ভোট মানেই উৎসব। ভোট মানেই শ্রমিকদের মধ্যে নেতৃত্বের সেতু বন্ধন। আর ভোট মানেই পোষ্টারে পোষ্টারে ছেয়ে যাওয়া নির্বাচনী পরিবেশ। কিন্তু ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ মোবারকগঞ্জ চিনিকল (মোচিক) শ্রমিক ইউনিয়ন নির্বাচনে এমন পরিবেশ ছিল না। কোন ভোট হয়নি। বাজেনি কোন ভোটের হুইসেল। ১৩ টি পদে সবাই গোপনে বিনা প্রতিদ্বন্দিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। ইউনিয়নের সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়নি। শ্রমিকরা পাননি ভোটের তফসিল। মনোনয়নপত্র বিক্রি থেকে শুরু করে ভোটের সব পক্রিয়া হয়েছে অত্যান্ত গোপনে। এমনকি সংগঠনটির গঠনতন্ত্রে নির্বাচন পক্রিয়া শ্রম অধিদপ্তরের তত্ত¡াবধানে অনুষ্ঠিত হওয়ার সুষ্পষ্ট বিধান থাকলেও সেটাও করা হয়নি। সাধারণ শ্রমিকরা বলছেন, কখন তফসীল ঘোষনা, কখন ভোটার তালিকা প্রকাশ আবার কখন ভোট হয়ে গেল তারা কিছুই জানতে পারেন নি। তাদের ভাষ্য গোটা ভোট পক্রিয়া গায়েব হয়ে গেছে। কালীগঞ্জ উপজেলায় ১৯৬৫ সাল প্রতিষ্ঠা করা হয় মোবারকগঞ্জ চিনিকল। আর শ্রমিকদের প্রয়োজনে ১৯৭৪ সালে গঠিত হয় মোবারকগঞ্জ চিনিকল শ্রমিক ও কর্মচারি ইউনিয়ন নামের শ্রমিক ইউনিয়ন। ইতিপূর্বে সংগঠনটির কার্যনির্বাহী পরিষদ ছিল ২৫ সদস্য, বর্তমানে ১৩ সদস্যের। দুইবছর পর ভোটের মাধ্যমে নেতা নির্বাচনের আইন রয়েছে। ২০১৯ সালের ২৩ ফেব্রয়ারি সর্বশেষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সেই নির্বাচনে সভাপতির পদ সহ ৪ জন বিনা প্রতিদ্বন্দিতায় নির্বাচিত হন। শ্রমিক নেতারা জানান, গত ১৮ ফেব্রয়ারি আঞ্চলিক শ্রম দপ্তর কুষ্টিয়া থেকে পাঠানো এক চিঠি দেখে তারা হতাশ হয়েছেন। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে মোবারকগঞ্জ চিনিকল শ্রমিক ও কর্মচারি ইউনিয়নের নির্বাচন ২০২১ এর বিনা প্রতিদ্বন্দিতায় নির্বাচনী ফলাফল ও ভোটার তালিকা অত্র দপ্তরে জমা দেওয়া হয়েছে। যার কিছুই তারা জানেন না। গোপন নির্বাচনের কাগজপত্র ঘেটে দেখাগেছে চলতি বছরের ৩ ফেব্রয়ারি নির্বাচনী তফসিল ঘোষনা করা হয়। যেখানে ৭ ফেব্রয়ারি খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ ও পদভিত্তিক প্রতিক প্রকাশ, একই দিন সকাল ১০ টা থেকে ৯ ফেব্রয়ারি বিকাল ৩ টা পর্যন্ত ভোটার সংশোধনী আবেদন গ্রহন, ১১ ফেব্রয়ারি সকাল ৯ টা ৩০ মিনিটে চুড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ, একই দিন সকাল ১০ টা থেকে ১১ টা পর্যন্ত মনোনয়নপত্র বিক্রয়, একই সাথে ওই দিনই সকাল সাড়ে ১০ টা থেকে বেলা ১২ টা পর্যন্ত মনোনয়নপত্র গ্রহন, যাচাই বাছাই শেষে ওই দিনই বিকাল ৫ টায় পদভিত্তিক প্রার্থী তালিকা প্রকাশ, ১২ ফেব্রয়ারি সকাল ৮ টা হতে বিকাল ৪ টা পর্যন্ত প্রার্থীতা প্রত্যাহার, ১৩ ফেব্রয়ারি পদভিত্তিক প্রতিকসহ চুড়ান্ত প্রার্থীর তালিকা প্রকাশ ও ২২ ফেব্রয়ারি সকাল ৮ টা হতে একটানা বিকাল ৪ টা পর্যন্ত মোবারকগঞ্জ চিনিকল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভোট গ্রহন, ভোট গ্রহন শেষে ওই দিনই বে-সরকারি ভাবে ফলাফল ঘোষনা। ঘোষিত তফসিলে আরো দেখা যায়, মোচিক শ্রমিক ও কর্মচারি ইউনিয়নের কার্যকারী পরিষদের ০২ ফেব্রয়ারি তারিখে মোচিক/ শ্রঃইউঃ/২০২১-২২/০২ স্মারকে চিঠি ও গঠনতন্ত্র মোতাবেক সোহেল আহম্মেদকে আহবায়ক, মোঃ রফিকুল ইসলামকে যুগ্ম আহবায়ক, মোঃ মনিরুজ্জামান, মোঃ আবুল হোসেন ও মোঃ কবির আলমকে সদস্য করে ৫ সদস্য বিশিষ্ট নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠন করা হয়। ৩ ফেব্রয়ারি অস্থায়ী নির্বাচনী কার্যালয় (মোচিক সাধারণ ক্লাব অফিস) সভা করে এই তফসিল ঘোষনা করা হয়। সভায় নির্বাচনের বিষয়ে সার্কুলার করার জন্য মোচিকের সকল নোটিশ বোর্ড, ক্যানটিন, নির্বাচনের অস্থায়ী কার্যালয়ের নোটিশ বোর্ডে সাটানো সহ প্রয়োজনে অনান্য মাধ্যমেও প্রচারের ব্যবস্তা গ্রহনের সিদ্ধান্ত হয়। নির্বাচনে যাদের বিজয়ী ঘোষনা করা হয়েছে তারা হলেন সভাপতি পদে মোঃ গোলাম রসুল, সহ-সভাপতি পদে মোঃ ফজের আলী, সাধারণ সম্পাদক পদে মোঃ শরিফুল ইসলাম-৩, সহ-সাধারণ সম্পাদক পদে মোঃ রফিকুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক পদে ফিরোজ আহমেদ, কোষাধ্যক্ষ পদে মো মশিয়ার রহমান, দপ্তর সম্পাদক পদে মোঃ সায়েম বিশ্বাস, প্রশাসন ও হিসাব বিভাগের কার্যনির্বাহী সদস্য মোঃ সাইদুর রহমান (পিকু), ইক্ষু বিভাগে মোঃ মহি উদ্দীন-২, মোছাঃ সালমা খাতুন, পরিবহন বিভাগে মোঃ নজরুল ইসলাম-৩ এবং কারখানা বিভাগের সদস্য মোঃ রবিউল ইসলাম ও মোঃ আক্তারুজ্জামান। শ্রমিক নেতারা জানান, বর্তমান পরিষদের ইক্ষু বিভাগের সদস্য আনসার আলী চাকুরী থেকে সদ্য অবসরে যাওয়ায় ওই স্থানে মোছাঃ সালমা খাতুনের নাম দেওয়া হয়েছে। বাকি সবগুলো পদেই পুরাতনরা বহাল রয়েছেন। এ ব্যাপারে কুষ্টিয়া আঞ্চলিক শ্রম দপ্তরের উপ-পরিচালক মোঃ জহিরুল ইসলাম জানান, একটি ফলাফল তাদের কাছে জমা দেওয়া হয়েছে। যেটা সঠিক নিয়মে না হওয়ায় তারা গ্রহন করেননি। এ বিষয়ে নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহবায়ক সোহেল আহম্মেদ জানান, তারা ভোটের কোনো ফলাফল জমা দেননি। তিনি এখনও দায়িত্ব নেননি। বর্তমান কমিটির সহ-সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম জানান, চিনিকল বাঁচানোর স্বার্থে পুরাতন কমিটি আবারো থেকে যাক এটা শ্রমিকরা চান। যে কারনে ভোট না করার কথা হয়েছে।