শনিবার ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৫ মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

>>

এমন শিক্ষক কাম্য নয়

  |   বৃহস্পতিবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২০   |   প্রিন্ট

এমন শিক্ষক কাম্য নয়

নূরুদ্দীন দরজী:

শিক্ষক নামীয় শব্দটি উচ্চারিত হলেই মানুষের মনে ভেসে উঠে একজন ভক্তি-শ্রদ্ধায়, ন্যায়-নিষ্ঠায়, আশা-ভরসায়, ঞ্জান-প্রঞ্জায়, নির্ভরতা ও অন্তহীন আদর্শ এবং ত্যাগের প্রতিচ্ছবি। শিক্ষকের স্নেহাসিক্ত নিজ সন্তানসম ভালবাসা ছাত্রদের ধমনীতে আনে আলোর ঝলকানি। শিক্ষক মানেই মহাত্মা। শিক্ষকের আদর্শের তাড়না প্রেরনায় পরিনত হলেই ছাত্রছাত্রী পরিপূর্ণ ঞ্জান অর্জন করতে যোগ্য মানুষ ও আদর্শ নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠতে পারে।
একটি দৈনিক পত্রিকার খবরে এসেছে,’শিক্ষককে কানধরে উঠবস করালো শিক্ষার্থীরা’‌। বরিশাল শহরের রুপাতলীর জমজম নার্সিং ইনস্টিটিউটের খন্ডকালীন শিক্ষক মিজানুর রহমান সজল প্রতিষ্ঠানের ছাত্রীদের সাথে অনৈতিক আচরণ করেন। এমন সব কর্মকাণ্ড প্রায়‌ই করেন বলে তাকে সবার সামনে
নিজের কান ধরিয়ে উঠবস করোনো হয়েছে। এহেন কর্মকান্ডের একটি ভিডিও ক্লিপ ও বোধ হয় বের হয়েছে। মিজান নিজের কানে ধরে ত‌ওবা করেছে জীবনে এমন সব কাজ আর কখনো করবেনা। আল্লাহর নামে কসম খেয়ে বলেছে তার দ্বারা আর এসবের পুনরাবৃত্তি হবেনা। মহান আল্লাহ তাকে মাফ করে হেফাজত করুন। তবে প্রশাসন অবশ্যই নিরপেক্ষ তদন্ত করে দোষীর বিরুদ্ধে ভালভাবেই ব্যবস্থা নিবেন বলেই বিশ্বাস করা যায়। সেখ সাদী (রঃ) বলেছেন,’গাধা মক্কায় গিয়ে ফিরে এলেও গাধাই থেকে যায়-যা আমরা কোন শিক্ষকের ক্ষেত্রে আশা করিনা। শিক্ষকতা পেশা শ্রেষ্ঠ পেশা। পৃথিবীতে অন্য এমন কোন পেশা বা কাজ নেই যা সুন্দর ও সম্মানের দিক দিয়ে শিক্ষকতার সমান হতে পারে। মানুষ গড়ার কারিগর নিবেদিত আদর্শ প্রাণ আমাদের শিক্ষকগণ সম্মান বিবেচনায় সকলের উর্ধ্বে। আমরা তার প্রতিফলন সর্বত্র‌ই দূখতে পাই‌। প্রটোকল বিবেচনায় দু-একটি ক্ষেত্র ব্যতিত সকল মানুষ‌ই তার শিক্ষককে মা বাবার মত প্রাপ্য সম্মান দিতে দ্বিধাবোধ করেনা। আবার অনেক শিক্ষককে দেখেছি তাঁর ছাত্র বিব্রত পরিস্থিতিতে পড়তে পারে এমন সব সভা, সেমিনার বা স্থানে যাননা ।একটি সিনেমায় দেখেছিলাম,একজন শিক্ষক একটি বৈধ আরজি নিয়ে তৎসময়ে তাঁর রাজার নিকট গিয়েছিলেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য যে, রাজা শিক্ষকের আবেদন অগ্ৰাহ্য করে। এখানেই শেষ নয়, শিক্ষককে অনেক তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে ও সর্বশেষ চাকরিচ্যুত করে রাজ দরবারে থেকে বেরিয়ে যেতে বলেন। শিক্ষক আর কোন বাক্য ব্যয় না করে মাথা উঁচু করে কুর্ণিশ করা ছাড়াই বেরিয়ে যান। অথচ তৎকালে এমন কার সাধ্য ছিল বার বার হাত নেড়ে নেড়ে কুর্ণিশ না করে রাজ দরবার ত্যাগ করতে পারতো? এমন শিক্ষককে দেখলে মন ভরে যায়, বুক প্রশস্ত হয়।
আমাদের দেশে মিজানুর রহমান সাজল ছাড়াও কিছু শিক্ষক-শিক্ষক নামের অমর্যাদা করেছেন যা অনেকেই জানেন। যাদের নাম এখানে উল্লেখ করছি না। নাম উল্লেখ করছিনা শুধুই শিক্ষকগণের সম্মানের জন‌্য‌। এক‌ই কথার পুনরাবৃত্তি হলেও বলবো-শিক্ষকের সম্মান ও মর্যাদা সবার উপরে বিষয়টি মাথায় রেখেই শিক্ষকতা করতে হবে। বাংলা সাহিত্যের অন্যতম কবি কাদের নেওয়াজ এর বিখ্যাত কবিতা ‘শিক্ষকের মর্যাদা’ পড়ে নাই এমন বাঙালি ছাত্র-ছাত্রীদের বোধ করি তেমন পাওয়া যাবেনা। দিল্লির বাদশার পুত্রের হাতে শিক্ষকের পায়ে পানি ঢালিয়ে ছিলেন বলে বাদশাহ তাকে দরবারে ডেকে পাঠালেন। শিক্ষক ভয়ে ভয়ে দরবারে যাবার সময় নানাবিধ চিন্তায় ক্ষণিক আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু মনের শক্তি হারাননি। মনের শক্তি তাঁকে সাহস দিয়েছিল বাদশাহকে শুনানোর কঠিন সিদ্ধান্ত যে,- শিক্ষক আমি শ্রেষ্ঠ সবার/দিল্লির পতি সেতো কোন ছার/ভয় করি না’ক, ধারিনা ধার,মনে আছে মোর বল। পরের বিষয় সবার‌ই জানা। সম্মান জানাই এমন শিক্ষককে, শ্রদ্ধা করি তাঁর আদর্শকে। শেষ করার আগে একজন মনীষীর কথা বলবো যিনি বলেছেন,-তকদিরে আমার হাত থাকলে আমি শিক্ষক হতাম। মনীষীগণের এমন কথা থেকেই তো বুঝতে পারি শিক্ষকগণ কত বড় , শিক্ষকতা পেশা কত মহান। সুতরাং সবার পক্ষে শিক্ষক হ‌ওয়া সম্ভব নয়।
লেখক: কলামিস্ট ও সাবেক উপজেলা শিক্ষা অফিসার (টিইও)

Facebook Comments Box

Posted ৫:৩৩ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২০

dainikbanglarnabokantha.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

সম্পাদক

রুমাজ্জল হোসেন রুবেল

বাণিজ্যিক কার্যালয় :

১৪, পুরানা পল্টন, দারুস সালাম আর্কেড, ১১ম তলা, রুম নং-১১-এ, ঢাকা-১০০০।

ফোন: ০১৭১২৮৪৫১৭৬, ০১৬১২-৮৪৫১৮৬, ০২ ৪১০৫০৫৯৮

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

design and development by : webnewsdesign.com

nilüfer escort coin master free spins