এনামুল হক,শেরপুরঃ | বৃহস্পতিবার, ০৪ মে ২০২৩ | প্রিন্ট
শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার ঘাঘড়া দক্ষিণ পাড়া ফজলুর রহমান উচ্চ বিদ্যালয়ের শামীম নামে এক এসএসসি পরীক্ষার্থী ফরম ফিলাপের জন্য এক হাজার টাকা কম দেওয়ায় ওই পরীক্ষার্থীকে পরীক্ষায় অংশ নিতে দেয়া হয়নি, এমন অভিযোগে গত ৩ মে মঙ্গলবার দুপুরে উপজেলার কোয়ারিরোড মোড়ে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রধান শিক্ষকের কোশপুত্তলিকা দাহ করেছেন কিছু এলাকাবাসী। তাছাড়াও প্রধান শিক্ষককে অভিযুক্ত করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন শামীম নামে ওই শিক্ষার্থী। বিষয়টি নিয়ে জনমতে ধুম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে। এলাকায় চলছে তুলপাড়।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ডের আওতায় ২০২৩ সালের এসএসসি পরীক্ষায় মানবিক শাখার ৪৩১৪৫৯ রোল নং ধারী শিক্ষার্থীর নাম শামীম, পিতা মৃত আব্বাস আলী, গ্রাম জুঁলগাও। কিন্তু ৩০ এপ্রিল রবিবার অনুষ্ঠিত বাংলা প্রথম পত্র পরীক্ষায় শামীম এর স্থলে পরীক্ষা দেয় অন্য এক শিক্ষার্থী, যার নাম শাওন, পিতা-আব্দুর রউফ, মাতা-শিরিনা বেগম, গ্রাম: ঘাগড়া কোনাপাড়া। তবে প্রবেশপত্র সহ সকল কাগজপত্রে শামীম এর স্থলে শাওন এর ছবি ব্যবহার হওয়ায় বিষয়টি প্রথমে নজরে আসেনি পরীক্ষা হল কর্তৃপক্ষের। কিন্তু বিষয়টি জানাজানি হওয়ায় শাস্তির ভয়ে সোমবার অনুষ্ঠিত পরীক্ষায় সে আর পরীক্ষা দিতে কেন্দ্রে উপস্থিত হয়নি।
অনুসন্ধানে আরও জানা গেছে, শাওন তার নামে নবম শ্রেনীতে রেজিস্ট্রেশনই করতে পারেনি। তাই শামীমের স্থলে শাওনকে পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ করে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো ৪৩১৪৫৯ রোল নং ধারী পরীক্ষার্থীর ফর্ম ফিলাপ নিয়ে। এ বিষয়ে পরীক্ষা দিতে না পারা শিক্ষার্থী শামিম ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য দেওয়ায় ফরম ফিলাপের বিষয়ে তার গাফিলতির ছিল বলে ভাবছেন সংশ্লিষ্টরা। সে কোথাও বলেছে,“ স্যারকে আমি টাকা দিয়েছি,” কোথাও বলেছে, “পরে স্যারের সাথে আর যোগাযোগ করিনি” আবার কোথাও বলেছে, “বিদায় অনুষ্ঠানের দিন টাকা নিয়ে গিয়েছিলাম কিন্তু স্যার টাকা নেয়নি”। এছাড়াও প্রথম পরিক্ষার দিন ইউএনও, সাংবাদিক ও পরীক্ষা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাছেও সে ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য দিয়েছে। ফলে ফরম ফিলাপের বিষয়ে শামীমের জায়গায় শাওনের পরীক্ষায় অংশ নেওয়ায় প্রশ্ন দেখা দিয়েছে জনমনে।
এবিষয়ে প্রধান শিক্ষক নুরুল হক বলেন, “দাপ্তরিক কাজ করার জন্য সরকার নির্ধারিত অফিস সহকারী আছেন। রেজিষ্ট্রেশন, ফরম ফিলাপ, অনলাইনের যাবতীয় কাজ ও এডমিক কার্ড বিতরণ তিনিই করেন। এই ব্যাপারে আমার উপর মিথ্যা অভিযোগ আনা হয়েছে। কোন ভুল হয়ে থাকলে বা তদন্তে প্রমান পেলে আমিই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করবো।” অপরদিকে অফিস সহকারী আব্দুল হালিম বলেন, আমি একজন গোলামের মত। প্রধান শিক্ষকের নির্দেশেই আমি কাজ করে থাকি। যা করার তিনিই করেছেন। আমি এ ব্যাপারে কিছু জানিনা।”
২ মে বাংলা দ্বিতীয় পরীক্ষার দিন সরেজমিনে গিয়ে শামীমের আসন ফাঁকা দেখা যায়। এছাড়াও পরীক্ষার উপস্থিতি খাতায় প্রথম পরীক্ষায় তার হাজিরা স্বাক্ষর ও দ্বিতীয় দিন অনুপস্থিত লেখা দেখা যায়। এ ব্যাপারে আহমদ নগর উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের সহকারী কেন্দ্র সচিব ফজলুর রহমান বলেন, “গত পরীক্ষায় ৪৩১৪৫৯ রোল নং ধারী ছাত্র শামীম পরীক্ষায় অংশগ্রহন করলেও আজ অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় পরিক্ষায় সে অনুপস্থিত রয়েছে। তবে শামীমের জায়গায় শাওনের পরীক্ষা দেয়া নিয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, “আমরা এডমিট কার্ডে প্রদত্ত ছবির সাথে পরীক্ষার্থীর চেহারা মিলিয়ে দেখে থাকি। এতে আমরা কোন গরমিল পাইনি।”
বিষয়টি নিয়ে তদন্তের আশ্বাস দিয়ে শেরপুর জেলা শিক্ষা অফিসার মো. রেজুয়ান জানান, “এ বিষয়ে ঝিনাইগাতী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।”
ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ফারুক আল মাসুদ বলেন, “আমরা এ বিষয়ে একটি অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে, তদন্তে দোষী প্রমানিত হলে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
এ ব্যাপারে উক্ত বিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র, পরিচালনা কমিটির সাবেক ও এডহক কমিটির বর্তমান সভাপতি, বাংলাদেশ সরকারের জনপ্রসাশন মন্ত্রনালয়ের যুগ্ম সচিব (পিআরএল) শাহ মো. আবু রায়হান আলবেরুনী বলেন, “ঘটনাটি আমি অবগত হয়েছি। তবে স্কুলের সাবেক ম্যানেজিং কমিটির একটা পক্ষ অনেক আগে থেকেই নানা ধরনের ষড়যন্ত্র করে আসছে। এখনো তারা থেমে নেই। আমি এর সুষ্ঠু বিচার করার জন্য দ্রুত সময়ের মধ্যে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসার কে বলেছি”।
Posted ১০:১৩ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৪ মে ২০২৩
dainikbanglarnabokantha.com | Romazzal Hossain Robel
এ বিভাগের আরও খবর
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।