| বৃহস্পতিবার, ০৮ অক্টোবর ২০২০ | প্রিন্ট
(মো. শহিদুল্লাহ)
আমার এ লেখা কোন ব্যাক্তি, গুষ্ঠি বা কোন রাজনৈতিক দলকে ছোট করার জন্য নয় কিংবা নিজেকে জাহির করার জন্যও নয়, শুধু মাত্র আমার সন্মানিত বন্ধুমহল, প্রিয় বেলাববাসি ও আমার জন্মস্থান পাটুলী ইউনিয়নবাসীর সদয় অবগতির জন্য লিখতে বসেছি।
স্মৃতি বড়ই মধুময়, স্মৃতি বড়ই বেদনাদায়ক।
ছোটবেলা থেকেই রাজনীতির প্রতি প্রচন্ড রকমের একটি ঝোঁক ছিল আমার। মনে বড় আশা ছিল জীবনে একবার জনপ্রতিনিধি হব, মানব সেবায় নিজকে উৎস্বর্গ করব। সেই উদ্দেশ্যে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ কে বুকে লালন করে রাজনীতির পথে হাটতে লাগলাম। কিন্ত রাজনীতির পথ যে এত পিচ্ছিল , রাজনীতি যে এত নিষ্ঠুর , এত নির্মম , ইহাতে যে এত কাদা ছুঁড়া ছুড়ি হয়, তা আগে আমার জানাছিলনা। জানা থাকলে সাবধানে এ পথে পা বাড়াতাম।
আমার সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
১৯৬৯ ইং সালে নরসিংদী জেলার বেলাব উপজেলার গোবীন্দপুর গ্রামে আমার জন্ম। আমার পিতা হাজি আ: গফুর মাতা নূরজাহান বেগম।
আমি ১৯৮৪ ইং সালে এস.এস.সি ১৯৮৬ ইং সালে এইচ.এস.সি ১৯৮৮ইং সালে ঢাকা বিশ্ববিদালয়াধীন বি.এ এবং ১৯৯৫ ইং সালে রাষ্ট্র বিজ্ঞানে এম.এস.এস ডিগ্রী লাভ করি।
পাশাপাশি ২০০১ ইং সালে সি.ইন এড,২০০২ ইং সালে বি.এড ২০০৪ ইং সালে এম.এড এবং ২০০৮ইং সালে বঙ্গবন্ধু ল’ কলেজ থেকে এলএল.বি পাশ করি অতপর ২০১২ ইং সালে বার কাউন্সিল পরীক্ষায় অংশ করি এবং ঢাকা বারের সদস্য পদ লাভ করি।
১৯৮৪ ইং সালে প্রেসিডেন্ট এরশাদের শাসন আমলে রাজপথ রাজনীতির জন্য খুবই উত্তপ্ত । তখন আমার বয়স খুবই কম, মাত্র এস,এস,সি পরীক্ষা দিলাম। টগবগে রক্ত, মনে অসিম সাহস নিয়ে জড়িত হলাম বেলাব উপজেলা ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে।
বটেশ্বরের জসিম উদ্দিন মৃধা তখন ছাত্রলীগের আহবায়ক, খুবই তোখর ছাত্র নেতা ছিলেন, কারো চোখ রাঙ্গানোকে ভয় পেতেন না। তারপর কাউন্সিল অধিবেশনের মাধ্যমে বাবু সুজিত কুমার ঘনশ্যাম সভাপতি, সমসের জামান ভূঁইয়া রিটন সাধারন সম্পাদক ও বন্দ্বু আবুল কাসেম ভূঁইয়া সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হলো। আমাকে রাখা হলো কার্যকরী কমিটির সদস্য পদে ।
তখন বেলাব উপজেলা আওয়ামীযুবলীগের আহবায়ক ছিলেন চরকাশিম নগরের আক্তারুজ্জামান, বর্তমানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক পদে চাকুরীরত।
পরবর্তী সময়ে বেলাব উপজেলা আওয়ামীযুবলীগের কাউন্সিল অধিবেশনে পাটুলীর এম.এ মোমেন সরকার সভাপতি ও চরবেলাবরের সাংবাদিক ইসমাইল হোসেন সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হলেন, আমাকে রাখা হলো দপ্তর সম্পাদক পদে। মনটা ভীষন খারাপ হয়ে গেলো দলীয়ভাবে ভালো কোন পদে নিজকে অধিষ্ঠিত করতে পারছিলাম না ।
এর বছর দুই এক পর বেলাব উপজেলা কৃষকলীগের কাউন্সিল অধিবেশন অনুষ্ঠিত হলো । উজিলাবরের জনাব আব্দুল খালেক মাষ্টার ( বর্তমানে বি.এন.পি সমর্থিত নেতা )সভাপতি ও চরবেলাবরের আব্দুল গফুর ভূঁইয়া সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হলেন, দু’জনই ছিলেন খুবই অমায়িক মানুষ । প্রয়াত জননেতা জনাব সমসের আলী ভূঁইয়া সাহেব আমাকে জড়িত করে দিলেন উপজেলা কৃষক লীগের কমিটিতে। আমাকে রাখা হলো কৃষি বিষয়ক সম্পাদক পদে। খুবই ভালো লাগছিল তাঁদের সাথে রাজনীতি করে।
আওয়ামীলীগের তখন চরম দুর্দিন , আমরা জনাব সমসের আলী ভূঁইয়ার নেতৃত্বে জনাব আবেদ ভাই অনলবর্ষী বক্তা ও অভিজ্ঞ সংগঠক,এবং জনাব আব্দুল খালেক মাষ্টার, নীলক্ষার বজলুর রহমান মাস্টারসহ (যিনি পরবর্তীতে কিছু সময়ের জন্য বেলাব উপজেলা আওয়ামীলীগের আহবায়কের দায়ীত্ব পালন করেছিলেন) আরও অনেকে শীত কালে সন্ধ্যার পর পাড়ায় পাড়ায় গিয়ে উঠান বৈঠক করে আওয়ামীলীগ কে সুসংগঠিত করতে লাগলাম। আবেদ ভাই প্রায় সবসময়ই মুজিব কোর্ট পড়তেন, ভূঁইয়া সাহেবকে মুজিব কোর্ট পড়তে দেখিনি, এসব নেতার কাঁধেই ঝোলানো থাকত অফয়য়েট কালারের ইন্ডিয়ান শাল। আমি তাঁদের পোষাক,আষাক , কথাবার্তা আচার ,আচরন এবং আবেদ ভাইয়ের বক্তব্য অনুকরন করতাম। যাইহোক সে অনেক স্মৃতি, অনেক কথা, এতসব লেখনিতে শেষ হবেনা । কোন দিন সময় পেলে বক্তব্যের মাধ্যমে স্মৃতি চারণ করা যাবে।
আমার উদ্যোগে পাটুলীতে গঠিত হল আওয়ামী জন কল্যান সংস্হা নামে একটি সমিতি । আমাকে এই সমিতির সাধারণ সম্পাদক করা হলো , সভাপতি পদাধিকার বলে ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি । আওয়ামীলীগ সমর্থিত ব্যাক্তিদের কাছ থেকে প্রতি সপ্তাহে ৫ টাকা চাঁদা নিয়ে একটি ফান্ড গঠন করা হলো । এই সমিতির নামে কৃষিব্যাংক পোড়াদিয়া বাজার শাখায় ৩ জনের নামে একটি যৌথ একাউন্ট খোলা হলো।সজ্ঞিত টাকা উক্ত একাউন্টে জমা থাকত । ছোট খাট সভা সমাবেশের খরচ এ সমিতির পক্ষ থেকে চালিয়ে নেয়া হতো ।
তখন মনোরঞ্জন দাশ ঝন্টু দা, পোড়াদিয়া মাইজের টেকের মরহুম কৌতালী ভূঁইয়া, সিরাজুল হক ভূঁইয়া, সবজে আলী ভূঁইয়া,আব্দুল মজিদ(মোগা) , আনছর আলী (টহা) সুটরিয়ার বইছার বাপের বড় ছেলে সিরাজুল ইসলাম, বীর মুক্তিযাদ্ধা ফজলুর রহমান প্রমূখ মুরুব্বীগণ আওয়ামী রাজনীতির দু:সময়ে পাটুলী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগকে সুসংগঠিত করার জন্য আমাকে প্রেরনা যুগিয়েছিলেন ও উৎসাহ দিয়েছিলেন। আজ তাঁরা নেই আমাদের মাঝে। আমি তাদের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি।
এর বছর খানেক পরে পাটুলী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগে নেতৃত্ব শূন্যতা দেখা দিলে উর্ধ্বতন নেত্রীবৃন্দের নির্দেশ ও সহযোগীতায় এবং স্বর্গীয় নেতা বাবু মনোরজ্ঞন দাস ঝন্টুদার আনুকুল্যতায় ১৯৯৬ সনে এক সফল কাউন্সিল অধিবেশনের মাধ্যমে সর্ব সম্মতি ক্রমে আনন্দঘন পরিবেশে আমাকে পাটুলী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হলো, সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন পোড়াদিয়া বড়বাডির মরহুম শওকত আলী ভূঁইয়া পন্ডিত সাহেব। যার মেজু ছেলে প্রয়াত শাহ্ মোহাম্মদ আলী দুলাল প্রয়াত মেয়র হানিফ সাহেবের পি.এস ছিলেন। পরবর্তীতে পন্ডিত সাহেবের অসুস্হতা ও মৃত্যুর পর আনছর আলী (টহা) ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসাবে দায়ীত্ব পালন করেছেন ।
প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখ্য স্বাধীনতার উত্তাল সময়ে পাটুলী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন মরহুম নেতা আব্দুল হক খলিফা সাহেব,(স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাক হানাদার বাহিনী পোড়াদিয়া বাজারে তাঁর ঘরে আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছিলেন) ও সাধারণ সম্পাদক ছিলেন মরহুম ফেরদৌস আহাম্মেদ । তখনকার সময়ে মুক্তি যুদ্ধের অন্যতম সংগঠক সাবেক এম.পি জনাব শাহাব উদ্দিন স্যারের সার্টিফিকেট নিয়ে এতদাঅঞ্জলের মানুষ ভারত যেতেন মুক্তি যুদ্ধের প্রশিক্ষন গ্রহনের জন্য ।পাটুলী ও বিন্নাবাইদ ছিল শ্রদ্বেয় সাহাব উদ্দিন স্যারের জন্য অভয় আশ্রয় স্হল ।
পাটুলী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের প্রথম সাধারণ সম্পাদক মরহুম ফেরদৌস আহাম্মেদ , দ্বিতীয় সাধারণ সম্পাদক স্বর্গীয় বাবু মনোরজ্ঞন দাস ঝন্টু দা , তৃতীয় সাধারণ সম্পাদক হলাম আমি এ্যাড: মো: শহিদুল্লাহ (শহিদ)।
১৯৯৭ ইং সনে পাটুলী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী হলাম আমি। মার্কা পেলাম মোমবাতি। তৎকালীন মাননীয় মন্ত্রী লে: জে: নুরউদ্দিন খান, আজকের মাননীয় এম.পি এ্যাড: নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন সাহেব ও প্রয়াত নেতা জনাব সমসের আলী ভূঁইয়া সাহেবের নির্দেশ ও অনুরোধে মোমের মত গলে গেলাম আমি । প্রয়াত নেতা মরহুম সমসের আলী ভূইঁয়া সাহেবের ডাকে পোড়াদিয়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে অনুষ্ঠিত এক ঐতিহাসিক সভার মাধ্যমে সন্মানের সহিত আমাকে নির্বাচন ছেড়ে দেয়ার অনুরোধ করলে উনার নেতৃত্বের প্রতি আনুগত্য স্বীকার করে আমি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালাম। আমার জীবনের প্রথম রাজনৈতিক গুরু মরহুম এরশাদুল হক ভূঁইয়া কাঞ্জন সাহেবের অনুকূলে আমার প্রার্থীতা প্রত্যাহার করলাম। তখন খুবই কম ভোট বেশি পেয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলেন তিনি।
অল্প ভোট কম পেয়ে সেকেন্ড হয়েছিলেন টঙ্গীরটেক চৌরাস্তার বিশিষ্ট ব্যাবসায়ী মোহাম্মদ আলী।
প্রসঙ্গ ক্রমে উল্লেখ্য রাজনীতিতে আমি কিন্ত বহু গুরুর শিষ্য, দ্বিতীয় গুরু প্রয়াত নেতা সমসের আলী ভূঁইয়া, তৃতীয় গুরু এ্যাড: নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন এম.পি. ১৯৮৬ ইং থেকে, চতুর্থ গুরু লে:জে: এম. নূরউদ্দিন খান সাবেক মন্ত্রী ১৯৯৬ ইং থেকে এবং পঞ্জম গুরু বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের প্রেসিডিয়াম মেম্বার,সাবেক স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী এ্যাড: সাহারা খাতুন ২০০৩ ইং থেকে ।
বহু গুরুর শিষ্য হওয়ার সুবাদে আমার বহু ধরনের অভিজ্ঞতা হলো উনাদের সংস্পর্শে গিয়ে। সবচেয়ে বেশী সময় কাটালাম মাননীয় এম.পি. এ্যাড: নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন সাহেবের সাথে ২০০৮ ইং সালের ১ লা জানুয়ারী থেকে বিরতিহীন ভাবে অদ্যাবদি।
২০০১ সালে, জামাত জোট সরকার ক্ষমতায় এলে নির্যাতনের খরগ নেমে এলো আমাদের মাথার উপর । জোট সরকারের কতিপয় বিপথগামী নেতা কর্মীরা পোড়াদিয়া বাজারে আওয়ামীলীগের ক্ষুদ্র একজন সমর্থক পোড়াদিয়া বড়বাডির নূরুল আমিন ভূঁইয়া কে বেদম ভাবে মারপিট করলে ব্রেইন হেমারেজ হয়। ঢাকা মেডিকেলের জরুরী বিভাগে নিলে বারান্দায় কোন রকমে তাকে ফ্লোরে সিট দেয়া হলো, চিকিৎসায় চরম গাফিলতি, বাঁচার কোন উপায় ই ছিলনা।
হঠাৎ আমার মাথায় একটি বুদ্ধি এলো এ মূহুর্তে নেত্রীর সহযোগীতা ছাড়া তাকে বাচাঁনো যাবেনা। কি ভাবে নেত্রী পর্যন্ত পৌঁছানো যাবে সে চেষ্টা করতে লাগলাম । হেলেনা আপার বাসা থেকে ল্যান্ড ফোন দিয়ে সুধাসদনে ফোন করি নেত্রীর সাথে কথা বলার জন্য। তখন মনে কোন ভয় ছিলনা । অপারেটর ফোন রিসিভ করে আমার পরিচয় জানতে চাইলে আমার নাম এবং পদবী বলি, আমি মাননীয় নেত্রীর সাথে একটু কথা বলতে চাই বললে তিনি আমাকে বলেন নেত্রী জেলা পর্যায়ের সভাপতি ও সম্পাদকের নীচে কারোর সাথে টেলিফোনে কথা বলেননা ,তাই তো স্বাভাবিক। আমি মাত্র ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক। আমাকে তো পারমিট না ই করার কথা। যাইহোক তাকে বহু কাকুতি মিনতি করে মাননীয় নেত্রীর সাথে কথা বলার একটু সুযোগ নিলাম। নেত্রীর কাছে আমাদের এলাকার পরিস্হিতি ব্যাখা করলাম এবং নূরুল আমিন ভূঁইয়া নামে আমাদের একজন কর্মী মার খেয়ে আঘাত প্রাপ্ত হয়ে ঢাকা মেডিকেলে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন কথাটি বললাম। তিনি আমাকে সুধাসদনে যাওয়ার অনুমতি দিলেন। সাথে সাথে হেলেনা আপাকে সাথে নিয়ে নেত্রীর বাসায় চলে গেলাম। নূরুল আমিনকে দেখতে যাওয়ার জন্য নেত্রীকে অনুরোধ করলে তিনি সদয় হয়ে সাথে সাথে বজলুর রহমান সাহেবকে আমাদের সাথে পাঠিয়ে দিলেন ঢাকা মেডিকেলে। বজলু ভাই মেডিকেল কর্তৃপক্ষকে বললেন নূরুল আমিনের চিকিৎসার ব্যায়ভার নেত্রী বহন করবেন । বজলু ভাই কিছু টাকা নূরুল আমিনের বউয়ের কাছে দিয়ে আসলেন। পরের দিন নেত্রী তাকে দেখতে গেলেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।আমিও তখন ছিলাম সেখানে । চিকিৎসার চিত্রই পাল্টে গেল। আল্লাহর রহমতে নেত্রীর সহযোগীতায় নূরুল ভাই সুস্হ হলেন। বাড়ীতে ফিরলেন। এরপর আবার নেত্রীর কাছ থেকে বলে কয়ে অনুরোধ করে নূরুল আমিনের জন্য ২০ হাজার টাকা সাংসারিক খরচ চালানোর জন্য এনে দিলাম।
সেই থেকে মাসে অন্তত পক্ষে ২/৩ দিন নেত্রীর বাসায় যেতাম,উনার পা ছুঁয়ে ছালাম করতাম, মাঝেমধ্যে বাগানের কাঁঠাল ও পেঁপে নিয়ে যেতাম, তিনি খুশী হতেন। এলাকার অনেক নেতা কর্মীকে নিয়ে নেত্রীর সাথে দেখা করিয়েছিলাম, এরা হলেন সর্ব জনাব অব্দুল আজিজ মাষ্টার , বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলুর রহমান, বেগম বাদশাহ, সব্দর আলী, জাকির, কমল এবং আরও অনেক কে।
উল্লেখ্য যে জীবিকা নির্বাহের তাগিদে ও সরকারি চাকুরীর বয়সটা ধরে রাখার জন্য ২০০০ ইং সনে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পদে আমি একটি চাকুরী নিলাম। কিন্তু জোট সরকারের বিপথগামী কতিপয় নেতা কর্মীর নির্যাতন, মামলা ও হামলার কারণে চাকুরী করা খুবই অসুবিধা হচ্ছিল বিধায় ডেপুটেশন নিয়ে ভর্তি হয়ে গেলাম ঢাকা টি টি কলেজে। ভর্তি হয়ে দেখি এখানে হবে ছাত্র সংসদ নির্বাচন ।
আমার মাঝে একটু নেতানেতা ভাব দেখে শিক্ষার্থীরা আমাকে সাপোর্ট করলেন আমি ও লোভ সামলাতে না পেরে জি.এস পদপ্রার্থী হয়ে গেলাম।
ঐ যে কথায় বলে না ঢেঁকী স্বর্গে গেলেও ধানই বানে। অত্যন্ত আনন্দঘন পরিবেশে প্রচার কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি । আমি জি .এস নির্বাচিত হব বিপুল ভোটে এতে কোন স্বন্দেহ নেই। কিন্ত বিধি হলো বাম । জোট সরকারের কিছু সংখ্যক বিপথগামী ছাত্রদল নেতা তাদের দেয়া প্যানেলকে বিনা প্রতিদ্ধন্দ্বিতায় পাশ করানোর জন্য নির্বাচনের আগের দিন রাতে আমাকে ধরে নিয়ে গিয়ে একটি কক্ষে আটকিয়ে রেখে আমার কাছে মুক্তিপন চাইল অথবা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে বলল।যাইহোক লম্বা কাহিনী বিস্তরিত লেখা গেলনা। তৎকালীন ছাত্রদলের এক প্রভাবশালী নেতার হস্তক্ষেপে আমি মুক্তি পাই বটে কিন্তু আমাকে নির্বাচন করতে দেয়া হলো না।
আমার ব্যানার,ফেষ্টোন, পোষ্টার পুড়িয়ে দিল তারা । পরদিন নির্বাচন কমিশনার নির্বাচন বাতিল করলেন। ঐ নির্বাচনে যারা আমার জন্য সবচেয়ে বেশী শ্রম দিয়েছিলেন ও আমাকে সাহস যোগিয়ে ছিলেন , আমার জানের নিরাপত্তা দিয়েছিলেন তাদের নাম উল্লেখ না করলে অকৃতজ্ঞতা হবে। তারা হলেন ভোলার চরফ্যাশনের আফজ্জাল হোসেন শামীম, পিরিজপুর জেলার শরিফ ও মৌলভী বাজার জেলার ইকবাল । তারা আমার খুবই আপনজনের মতই ছিলেন। আমার নির্বাচনে তারা আমার জন্য দিন রাত কঠোর পরিশ্রম করেছিলেন, আমাকে নিরাপত্তা দিয়েছেন, পোষ্টার ছাপিয়েছ্ন, ক্যাম্পিং করেছেন,আমি তাদের প্রতি চিরকৃতজ্ঞ । সেই থেকে আজও উক্ত প্রতিষ্ঠানে আর কোন ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয়না পরে আর কোন দিন হবে কিনা জানিনা।
তার পরের ইতিহাস অনেক হৃদয় বিদারক। ইয়াজ উদ্দিন সাহেব একই সাথে রাষ্ট্রপতি ও তত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হলেন। নির্যাতনের খরগ নেমে এলো আমার ও আমাদের উপর। ঐ সময়ের কোন এক রাতে জোট সরকারের বিপথগামী নেতা কর্মীরা আওয়ামীলীগারদের দোকানপাট ও নেতাকর্মীদের বাড়ি ঘরে হামলা চালাতে লাগলো। তাৎক্ষনিকভাবে আমি আজকের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা আপার সাথে মোবাইলে লাউড স্পিকারে কথা বলে আমাদের এলাকার পরিস্হিতি ব্যাখা করে বুঝালাম ও উপস্হিত নেতা কর্মীদেরকে শুনালাম। তিনি সকলকে ধৈর্যের সাথে পরিস্হিতি মোকাবিলা করতে বললেন , আমরা শান্ত হলাম। এর পরের ইতিহাস সকলেরই জানা, জননেত্রী গ্রেপ্তার হলেন, জেলে গেলেন, চরম দু:সময়। অনেক বিখ্যাত আইনজীবীগন নেত্রীর মামলার ফাইল ছেড়ে পালালেন।
তৎকালিন সময়ে যেক’জন নামীদামী আইন জীবী নেত্রীর পক্ষে আইনি লড়াই করেছিলেন এর মধ্যে এডভোকেট সাহারা খাতুনের জুনিয়র হিসেবে মাননীয় নেত্রী শেখ হাসিনা ও জাতীয় নেত্রীবৃন্দের পক্ষে সাহারা আপার সহযোগী হিসেবে আইনি লড়ায়ে অংশ গ্রহন করার সৌভাগ্য আমার হয়েছিল। তাই আমি নিজকে ধন্য মনে করি।
তারপর নেত্রী মুক্তি পেলেন, নির্বাচন হলো আওয়ামীলীগ সরকার গঠন করল। আমাদের মাননীয় এম.পি.এ্যাড: নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন সাহেব ঢাকা বিভাগের মধ্যে সবচেয়ে বেশী ভোট পেয়ে এম,পি নির্বাচিত হলেন। হঠাৎ একদিন তিনি আমাকে ঢাকার বাসায় ডেকে নিয়ে উনার ব্যাক্তিগত সহকারী হিসেবে দায়িত্ব নিতে বললেন । আমি তখন না বলতে পারলামনা,১ জানুয়ারী- ২০০৮ইং তারিখ থেকে সততা,দক্ষতা ,নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সাথে ২৪ এপ্রিল- ২০১৭ইং পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করলাম। এখনও করছি , মাননীয় এম.পি মহোদয়ের ভাষ্য অনুযায়ী আমি এখন থেকে উনার পলিটিক্যাল সেক্রেটারী (পি.এস.অনারারী)।
একটুখানি পিছনে ফিরে যেতে হচ্ছে পাঠক ভাইয়েরা মনে কিছু নিবেননা। এম.পি মহেদয়ের ব্যাক্তিগত সহকারী হওয়ার পর বেলাব- মনোহরদী উপজেলার সকল নেতা কর্মীরা খুশি হলেও হাতেগনা কিছু সংখ্যক লোক খুশী হতে পারেনি,এটা মেনে নিতে পারছিলনা এখনও পারছেনা তাদের নাম নাইবা লিখলাম।
যাইহোক এর পরের কাহিনী হলো উপজেলা নির্বাচন এলো প্রার্থী হলাম, মার্কা পেলাম আনারস। এম.পি মহোদয়ের নির্দেশে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচন ছেড়ে দিলাম।
এর কয়েক বছর পর এলো ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন । ৬ মাস আগেই আমাকে দলীয় প্রার্থী হিসেবে ঘোষনা করে মাঠে নামিয়ে দেয়া হলো । বেলাব- মনোহরদীর ২০টি ইউনিয়নের মধ্যে আমার মনোনয়ন কনফার্ম , এতে কোন সন্দেহের বিন্দু পরিমান লেষমাত্র ছিলনা । আমি জনপ্রিয়তার শীর্ষে থাকলেও ফাইনাল মনোনয়নের মাত্র ৬ / ৭ দিন আগে আমার মনোনয়ন কেড়ে নেয়া হলো। আমি আঘাত পেলাম,সর্ব দলীয় জনগণ দারুণভাবে মনক্ষুন্ন হলো, ভাবছিলাম রাজনীতির পথে আর হাঁটব না।
এর বছরখানেক পর যখন জেলা পরিষদ নির্বাচন এলো আমার শুভাকাংখীরা আমাকে প্রার্থী হওয়ার জন্য তাগিদ দিতে লাগল। আমার ইচ্চে হচ্ছিলনা কেননা আমি জানি আমি প্রার্থী হলেই ষড়যন্ত্র শুরু হয়ে যাবে। কিন্ত শেষ পর্যন্ত শুভানুধ্যায়ীদের অনুরোধ এড়াতে না পেরে সেখানে আমি প্রার্থী হলাম। দলীয় প্রার্থী হিসাবে আমাকে মনোনয়ন দেয়ার জন্য উপজেলা ও জেলা আওয়ামীলীগ কমিটি আমার নাম প্রস্তাব কেন্দ্রিয় আওয়ামীলীগ অফিসে পাঠালে সিদ্ধান্ত হয় জেলা পরিষদের সদস্য পদ নির্বাচন হবে সবার জন্য উন্মোক্ত ।
যেই কথা সেই কাজ শুরু হলো চক্রান্ত , কঠিন ষড়যন্ত্র । মামলা ,মোকাদ্দমা , হাইকোর্ট ,সুপ্রিম কোর্ট, নির্বাচন কমিশনারের সচিবালয়, সব কিছু মোকাবিলা করে সকল বাধাবিঘ্ন পেড়িয়ে গত ২৫ এপ্রিল/২০১৭ ইং তারিখে বিপুল ভোটে আল্লাহপাক আমাকে জয় লাভ করিয়েছেন ।
এ যেন সাগর সেচে মুক্তা আহরনের সামিল । আমার মার্কা ছিল তালা, আমার কষ্টটা কোথায় জানেন পাঠক ভইয়েরা ? কষ্টটা হলো একটি জায়গায়, আওয়ামীলীগের জনসভায় আমার বক্তৃতা দেয়ার বয়স ৩৩ বছর অথচ আমি নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করতে পারলামনা । অথচ এমন জনও আছেন যারা জীবনে কোনদিন জয় বাংলা,জয় বঙ্গ বন্ধু বলেনি তারাও কিন্ত নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করতে পারলো।
তবে হাইব্রীড ও অনুপ্রবেশকারী আওয়ামীলীগের জ্বালায় রাজনীতির প্রতি বিতৃষ্ণা চলে আসে মাঝেমাঝে। তাদের মধ্যে রাজনৈতিক শিষ্টাচার বলতে কিছুই নেই , জুনিয়র সিনিয়র মানতে চায়না, সিনিয়রদের দেখেও নাদেখার ভান করে চেয়ারে বসে থাকে, ধাক্কাধাক্কি করে আগের সারিতে যেতে চায়, ইত্যাদি ।
কিন্ত কি করবো বলুন? হাইব্রীড ও চাটুকার দ্বারা লাঞ্জিত,বঞ্জিত, হলেও তো বঙ্গবন্ধু এবং জননেত্রীর আদর্শ থেকে বিচ্চুত্য হওয়ার কোন উপায় নেই।
আমি ক্লীন ইমেজের স্বচ্ছ এবং জনতার কল্যানের রাজনীতিতে বিশ্বাসী , পেশী শক্তি সন্ত্রাসী রাজনীতিতে আমি বিশ্বাসী নই। যে রাজনীতিতে মানুষ আমাকে ভয় পাবে এবং মনে মনে ঘৃনা করবে সে রাজনীতিতে আমি বিশ্বাসী নই, আমি সেই রাজনীতিতে বিশ্বাসী যে রাজনীতিতে মানুষ আমাকে ভালবাসবেন এবং মৃত্যুর পরেও মনে রাখবেন। আমি কোন ব্যাক্তির বা কোন গ্রুপের রাজনীতি করিনা, আমি বঙ্গবন্ধু ও জননেত্রী শেখ হাসিনার আদর্শের বাইরে কিছু বুঝিনা, বুঝা উচিত ও নয় বলে আমি মনে করি।
কেননা নেতার চেয়ে নীতির মূল্য অনেক অনেক গুন বেশী। ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ ও ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত বাংলাদেশ গড়ার যে স্বপ্ন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাদেরকে দেখিয়েছেন তা বাস্তবায়নের জন্য যার যার অবস্হান থেকে কাজ করতেই হবে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ এখন উন্নয়নের মহাসড়কে,দেশ এগিয়ে যাচ্ছে,দেশ এগিয়ে যাবে , দেশকে এগিয়ে নিতেই হবে এর কোন বিকল্প নেই।
জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু ,
জয় হোক এ দেশের মেহানতি জনতার।
লেখক: এ্যাডভোকেট মো. শহিদুল্লাহ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক, নরসিংদী জেলা আওয়ামীলীগ, সদস্য, জেলা পরিষদ, নরসিংদী।
Posted ১২:৫৭ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৮ অক্টোবর ২০২০
dainikbanglarnabokantha.com | Romazzal Hossain Robel
এ বিভাগের আরও খবর
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।