| শুক্রবার, ০২ জুলাই ২০২১ | প্রিন্ট
নবকণ্ঠ ডেস্ক:
বিদেশ যেতে অপেক্ষমাণ প্রবাসীদের জন্য অবশেষে খুলেছে টিকার দুয়ার। আজ শুক্রবার (২ জুলাই) দেশের ৫৩টি কেন্দ্রে শুরু হচ্ছে নিবন্ধন কার্যক্রম।
এ নিয়ে যৌথভাবে কাজ শুরু করেছে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। সব কিছু ঠিক থাকলে আগামী মঙ্গলবার থেকে টিকা দেওয়া শুরু হবে।
কোন প্রক্রিয়ায় বিদেশগামীরা করোনাভাইরাসের টিকা পাবেন, তার একটি রূপরেখা চূড়ান্ত করেছে সরকার। তথ্য মতে, সরাসরি সুরক্ষা অ্যাপে নিবন্ধন করা যাবে না এবং দুই দফা নিবন্ধন করতে হবে তাঁদের। প্রথমে জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) অ্যাপে কিংবা সরাসরি বিএমইটির ৫৩টি কেন্দ্রে গিয়ে নিবন্ধন করতে হবে। বিএমইটি থেকে এসংক্রান্ত উপাত্ত যাবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে। এর পরই সরকার নির্ধারিত প্ল্যাটফর্ম সুরক্ষায় সংরক্ষিত কোটায় টিকার নিবন্ধনের সুযোগ পাবেন প্রবাসীরা।
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ বলেছেন, পাসপোর্ট নিয়ে হাসপাতালে গেলেই টিকা মিলবে না, অবশ্যই নির্ধারিত জায়গায় নিবন্ধন করতে হবে। বিশৃঙ্খলা করলে কোনো সমাধান আসবে না। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে টিকা কার্যক্রম পরিদর্শনে গিয়ে মন্ত্রী এ কথা বলেন।
এ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন বলেছেন, ‘আমাদের বিদেশগামী কর্মীদের ভ্যাকসিন প্রাপ্তির ক্ষেত্রে বয়সের বাধা থাকবে না। সুরক্ষা অ্যাপে প্রবাসী কর্মীদের অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। সেখানে তিনটি বিষয় নিশ্চিত করার জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তর আমাদের নিশ্চয়তা দিয়েছে। ২০ এবং তদূর্ধ্ব বছরের সবাই এখানে নিবন্ধন করতে পারবেন। নিবন্ধন করতে এনআইডি লাগবে না। বিএমইটির নিবন্ধন ও পাসপোর্ট দিয়েই নিবন্ধন করা সম্ভব হবে।’
বিদেশগামীদের টিকা নিতে দুই দফা নিবন্ধনের বিষয়টি স্পষ্ট করেন সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির (ইপিআই) পরিচালক এবং জাতীয় কভিড-১৯ ভ্যাকসিন পরিকল্পনার সদস্যসচিব ডা. শামসুল হক। তিনি বলেন, ‘বিএমইটি প্রবাসী কর্মীদের জন্য একটি অ্যাপ বানিয়েছে। অ্যাপের পাশাপাশি প্রতিটি জেলায় বিএমইটির অফিস থেকে অভিবাসীরা নিবন্ধন করতে পারবেন। সেই তালিকা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে এলে আমরা পরবর্তী যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করব। সপ্তাহের অন্য দিনের মতো শুক্রবার ও শনিবারও খোলা থাকছে বিএমইটির অফিস।’ তিনি জানান, এরই মধ্যে তাঁরা দুই লাখ অভিবাসীর তালিকা পেয়েছেন। রবিবারের মধ্যে সেই তালিকা যাচাই করা শেষ হবে। সোমবার রাত থেকে এসএমএস যাবে এবং মঙ্গলবার থেকে টিকা নিতে পারবেন বিদেশগামীরা। শুধু কুয়েত ও সৌদি আরবগামীদের ফাইজার, মডার্না, অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা বা জনসন অ্যান্ড জনসনের টিকার দরকার হবে। বাকিদের চীনের টিকা দিতে কোনো অসুবিধা নেই। সে বিষয়টি বিবেচনায় রেখে প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।
ডা. শামসুল হক বলেন, টিকার জন্য আপাতত ঢাকার সাতটি কেন্দ্র নির্ধারণ করা হয়েছে। এগুলো হলো ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল (মিটফোর্ড), শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, মুগদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতাল ও কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল।
এই সাতটি কেন্দ্রে আগে টিকার জন্য নিবন্ধন করে যাঁরা টিকা নিতে পারেননি, তাঁরা যদি এসএমএস পেয়ে থাকেন, তাহলে টিকার কার্ড সঙ্গে এনে টিকা নিতে পারবেন।
এদিকে প্রবাসীদের নতুন করে যাতে আর কোনো ভোগান্তি সৃষ্টি না হয়, সেদিকে নজর রাখার দাবি জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। প্রবাসীরাও বলছেন, শুধু বিএমইটির নিবন্ধন দিয়েই টিকা গ্রহণের সুযোগ দেওয়া হোক। পর্যায়ক্রমে ঢাকার বাইরেও এই টিকা কার্যক্রম সম্প্রসারণের দাবি করেছেন তাঁরা।
ব্র্যাকের অভিবাসন কর্মসূচির প্রধান শরিফুল হাসান গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, টিকা ছাড়া বিদেশে গেলে বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টিনে থাকতে হয়। এতে প্রবাসীদের ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা ব্যয় হয়। টিকা নিয়ে গেলে তার আর দরকার হবে না। বছরে পাঁচ লাখ প্রবাসী কর্মীকে টিকা দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করলেই সব অনিশ্চয়তার অবসান ঘটবে। সরকারের জন্য সেটি অসম্ভবের কিছু নয়। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর টিকার বাধ্যবাধকতা পূরণের সক্ষমতা সরকারের রয়েছে। টিকা দেওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার তালিকা করার তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, দেখতে হবে কে কোন সময় বিদেশে যাচ্ছেন। সে অনুযায়ী অগ্রাধিকার তালিকা প্রস্তুত করতে হবে। এখন যেমন সারা দেশ থেকে নিবন্ধনের সুযোগ রয়েছে, পর্যায়ক্রমে টিকা কার্যক্রমও সারা দেশে সম্প্রসারণ করতে হবে। অন্যথায় লকডাউনের মধ্যে প্রবাসীদের নানা ভোগান্তিতে পড়তে হবে। এ উদ্যোগ যেন ভেস্তে না যায়, সেদিকেও খেয়াল রাখার তাগিদ দেন তিনি।
তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্র জানায়, ফাইজারের বিশেষ টিকার বড় চ্যালেঞ্জ হলো সংরক্ষণব্যবস্থা, বাংলাদেশে যা অপ্রতুল। পরিবহনের জন্যও দরকার থার্মাল শিপিং কনটেইনার বা আলট্রা ফ্রিজার ভ্যান। এ কারণে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ফাইজারের টিকা সরবরাহ করা কঠিন।
বিএমইটির তথ্য অনুযায়ী, বিএমইটির নিবন্ধন আছে, কিন্তু এখনো স্মার্ট কার্ড ইস্যু হয়নি এমন বিদেশগামীরাও টিকার জন্য নিবন্ধন করতে পারবেন। বিদেশগামীদের মধ্যে যাঁরা বিএমইটিতে নিবন্ধন করেছেন, তাঁদের তালিকা পাঠানো হচ্ছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে। এ তথ্য সুরক্ষা সার্ভারে দিচ্ছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এর পরই টিকার জন্য নিবন্ধন করতে পারছেন বিদেশগামীরা।
তথ্য মতে, বিদেশগামী প্রবাসী কর্মীদের যুক্তরাষ্ট্রের ফাইজার এবং চীনের সিনোফার্মের দুই টিকাই দেওয়া হবে। এ ক্ষেত্রে সৌদি আরব, কুয়েতসহ যেসব দেশে সিনোফার্মের টিকা নিয়ে জটিলতা রয়েছে, শুধু তাঁদেরই ফাইজারের টিকা দেওয়া হবে। আর বাকি সব প্রবাসীকে দেওয়া হবে সিনোফার্মের টিকা। সূত্র: কালের কণ্ঠ
Posted ১০:২৪ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ০২ জুলাই ২০২১
dainikbanglarnabokantha.com | Romazzal Hossain Robel
এ বিভাগের আরও খবর
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।