনীতি থেকেই নেতৃত্বের প্রমাণ:
রাজশাহী ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে অধ্যয়নকালে তিনি আব্দুল হামিদ ছাত্রাবাসের জিএস নির্বাচিত হন। পরে কলেজ ছাত্র সংসদের জিএস পদে নির্বাচনেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। ছাত্রজীবনের সেই নেতৃত্ব গুণ আজ তাঁকে একজন পরিপূর্ণ রাজনৈতিক নেতায় পরিণত করেছে।
জনগণের মুখে প্রশংসার ফুলঝুরি:
ব্যবসায়ী আজিজুর রহমান বলেন, হালিম ভাই রাজনীতির পাশাপাশি মানুষের পাশে দাঁড়ান বলেই আমরা তাঁকে ভালোবাসি।
রিক্সাচালক মজনু মিয়া বলেন, চিকিৎসার খরচ জোগাতে পারছিলাম না, উনি নিজে এসে সাহায্য করেছেন। এখনও খোঁজ নেন।
স্থানীয় গৃহবধূ রাবেয়া বেগম বলেন, করোনায় তিনি নিজের হাতে খাবার দিয়েছেন। উনার মতো মানুষ রাজনীতিতে খুব দরকার।
তার জনপ্রিয়তা তরুণ প্রজন্মেও তুঙ্গে। তরুণরাও তাঁকে দেখেন সাহস ও আস্থার প্রতীক হিসেবে।
দল ও জনগণের নির্ভরতার প্রতীক:
বিএনপির রাজনীতিতে যারা আদর্শ, ত্যাগ আর মানবিকতাকে শ্রেষ্ঠ গুণ বলে মানেন—তাঁদের কাছে হালিম ইঞ্জিনিয়ার এক জীবন্ত কিংবদন্তি। দলীয় দায়িত্ব পালনে যেমন তিনি দক্ষ, তেমনি কর্মীদের পাশে থেকেছেন বিপদ-আপদে। কালিহাতী এলেঙ্গা থেকে জাতীয় পর্যায়ের নেতৃত্ব পর্যন্ত তাঁর গ্রহণযোগ্যতা এখন ব্যাপক।
হালিম ইঞ্জিনিয়ার শুধুই একজন রাজনীতিক নন—তিনি ইতিহাসের এক আলোকিত অধ্যায়। তাঁর সংগ্রাম, নেতৃত্ব, ত্যাগ ও ভালোবাসা আজও মানুষকে আলো দেখায়। দল ও জনগণের কাছে তাঁর নাম এক আস্থার দুর্গ।
Posted ২:০৪ অপরাহ্ণ | শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫
dainikbanglarnabokantha.com | Shanto Banik
এ বিভাগের আরও খবর
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।