শুক্রবার ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৪ মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

>>

অশ্রু দিয়ে গাঁথা যে বিজয়মালা

  |   মঙ্গলবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২০   |   প্রিন্ট

অশ্রু দিয়ে গাঁথা যে বিজয়মালা

নূরুদ্দীন দরজী:

বাঙালি প্রাণ খুলে হেসেছিল যে দিন সেদিন ছিল ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর। হেসেছিল বিজয়ের মহা আনন্দে। সেদিন তারা সুদীর্ঘ শোষণ বঞ্চনার অবসান ঘটিয়ে ছিনিয়ে এনেছিল এ বিজয়। পরাধীনতার নাগপাশ থেকে হয়েছিল মুক্ত। এসেছিল লাল সবুজের পতাকা ও শত্রুমুক্ত স্বাধীন ভূমি। সকল প্রতিকূলতা অতিক্রম করে বীর মুক্তিযোদ্ধারা রাজধানী অভিমুখে যাত্রা পথে বিজয় ও বিজয়ানন্দে নব ফুলের হাসিতে হয়েছিল সিক্ত।রাস্তায় রাস্তায় গণ জমায়েত ,গৃহ‌ ও বাড়ির আঙিনায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে, ঘরের জানালা ও ছাদের উপর থেকে হাত নেড়ে নেড়ে আমাদের বীরেরা পেয়েছিল কোটি কোটি প্রাণের উচ্ছসিত সংবর্ধনা, ছিটিয়ে ছিটিয়ে দেওয়া হয়েছিল ফুলের পাপড়ি ও হৃদয় উজাড় করা ভালবাসা। হয়েছিল ফুলে ফুলে আচ্ছাদিত। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু ধ্বনিতে আকাশ বাতাস প্রকম্পিত হচ্ছিল বার বার বহুবার। ভাইয়ে, বোনে ও মায়েদের , মুহুর মুহুর কড়তালিতে তারা পেয়েছিলেন নতুন প্রাণ। ভুলে গিয়েছিলেন দীর্ঘ সময়ে সংসারের বিয়োগ বেদনা ও যুদ্ধের ক্লান্তি। চতুর্দিকে শুধু বিজয় আর বিজয়, হাসি আনন্দ‌ ও নাচে গানে মুখরিত সারা বাংলা। পথ প্রান্তর ,মাঠঘাট ও সবুজ নীলাকাশে ছিল খুশির ছোঁয়া। বাংলা শ্যামলী মায়ের আঁচল ছিল অবারিত।
এমনি বিজয় তরঙ্গ স্রোতে যখন ভেসে যাচ্ছিল দেশ ঠিক তখন আবার কারো চোখে ছিল জল,হৃদয়ে করুন আর্তনাদ। স্বজন হারানোর ব্যাথায় তাদের অন্তর জ্বলে পুড়ে হচ্ছিল কয়লা। তখন অনেকেই আপনজনদের কোন খবর পাচ্ছিল না। যুদ্ধে কি পরিনতি তারা ভেবে ভেবে অস্থির। কেঁদে কেঁদে ব্যাকুল। স্থান হতে স্থানান্তর, রণাঙ্গন থেকে রণাঙ্গনে দৌড়িয়ে, ছুটাছুটি করেও মিলেনি আপনজনের কোন খবর। বিজয়ের সুরে সুরে তাদের মনে আশা জন্মে ছিল তারা আসবে ফিরে। আপন মানুষদের ফিরে আসার প্রত্যাশা শেষ হচ্ছিলনা। কেউ বা আবার ছুটে যায় রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে। দুদিন আগে ১৪ ডিসেম্বর দেশীয় কুলাঙ্গারদে র সহযোগিতায় হানাদার পাক সেনাদের দল অনেককে নির্মমভাবে হত্যাকরে সেখানে ফেলে রেখেছিল। তারা ছিলেন আমাদের মেধাশক্তি , আমাদের বুদ্ধিজীবী। রায়ের বাজারে বধ্যভূমিতে অসংখ্য লাশ‌একের এক উল্টিয়ে উল্টিয়ে খুঁজে ছিল মানুষেরা আপনজনকে। প্রিয়তমা স্ত্রী তার স্বামীকে,মা তার বুকের ধন ছেলেকে,বোন তার ভাইকে, ছেলে মেয়েরা তাদের বাবাকে চোখের জলে ভিজিয়ে ভিজিয়ে খুঁজে হয়রান হয়েছে একবার দুবার নয় বহুবার। সে খুঁজা অনেকের আজ‌ও শেষ হয়নি।
একটি বিশাল বেদনা ছিল বাঙালি জনমনে। বিজয় আসলেও তখনো বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পশ্চিমাদের হাতে বন্দি। বঙ্গবন্ধুকে ছাড়া বিজয় ছিল অনেকটাই আনন্দহীন, বিস্বাদ। যার আহ্বানে সমগ্ৰ বাঙালি জাতি অস্ত্র ধরে যুদ্ধ করেছে, স্বাধীনতা এসেছে তিনিই নেই সবার মাঝে। আর‌ও দুঃখ ভারাক্রান্ত ছিল মানুষ ৩০ লক্ষ শহীদের জন্য- যাদের রক্তে লালে লাল হয়েছে ধরনীর এ প্রান্তর। দুই লক্ষ মা বোনের ইজ্জতের মূল্যের কথা ভেবে।
আজ বিজয় অর্জনের প্রায় অর্ধ শতাব্দী পেরিয়ে যাচ্ছে। অনেক চড়াই উৎরাই পারি দিয়ে প্রিয় বাংলাদেশ এগিয়ে গেছে বহুদূর। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার হাত ধরে বিভিন্ন সূচকে আমাদের অগ্ৰগতি অনেকের ঈশ্ময়ে পরিনত। আমরা প্রায় মধ্যম আয়ের দেশের দ্বারপ্রান্তে। প্রবৃদ্ধির উর্ধগতি অপ্রতিরোধ্য। সকল বাঁধা বিঘ্ন প্রতিরোধ করে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। আমাদের ভাবতে হবে, যাদের রক্তের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি বিজয় ,পেয়েছি স্বাধীনতা সে রক্তের মূল্য আমাদের এখনো পরিশোধ করা হয়েছে কি?। যখন দেশ হবে সুখী সমৃদ্ধশালী দেশ, কেবল তখনই তাদের রক্তদান হবে স্বার্থক। স্বজন হারানো মানুষের চোখের পানি আজ ও ঝরে অহর্নিশ। তাদের বুক ফাটা আর্তনাদ এখনো বাতাসে ভেসে বেড়ায় ডুকরে ডুকরে। বর্তমান প্রজন্ম যারা- তাদের বুঝতে হবে কিভাবে এসেছে আমাদের স্বাধীনতা এবং এ বিজয়। আমরা আর‌ও সচেতন হবো। সকল অপশক্তির মোকাবেলা করে এগিয়ে যাব সম্মুখে। আমাদের বুঝতে হবে বিজয় দিবসকে ইতিহাসের আলোকে। আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে শত সহস্র শহীদের আত্মদান। মুছে দিতে হবে স্বজন হারানো নিঃস্ব মানুষের অশ্রুজল। বিজয় দিবসে সম্মিলিতভাবে দেশ গড়ার অঙ্গীকার হোক বিজয় দিবসের প্রত্যয়।

লেখক: কলামিস্ট ও সাবেক উপজেলা শিক্ষা অফিসার (টিইও)

Facebook Comments Box

Posted ৩:১৮ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২০

dainikbanglarnabokantha.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

রূপা
(1561 বার পঠিত)
ছোটগল্প (দেনা)
(1075 বার পঠিত)
দূর দেশ
(923 বার পঠিত)
কচু শাক চুরি
(879 বার পঠিত)
কৃষ্ণ কলি
(854 বার পঠিত)

সম্পাদক

রুমাজ্জল হোসেন রুবেল

বাণিজ্যিক কার্যালয় :

১৪, পুরানা পল্টন, দারুস সালাম আর্কেড, ১১ম তলা, রুম নং-১১-এ, ঢাকা-১০০০।

ফোন: ০১৭১২৮৪৫১৭৬, ০১৬১২-৮৪৫১৮৬, ০২ ৪১০৫০৫৯৮

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

design and development by : webnewsdesign.com

nilüfer escort coin master free spins